উদ্যোক্তারাই আজকে দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি। তাদের সৃজনশীল চিন্তা ও পরিকল্পনায় হয়েছে লাখো কর্মসংস্থানের সুযোগ। সরকারী, মাল্টি-ন্যাশনাল চাকরী কিংবা বিদেশের মোহ ছাড়িয়ে তারা নিজেদের সুন্দর স্বপ্নকে বাস্তবে রুপান্তর করেছেন।
এখন প্রশ্ন জাগতে পারে উদ্যোক্তা কারা?
উদ্যোক্তা হলেন এমন এক ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যারা আর্থিক ঝুঁকি নিয়ে লাভের আশায় এক বা একাধিক ব্যবসা দাড়া করান ।
বাণিজ্যিকভাবে যিনি 50 লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করেছেন তাকে উদ্যোক্তা হিসেবে গণ্য করা হয়।
আজ জানব বাংলাদেশের এমন ৫ স্বপ্নদ্রষ্ট্রার কথা।
হোসেন মোঃ ইলিয়াস (পাঠাও)
(পরিবহন)
‘পাঠাও’ আজ দেশের অন্যতম সেরা রাইড শেয়ারিং অ্যাপ । হোসেন মোঃ ইলিয়াস ও তার দুই বন্ধু, ফাহিম সালেহ, সিফাত আদনানের যৌথ প্রচেষ্টায় ২০১৫ সালে যাত্রা শুরু করে | সুন্দরবন সহ অন্যান্য কুরিয়ার সার্ভিস গুলো অনলাইনভিত্তিক সেবা ও দ্রুত ডেলিভারীর (২৪ ঘণ্টার/২ দিনের মধ্যে) দিক দিয়ে পিছিয়ে পরলে, ইলিয়াস একটা সুবর্ণ সুযোগ হাতে পান। কোডিংয়ে পারদর্শী ইলিয়াসের তত্ত্বাবধানে ‘পাঠাও’ মোটর সাইকেল এ রাইড শেয়ারিং এর গন্ডি পেরিয়ে, ফুড ডেলিভারীর পাশাপাশি কুরিয়ার সার্ভিসেও মেগা প্লাটফর্ম হয়ে দাড়িয়েছে।
ইলিয়াস এর বিচক্ষণ চিন্তা চেতনা যেমন, গ্রাহকদের জন্য অ্যাপটি সহজ ও ইউজার ফ্রেন্ডলী করা, রাইড মনিটরিং এর সুবিধা, পাঠাও-কে আরও জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছে। পাঠাও এর এই সাফল্য তরুণ উদ্যোক্তাদের বাড়তি অনুপ্রেরণা দিচ্ছে।
বিবি রাসেল (বিবি প্রোডাকশন্স)
(তাঁত শিল্প)
এশিয়ার সেরাদের সেরা ফ্যাশন ডিজাইনারদের একজন হলেন আমাদের ‘বিবি রাসেল’। চট্টগ্রামে জন্ম নেওয়া এই তুখোড় ডিজাইনার ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই আন্তর্জাতিক খ্যাতি প্রাপ্ত ‘কসমোপলিটান’ ও ‘ভগ’ ম্যাগাজিনে কাজ করেছেন । কিন্তু দেশের তাঁত শিল্প ও সংস্কৃতির তাড়নায় বিদেশের মোহ কেটে যায় তার । ১৯৯৪ সাল থেকে ‘বিবি প্রোডাকশন্স’ তাঁতীদের দুঃখ-দূর্দশার জীবনে প্রদীপ হয়ে আছে । স্থানীয় তাঁতীদের কাজে কর্মে এল বৈশ্বিক স্বীকৃতি ।
বিবি রাসেল এর ডিজাইন গুলো শুধু ইউরোপেই প্রদর্শনী পায় নি, UNESCO থেকে এনে দিয়েছে ‘শান্তির শিল্পী’ সম্মাননা। হাজারো বাধা পেরিয়ে পাওয়া এই সাফল্য দেশের নারী উদ্যোক্তাদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে আছে আজও ।
জিসান জাকারিয়া (শিখো ও বহুব্রীহি)
(শিক্ষা)
