সাতোশি নাকামোতো হলেন বিটকয়েনের সৃষ্টিকারী বা প্রথম ব্লকচেইন প্রযুক্তির উদ্ভাবক তিনি একজন রহস্যময় ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন যার পরিচয় এখনো পূর্ণভাবে জানা যায়নি তিনি বিটকয়েনের সৃষ্টিকারী হিসেবে পরিচিত হলেও তার পরে তিনি বিটকয়েন সম্পর্কিত কোনো কাজ করেনি। এবং উক্ত বিষয়টি একটি রহস্য হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে

বিটকয়েন হল একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি বা ভার্চুয়াল মুদ্রা যার ফলে ইন্টারনেটের মাধ্যমে লেনদেন করা সম্ভব  তবে বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী বিটকয়েন বা অন্য কোন ক্রিপ্টোকারেন্সি কেনাবেচা বা সংরক্ষণ করা বেআইনি বলে জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক

সাতোশি নাকামোতোর প্রসঙ্গে আবার ফিরে যাই, ২০০৮ সালে ঘটনা  পুরো পৃথিবীতে যখন অর্থনৈতিক মন্দা আঘাত হানে, তখন ইন্টারনেটের প্রোগ্রামিং কমিউনিটিতে পিডিএফ আকারে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করেন সাতোশি নাকামোতোছদ্মনামের এক ব্যক্তি

সেই শ্বেতপত্রের শিরোনাম ছিলবিটকয়েন: পিয়ারটুপিয়ার ইলেকট্রনিক ক্যাশ সিস্টেম (Bitcoin: A Peer-to-Peer Electronic Cash System) সেই শ্বেতপত্রে বিটকয়েনের প্রকৃতি কেমন হবে, তা চমৎকারভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছিল

তিনি দাবি করেছিলেন, গতানুগতিক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উপর ভরসা রেখে যে নগদ অর্থের লেনদেন হয়, তাকে প্রতিস্থাপিত করতে বিটকয়েন হচ্ছে সবচেয়ে কার্যকর উপায়

এখানে লেনদেনের দুই পক্ষকে তৃতীয় কোনো পক্ষ (কেন্দ্রীয় ব্যাংক) নিয়ে ভাবতে হবে না, এছাড়া এই ব্যবস্থায় যেহেতু ডিজিটাল মুদ্রাগুলো সাংকেতিক ভাষার মাধ্যমে তৈরি করা হবে, তাই নিরাপত্তা নিয়ে ব্যবহারকারীদের কোনো বাড়তি চিন্তার প্রয়োজন পড়বে না

এই পদ্ধতিতে লেনদেনের স্বচ্ছতা আনার জন্য বিটকয়েনের প্রতিষ্ঠাতারা প্রতিটি লেনদেনের রেকর্ড যেসব সার্ভারে থাকে, সেসব সার্ভার একেবারে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন

২০০৯ সালের শুরুর দিকে ইতিহাসের প্রথম বিটকয়েন ব্লক, যাকেজেনেসিস ব্লকহিসেবে আখ্যায়িত করা হয়, সেটি ইন্টারনেটে উন্মুক্ত করা হয়

সাতোশি নাকামতো কি আজীবন রহস্য হয়েই থাকবেন

শ্বেতপত্রে যে ব্যক্তির নাম ছিল, অর্থাৎ সাতোশি নাকামোতো, তিনি কি একজন ব্যক্তি নাকি একাধিক ব্যক্তির সমন্বয়ে তৈরি একটি গ্রুপ তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে তবে এটা সবাই ধরে নিয়েছিল যে, ‘সাতোশি নাকামোতোএকটি ছদ্মনাম, খোঁজ করলে এই নামে কাউকে পাওয়া যাবে না

২০০৯ সালে যাত্রা শুরুর পর থেকে পরবর্তী দুই বছর বিভিন্ন অনলাইন ব্লগে সাতোশি নাকামোতো সক্রিয় ছিলেন, এবং বিটকয়েনের পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছিলেন

