Illustration of researchers and students around scientific equipment and papers, symbolizing university research's role in educational policy development.

শিক্ষা নিয়ে কল্পনা- জল্পনা, নতুন নতুন উদ্ভাবন – গবেষণার কোনো শেষ নেই। “শিক্ষা” এর কাঠামো সুগঠিতভাবে উপস্হাপনের জন্য শিক্ষানীতির গুণগত মান উন্নয়ন আব্যশক। মান উন্নয়নে যুক্তিসঙ্গত পরিবর্তন-পরিমার্জনে প্রয়োজন উপযুক্ত গবেষণা। আর গবেষণার পীঠস্থান হলো বিশ্ববিদ্যালয়।

শিক্ষানীতি বলতে আমরা আগামীর শিক্ষা ব্যবস্থা কেমন হবে তার একটি নীতি প্রণয়নকেই বুঝি। অর্থাৎ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার পরিপূর্ণ বিকাশ সাধন ও মানোন্নয়নের জন্য একটি সুগঠিত কাঠামো প্রণয়ন নীতি।

গবেষণা হলো জ্ঞানের পরিসর বিস্তারের লক্ষ্যে পরিচালিত সৃজনশীল ও পদ্ধতিগত কার্যক্রম, যেখানে নির্দিষ্ট বিষয়ের গভীর বোঝাপড়ার জন্য প্রমাণ সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও সংগঠিত করা হয়।

শিক্ষানীতি দেশের ভবিষ্যৎ সুগঠনের একটি কাঠামোবদ্ধ হাতিয়ার আর এ নীতি উন্নয়ন ও সংস্কারের জন্য প্রয়োজন যুক্তিসঙ্গত দিকনির্দেশনা। এজন্যই বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা শিক্ষানীতি উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য, কারণ গবেষণার মাধ্যমেই শিক্ষাব্যবস্থার দুর্বলতা ও সম্ভাবনা বিশ্লেষণ করে  বাস্তবসম্মত ও তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্ভব যা শিক্ষার মানোন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ চাহিদার সঙ্গে শিক্ষানীতিকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে সাহায্য করবে।

   

   পরিবর্তনকে যুক্তিসঙ্গত উপস্হাপনে
   যেন এক আলোর প্রদীপ গবেষণা
   আর এ আলো ছড়িয়ে দিতে
   বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গন সদা খোলা।

শিক্ষানীতির গুণগত মান পরিমার্জন ও সংস্কারে  গবেষণার গুরুত্বের কিছু উল্লেখযোগ্য দিক:-

১) উদ্ভাবনী পাঠ্যক্রম বাস্তবায়ন:

উদ্ভাবনী পাঠ্যক্রম হলো এমন একটি শিক্ষাক্রম যা সময়ের পরিবর্তন, প্রযুক্তির অগ্রগতি ও বাস্তব জীবনের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পরিকল্পনা করা হয়। এটি  তত্ত্বভিত্তিক জ্ঞানের পরিবর্তে সমস্যা সমাধান, সৃজনশীলতা ও দক্ষতা উন্নয়নে গুরুত্ব দেয়। গবেষণা দ্বারা উপযুক্ত চিত্র তুলে ধরার মাধ্যমে নির্দিষ্ট প্রয়োগক্ষেত্র চিহ্নিত করার মাধ্যমে ইন্টারঅ্যাকটিভ লার্নিং, প্রযুক্তির ব্যবহার, প্রকল্পভিত্তিক শিক্ষা এবং বাস্তব জীবনের চাহিদা পূরণ নিশ্চিত করা সম্ভব যাতে শিক্ষার্থীরা আধুনিক বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম হয়।

২) তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত:

শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নকে বাস্তবসম্মত এবং কার্যকরী করে তোলার জন্য তথ্য ও প্রমাণ ভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ আবশ্যক।  গবেষণার মাধ্যমে সংগৃহীত নির্ভরযোগ্য তথ্য নীতিনির্ধারকদের সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদান করে, যাতে তারা শিক্ষার মান  উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সক্ষম হন।

৩) শিক্ষার চ্যালেঞ্জ শনাক্তকরণ:

গবেষণা দ্বারা শিক্ষাব্যবস্থার বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ ও সমস্যাগুলি চিহ্নিত করা সম্ভব হয়, যেমন শিক্ষক প্রশিক্ষণ, পাঠ্যক্রমের আধুনিকীকরণ, শিক্ষার্থীদের মনোযোগের অভাবের কারণ, শিক্ষার মানের ব্যবধান, শিক্ষাকে আকর্ষণীয় ও অধিক গ্রহণযোগ্য রূপদানের কৌশল। অতঃপর গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতেই চ্যালেঞ্জগুলি চিহ্নিত করে তা সমাধানের জন্য পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হয়।

৪) আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ:

গবেষণার মাধ্যমে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর শিক্ষানীতি, পাঠ্যক্রম, শিক্ষাদান পদ্ধতি, মূল্যায়ন পদ্ধতি ও প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে গভীর বিশ্লেষণ করা সম্ভব যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে আরও প্রতিযোগিতামূলক ও আধুনিক করে তুলতে সাহায্য করবে।

৫) অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষাব্যবস্থা গঠন :