“১০ মিনিট স্কুল”-এর জনপ্রিয়তায় প্রায়ই আড়ালে চলে যায়, ‘শিখো’ । কিন্তু “শিখো” বর্তমানে একটি Ed-Tech প্লাটফর্ম হওয়ার পাশাপাশি হয়ে উঠেছে দেশ সেরা পড়ালেখার সহযোগী ওয়েবসাইট। ‘শিখো’ এর অ্যাপের মাধ্যমেও হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীরা অনলাইনে এস এস সি, এইচ এস সি ও ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি মূলক ভিডিও, মেটেরিয়ালস দেখে শিখছে। কিন্তু এই অসাধারণ অর্জন একদিনে আসেনি । যুক্তরাজ্যে শিক্ষকতা করে আসা জিসান দেশের অনলাইনে শিক্ষার প্রসারের অভাব দেখেই ঝুঝে নিয়েছিলেন কি করা লাগবে। তাই তিনি ও তার বন্ধুরা একসাথে ২০১৯-এ ‘শিখো’-এর যাত্রা শুরু করলেন কিন্তু বিধি বাম। কেউই আর্থিক সাহায্যে এগিয়ে না আসায়, নিজেদের টাকা দিয়েই শুরু করলেন যাত্রা।
আর এভাবেই, শুধু ধৈর্য্য ও স্বদিচ্ছার জোরে আজও এগিয়ে যাচ্ছে ‘শিখো’। এছাড়া জিসানের ‘বহুব্রীহি’-ও ছাত্র-ছাত্রী এবং ফ্রিল্যান্সারদের নানান দক্ষতা অর্জনে সহায়ক হয়ে উঠেছে।
ফাহাদ ইফাজ (আই-ফারমার)
[কৃষি]
ফাহাদ ইফাজ, বাংলাদেশের একটি কৃষি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আই-ফারমার এর সহ-সংস্থাপক এবং প্রধান নির্বাহী। আই-ফারমার ছোট মাত্রা কৃষকদের গ্রাহকদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে পণ্য বিক্রি করতে সহযোগিতা এবং আর্থিক ও পরামর্শ পরিষেবা প্রদান করে। এক্ষেত্রে তারা মাধ্যমিকদের মাধ্যমে নয় বরং সরাসরি ওয়েবসাইটিতে নিজেদের পণ্য অনলাইনে পোস্ট এবং বিক্রি করে ,গ্রাহকদের সাথে যোগাযোগ করে বাংলাদেশের কৃষকদের আয় বাড়াতে এবং জীবন যাপন উন্নত করতে সাহায্য করে। ২০১৮-সালে ফাহাদ ইফাজ এর নেতৃতে আই-ফারমার প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই প্লাটফর্ম ২১০ কোটি বা ২.১ বিলিয়ন টাকায় ৮০,০০০ কৃষকদের সাহায্য করেছে।
নাজমুল শেখ (সাজগোজ)
[সৌন্দর্য ও রূপচর্চা ]
বুয়েট থেকে তড়িৎ প্রকৌশলীতে স্নাতক করার পর তিনি এশিয়া ও আফ্রিকায় টেলিকম অপারেশনস এ এক দশকেরও অধিক সময় কাজ করেন। কিন্তু এক সময় টেলিকম শিল্পের অবস্থা ভালো না দেখায় তিনি ভিন্ন চিন্তা ভাবনা করতে শুরু করলেন অবশেষে চলে এলেন রূপচর্চা ও সুন্দর্য শিল্পে। কারণ তখন বাংলাদেশে রূপচর্চার বাজার তুলনামূলক ছোট ছিল। তিনি তার স্ত্রী, সিনথিয়া শারমিন ইসলাম এবং তার বান্ধবী, মিল্কি মাহমুদ একত্রে ২০১৩ সালে “সাজগোজ” প্রতিষ্ঠা করেন।
তার আড়াই বছর পর যমুনা ফিউচার পার্কে তারা তাদের প্রথম স্টোর এবং তার এক বছর পর সীমান্ত সম্ভার-এ তাদের দ্বিতীয় শাখা প্রতিষ্ঠা করেন।
২০১৮ সালে “সাজগোজ” তার অনলাইন কার্যক্রম শুরু করে বর্তমানে সাজগোজ ৪ লাখেরও অধিক গ্রাহক রয়েছে যার মধ্যে ৭০ শতাংশই পুনরাবৃত্তিকারক গ্রাহক। সাজগোজ বর্তমানে বাংলাদেশের তৃতীয় ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ।
এই ৫ জন উদ্যোক্তা দেখিয়েছেন কিভাবে গ্রাহক চাহিদা খুঁজে বের করতে হয়। পণ্য/ সার্ভিসের ভবিষ্যৎ বাজার চাহিদাটা তারা তাদের সুদূর-প্রসারী চিন্তায় আগে থেকেই ধরতে পেরেছেন। এভাবেই এই লেখাটা পাঠকদের উদ্যোক্তা হওয়ার অনুপ্রেরণা দিক, আমাদের সেটাই কামনা।
To read these types of blogs, please visit here
Writers,
Nusrat Jahan Sonia’s Team
(Kulsuma Fahima,Umme Aysha Itu, MD. Sakawat Ullah, Sadi Reza)