পৃথিবীতে অক্সিজেনের উৎস কি?

অবশ্যই আমরা সবাই বলবো আমাদের চারপাশের সবুজ গাছ।কিন্ত আসলে কি তাই? আমরা কি জানি ভূ-পৃষ্ঠের গাছ বাদেও সমুদ্রের নানান প্রাণী এবং গাছ অক্সিজেন উৎপাদন করে?চলুন আজকে জেনে নেওয়া যাক সমুদ্র এবং অক্সিজেনের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক এবং অজানা কিছু তথ্য!

আমাদের চারপাশে এতো গাছ-পালা থাকা স্বত্তেও পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি পরিমাণ অক্সিজেন উৎপাদন করে সমুদ্রের কিছু ব্যাক্টেরিয়া এবং কিছু প্লান্ট বা ছোট ছোট গাছ।অনেক বিখ্যাত বিজ্ঞানী এবং ন্যাশানাল ওশেনিক সার্ভিস’র তথ্য মতে ৫০-৮০% অক্সিজেন আসে সমুদ্র থেকে।আর এই অক্সিজেন সমুদ্রের পানিতে দ্রবীভূত অবস্থায় থাকে।দ্রবীভূত অক্সিজেন বলতে বোঝায় পানি বা অন্যান্য তরলে থাকা মুক্ত, যৌগিক অক্সিজেনের মাত্রা।বাতাসের মাধ্যমে বা উদ্ভিদের উপজাত হিসাবে দ্রবীভূত অক্সিজেন পানিতে প্রবেশ করে। বায়ু থেকে, অক্সিজেন আশেপাশের বায়ুমণ্ডল থেকে ধীরে ধীরে জলের পৃষ্ঠ জুড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে বা বায়ুচলাচলের মাধ্যমে দ্রুত মিশে যেতে পারে।সমুদ্রে এই দ্রবীভূত হয়ে থাকা অক্সিজেনের পরিমাণ সমুদ্রের যত বেশি গভীরে যাওয়া হয় তত তার পরিমাণ কমতে থাকে,তাই সমুদ্রপৃষ্ঠে এক এক স্তরে এক এক পরিমাণের অক্সিজেনের উপস্থিতি থাকে।এখন হয়তো প্রশ্ন আসতে পারে স্তর?সেটা আবার কি?স্তর বলতে বিজ্ঞানীরা সমুদ্রের বিভিন্ন প্রাণী,জীব,ছোট ছোট গাছ,পানির প্রেশার ইত্যাদির ভিত্তিতে সমুদ্রের গভীরতা অনুসারে পাঁচটি স্তরবিন্যাস করেছেন। পাঁচটি স্তর হলো:

১.এপিপেলাজিক স্তর

২.মেসোপেলাজিক স্তর

৩.বাথিপেলাজিক স্তর

৪.অ্যাবিসোপেলাজিক জোন

৫.হ্যাডোপেলাজিক জোন

সবার প্রথমে এপিপেলাজিক স্তরে আসি।এর আরেকটি নাম সানলাইট স্তর।এই স্তরটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২০০মিটার গভীরতায় অবস্থিত।এখানে প্রচুর আলো থাকে এবং খুব সহজে এখানে অক্সিজেন দ্রবীভূত হয় বিধায় সবচেয়ে বেশি অক্সিজেন থাকে।তাই সামুদ্রিক প্রাণীর আনাগোনাও এই স্তরে সবচেয়ে বেশি।২০.৯%’র মতো অক্সিজেন থাকে এই স্তরে।আর বেশির ভাগ অক্সিজেনই উৎপাদন করে অগভীর জলের গাছপালা,শৈবাল,ফাইটোপ্লাঙ্কটন ইত্যাদি।তারপর মেসোপেলাজিক স্তর হলো সানলাইট স্তর থেকে পরের স্তরে,যার অন্য নাম গোধূলী বা টুয়াইলাইট স্তর।এই স্তরের গভীরতা ধরা হয় ২০০-১০০০মিটার।এখানে অক্সিজেনের মাত্রা মাত্র ০.৮% কমে হয়ে যায় ২০.১%।তবে অক্সিজেনের উল্লেখযোগ্য তারতম্য দেখা যায় যখন আমরা তৃতীয় স্তর বাথিপেলাজিক স্তরে আসি।এখানে অক্সিজেনের পরিমাণ থাকে ১৯%,কারণ এখানে সূর্যের আলো একেবারেই প্রবেশ করতে পারে না ফলে গাছপালাও থাকে না, সালোকসংশ্লেষণ ও হয় না,ফলস্বরূপ অক্সিজেন কমে যাওয়া শুরু করে। অ্যাবিসোপেলাজিক স্তরে এই ১৯% কমে গিয়ে হয়ে যায় ১৭%।এই অক্সিজেনের হার লক্ষ্য করলে বুঝা যায় কি পরিমাণ দ্রুত অক্সিজেন কমে যাচ্ছে গভীরতা বাড়ার সাথে সাথে।আর শেষ গভীরতা ৬০০০মিটারের নীচের গভীরতায় যে স্তরের নাম হ্যাডোপেলাজিক স্তর।এখানে সবকিছু ঘুটঘুটে অন্ধকার এবং সর্বসাধারণ মানুষ ডুব দিয়ে পৌঁছাতে পারে না পানির প্রচুর চাপের কারণে।এখানে অক্সিজেনের পরিমাণ ১৬% থেকে কমতে কমতে প্রায় ৬% পর্যন্ত নামতে পারে।এতো কম অক্সিজেনেও এখানে অবস্থানরত প্রাণীকূল অক্সিজেনের ঘাটতি মিটানো এবং বেঁচে থাকার জন্য তাদের বিভিন্ন অঙ্গ পরিবর্তন করে এবং শিকার করার জন্য তার অন্যান্য ইন্দ্রিয়ের উপর নির্ভর করে।এমনকি এই ঘুটেঘুটে অন্ধকারে দেখার জন্য নিজের শরীর থেকে আলো সৃষ্টিকারী প্রাণীকূলও এই স্তরে লক্ষ্যনীয়।এই স্তর সমূহের পরিমাপকৃত গভীরতা বাদেও সমুদ্র কিন্তু আরো গভীর।এতোটাই গভীর এবং পানির চাপ,যার জন্য মনুষ্যকূল এখনো সে স্তরে পৌঁছাতে পারে নি কিন্তু সে স্তরে অক্সিজেনের উপস্থিতি খুবই ক্ষীণ বলে ধারণা করেন বিজ্ঞানীরা।অবাক করা বিষয় তাই না?!কি অদ্ভূতভাবে এই গভীর প্রাণীকূল বেঁচে আছে ভেবে দেখেছেন কি?সমুদ্রে এই অক্সিজেনের পরিমাণ আবহাওয়া পরিবর্তন এবং সমুদ্র দূষণের ফলে দিন দিন কমে যাচ্ছে।বর্তমানে সমুদ্রের প্রাণীকূল এক প্রকার বিপর্যয়ের মুখে।তাই আমাদের উচিত পরিবেশ এবং সমুদ্র দূষণমুক্ত রাখতে আরো সচেতন হওয়া কারণ সমুদ্রের অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গেলে শেষ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্থ হবো আমারা ভূপৃষ্ঠে থাকা প্রাণীকূলই।

আশা করি, সমুদ্রে অক্সিজেনের পরিমাণ, অবস্থান নিয়ে আপনারা রহস্যময়ী কিছু তথ্য জানতে পেরেছেন। আজকের ব্লগটি পড়ে আপনার অনুভূতি কেমন আমাদের জানাতে ভুলবেন না।

 

এরকম আরও অনেক ব্লগ পড়ার জন্য ক্লিক করুন

 

লেখক

দীপান্বিতা চাকমা

ইন্টার্ন, কনটেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট,

YSSE.