গবেষণার মাধ্যমে জানা সম্ভব দেশের কোন অঞ্চলে, কোন শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য শিক্ষার সুযোগ সীমিত বা অসমভাবে বিতরণ করা হচ্ছে। গবেষণালব্ধ তথ্যের ভিত্তিতে শিক্ষানীতিতে পরিবর্তন এনে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থী, নারীশিক্ষা ও কারিগরি শিক্ষার বিস্তার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে, যা একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষাব্যবস্থা গঠনে সহায়তা করবে।

আলোচিত দিকগুলোর কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব বিশেষত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণা ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে। কেননা বাংলাদেশের প্রক্ষিতে আনুষ্ঠানিক শিক্ষাকালে শিক্ষাব্যবস্হা নিয়ে পর্যালোচনা ও গবেষণার ব্যবস্হা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আছে বললেই চলে। একইসাথে শিক্ষা বিষয়ক গবেষণার মূল বিবেচ্য বিষয় শিক্ষার্থী। শিক্ষানীতির পরিবর্তন বা মান উন্নয়নে শিক্ষার্থীর চাহিদা – দক্ষতা – সক্ষমতা, শিক্ষার্থীর বোধগম্যতা বা গ্রহণযোগ্যতা প্রাধান্য দেয়া হলে গুণগত ও মানসম্মত কার্যকারী বাস্তবায়ন সম্ভব। আর এটি স্পষ্টত একটি বিষয় যে বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা ক্ষেত্রেই শিক্ষার্থীরা সরাসরি গবেষণা কজে যুক্ত হতে পারে।

বাংলাদেশে গবেষণার সুযোগ এখনো পর্যাপ্ত নয়। এক্ষেত্রে যে দিকগুলো চিহ্নিত না করলেই নয়:- 

  • গৃহিত উদ্যোগের বাস্তবায়ন ও প্রয়োগে যথাযথ কার্যকর পদক্ষেপের ঘাটতি
  • মানসম্মত উপকরণের অনুপলব্ধতা
  • আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সাথে অসামঞ্জস্যতা
  • গবেষণা তহবিল ও আগ্রহের অভাব
  • গবেষণালব্ধ জ্ঞান নীতিনির্ধারণে ব্যবহারের ঘাটতি
  • অনেক গবেষণা একাডেমিক জার্নালে সীমাবদ্ধ থাকায় বাস্তবায়নে প্রভাব কম

বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়( ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়)  এর শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট শিক্ষা সম্পর্কিত গবেষণার  ক্ষেত্র। এখানে শিক্ষার্থীরা জ্ঞান অর্জন করে নিজ দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী ভবিষ্যৎ কল্যাণের জন্য শিক্ষা সংক্রান্ত বিস্তর পড়াশোনা এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শিক্ষাব্যবস্হা ও শিক্ষানীতির পরিবর্তন, পরিমার্জন ও সংস্কারের সুযোগ পাবে যা শিক্ষার্থীদের মনস্তাত্ত্বিক ভিত্তির আলোকে শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে কার্যকারী ভূমিকা রাখবে।

২০ নভেম্বর,২০২৩ ই-গভর্ন্যান্স ও উদ্ভাবন কর্ম-পরিকল্পনা ২০২৩-২৪ বাস্তবায়নের অংশহিসেবে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে University Grants Commission of Bangladesh (বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন) কর্তৃক আয়োজিত  “শিক্ষা, গবেষণা ও উদ্ভাবন” শীর্ষক কর্মশালায় স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে গবেষণার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।

আবার ফিনল্যান্ডে University of Helsinki-এর গবেষণার মাধ্যমে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ নীতি, পাঠ্যক্রম এবং মূল্যায়ন পদ্ধতি নির্ধারিত হয়। যুক্তরাজ্যে British Education Research Association বিশ্বমানের শিক্ষাব্যবস্হা উন্নয়নে উচ্চমানের গবেষণাকে উৎসাহিত করে এবং শিক্ষানীতি, অনুশীলন ও মূল্যায়নের পদ্ধতি সংস্কারের কাজ করে। অর্থাৎ এটি সহজেই স্বীকার করা যায় উন্নত দেশগুলোতে উন্নত ও মানসম্মত  শিক্ষাব্যবস্হার একটি অন্যতম প্রধান কারণ বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে প্রতিনিয়ত শিক্ষা সংক্রান্ত গবেষণা ও গবেষণালব্ধ ফলের কার্যকরী বাস্তব প্রয়োগ।

গবেষণা শিক্ষার বাস্তব প্রয়োগযোগ্য নীতিমালা তৈরির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। উন্নত দেশগুলোতে গবেষণার মাধ্যমে শিক্ষানীতির কাঠামো গড়ে ওঠে এবং তা যুগোপযোগী ও কার্যকর হয়ে ওঠে। বাংলাদেশেও শিক্ষানীতিকে আন্তর্জাতিক মানের করতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা ও গবেষণার ফলাফল প্রয়োগের পরিধি বাড়াতে হবে এবং গবেষণার জন্য যথাযথ তহবিল ও অবকাঠামো নিশ্চিত করতে হবে। গবেষণার আলোয় আলোকিত হলে শিক্ষানীতি হবে আরও আধুনিক, প্রাসঙ্গিক এবং শিক্ষার্থীদের বাস্তব জীবনের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

“শিক্ষানীতি উন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা” দেশের ভবিষ্যৎ শিক্ষাব্যবস্থার ভিত্তি গঠনে একটি অপরিহার্য শর্ত।

এই রকম আরো ব্লগ পড়তে, ক্লিক করুন

লেখক,

মারযিয়া তাসমীন,

ইন্টার্ন, কনটেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট 

YSSE