কিন্তু ২০১১ সালে এসে তিনি বিটকয়েন কমিউনিটিতে ঘোষণা দেন, এখান থেকে সরে গিয়ে তিনি অন্য কোনো ক্ষেত্রে আত্মনিয়োগ করবেন তার প্রস্থানের পরও বিটকয়েনের গ্রহণযোগ্যতা কমেনি, বরং সময়ের সাথে সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে

ধারণা করা হয়, পৃথিবীতে বর্তমানে যত বিটকয়েন রয়েছে, তার পাঁচ শতাংশের মালিকানা এখনও সাতোশি নাকামোতোর হাতে, যার অর্থমূল্য প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার!

হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্ট দানিউব নদীর পাড় ব্রোঞ্জের আবক্ষ মূর্তি বিটকয়েনের লোগো

প্রথম দেখায় মনে হবে প্রতিটি শব্দের মধ্যে কোন যোগসূত্র নেই তবে সবগুলো শব্দকে একসূত্রে গেঁথে ফেললে বোধহয় এই ভুল ভেঙে যাবে হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত দানিউব নদীর তীরে ব্রোঞ্জের একটি আবক্ষ মূর্তি রয়েছে, যে মূর্তিটি মূলত একজন হুডি পরিহিত ব্যক্তির, যার হুডির একপাশে বিটকয়েনের একটি লোগো রয়েছে

বেশ আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে, আবক্ষ মূর্তিটির মুখমন্ডলে কান কিংবা চোখ বলতে কিছুই নেই আপনি সেটি দেখলে বুঝতে পারবেনএটি অবশ্যই একজন মানুষের মুখাবয়ব, কিন্তু কার প্রতিনিধিত্ব করছে এই মূর্তি, তা সম্ভবত কখনোই বের করতে পারবেন না

তবে মূর্তির মুখমণ্ডল এত চমৎকারভাবে পালিশ করা যে চাইলে আপনি আয়না হিসেবে মুখমন্ডলকে ব্যবহার করতে পারবেন!

বিটকয়েন জগতের রহস্যময় প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিকে সঠিকভাবে উপস্থাপনের জন্য এর চেয়ে ভালো মাধ্যম বোধহয় আর পাওয়া যেত না একজন মানুষের তৈরি একটি ভার্চুয়াল লেনদেন ব্যবস্থা এক যুগের মধ্যেই শক্ত ভিত্তি পেয়ে গিয়েছে

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহায়তা ছাড়াই এক মহাদেশ থেকে আরেক মহাদেশে কিংবা এক দেশ থেকে আরেক দেশে অর্থ লেনদেন করা সম্ভব হয়েছে যার কল্যাণে, বিশ্বব্যপী প্রচলিত গতানুগতিক মুদ্রাব্যবস্থাকে প্রচন্ড জোরে ধাক্কা দিতে সক্ষম হয়েছেন যিনি, তাকে কেউ চেনে না, কেউ তার পরিচয় জানে না

বিষয়টা বেশ অদ্ভুত, তা নয় কি? যে মানুষটি এত বড় পরিবর্তন নিয়ে আসল, অথচ তার পরিচয়ই কেউ বের করতে পারল না? বর্তমানে আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে আমরা যতটাই গুটিয়ে থাকি না কেন, নানা কারণে আমাদের সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সাথে মিথস্ক্রিয়া হয়

এরকম একটা সময়েও যে একজন ব্যক্তি নিজের সম্পূর্ণ পরিচয় লুকিয়ে রেখে আড়াল থেকে কলকাঠি নেড়ে চলেছেন, বিশ্বব্যাপী এক উদ্ভাবনী মুদ্রাব্যবস্থার প্রতিষ্ঠাতা হয়েও সফলভাবে নিজেকে আড়ালে রাখতে পেরেছেনতা সত্যিই বাড়তি মনোযোগ আকর্ষণের দাবি রাখে।

এরকম আরো ব্লগ পড়তে, ক্লিক করুন

লেখিকা,

ফাহমিদা রহমান 

ইন্টার্ন, কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট 

YSSE