জাপানিজ এনিমেশন পছন্দ করেন অথচ “স্টুডিও জিবলি”র নাম শুনেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দায়। প্রতিটি জাপানিজ এনিমেশন ভক্তের কাছে জিজ্ঞেস করলেই শুনতে পাবেন এনিমেটেড সিনেমা “Spirited Away”, “My Neighbour Totoro” কিংবা “Grave of the fireflies” এর কথা। বহু ভক্তের হৃদয় জুড়ানো এই চলচ্চিত্রগুলোর কারিগর হায়াও মিয়াজাকির এই এনিমেশন স্টুডিও, নাম তার “স্টুডিও জিবলি”।

আশির দশকে যেখানে জাপানিজ এনিমেশনকে নিম্নস্তরের শিল্প ভাবা হতো সেই ভাবনা কে পরিবর্তন করতে হায়াও মিয়াজাকি একের পর এক দুর্দান্ত চলচ্চিত্র নির্মাণ করে জাপানি চলচ্চিত্রকে নিয়ে গিয়েছিলেন ভিন্ন একটি মাত্রায়। সেই নব্বইয়ের দশক থেকে বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় এনিমে জগতে এখনও

 সেরাদের সেরা হিসেবে পরিচিত স্টুডিও জিবলি। 

স্টুডিও জিবলির পথচলা শুরু হয় ১৯৮৫ সালে তিনজন জাপানি স্বপ্নচারীর হাত ধরে, হায়াও মিয়াজাকি, ইসাও তাকাহাতা ও তোশিও সুজুকি। “Ghibli” শব্দটির অর্থ হলো উত্তপ্ত বাতাস, যেই বাতাসে ভর করে জাপানের এনিমেশন কে উড়িয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন এই তিনজন। আকাশ এবং উড়াউড়ির প্রতি মিয়াজাকির তীব্র দুর্বলতা দেখা যায় তার চলচ্চিত্রের মধ্যে নজরকাড়া আকাশ কিংবা ওড়ার দৃশ্যগুলোতে। 

স্টুডিও জিবলির প্রথম মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্র “Castle in the Sky” মুক্তি পায় ১৯৮৯ সালে। ছবিটি তেমন সাড়া না পেলেও পরবর্তীতে “Grave of the Fireflies” এবং “My Neighbour Totoro” মুক্তি পায় যা এই প্রতিষ্ঠানের নামকে ধীরে ধীরে পরিচিত করে তুলছিলো  কারণ Totoro নামের চরিত্রটির খেলনা বাচ্চাদের মধ্যে আকর্ষণ সৃষ্টি করেছিলো।

এরপর “Kiki’s Delivery Service” মুক্তি পাওয়ার পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি স্টুডিও জিবলিকে। টিভিতে দেখানো এই চলচ্চিত্রের প্রচারণা করার ধরণ দর্শকদের মাঝে সাড়া জাগিয়ে দেয়। পরবর্তীতে জাপানিজ বক্স অফিসে তাদের প্রতিটি চলচ্চিত্রই তুমুল জনপ্রিয়তা পায়।

মিয়াজাকির সর্বোচ্চ সফলতা তখনই অর্জিত হয় যখন ২০০১ সালে তার তৈরি চলচ্চিত্র “Spirited Away” অস্কার লাভ করে। ডিজনির ব্যানারে জাপানের বাইরে মুক্তি পাওয়া এই ছবিটি পুরো বিশ্বে তুমুল জনপ্রিয়তা এবং সফলতা লাভ করে। স্টুডিও জিবলির ছবিগুলো আন্তর্জাতিকভাবে একের পর এক অর্জন করতে থাকে বাণিজ্যিক সফলতা। জাপানিজ এনিমেশনের সুনাম ছড়িয়ে যায় বিশ্বের প্রতিটি কোণায়।

স্টুডিও জিবলির মাধ্যমে হায়াও মিয়াজাকির চোখে পৃথিবীর দৃশ্যপট কেমন তা প্রকাশ পেয়েছে। তার চলচ্চিত্রে যেভাবে প্রকৃতি এবং জীবের মাঝে অনিন্দ্যসুন্দর মেলবন্ধন ফুটে ওঠে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। তিনি খেয়াল রেখেছেন জাপানিজ সংস্কৃতির দিকেও, এবং তা যথাযথভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন বিশ্বের দরবারে। মিয়াজাকি এবং তার স্টুডিও চাইলেই জনপ্রিয়তা লাভের পর তাদের চলচ্চিত্রের ধরণে পরিবর্তন আনতে পারতো। কিন্তু তারা খেয়াল রেখেছে তাদের চলচ্চিত্র যেন শিশু, কিশোর, যুবক কিংবা বৃদ্ধ সকল শ্রেণির মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়, এবং বলা বাহুল্য তারা এই দিক থেকেও সফলতা পেয়েছে।

স্টুডিও জিবলির জগৎজোড়া সফলতার পরেও তারা নিজেদের চলচ্চিত্রে মান ধরে রাখার প্রতি সবসময়ই সংবেদনশীল ছিলো। তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো শুধুমাত্র গুণগত মানের ছবিই বানাবে, এবং এই সিদ্ধান্তে তারা এখনো অটুট। দর্শকরাও তাদের এই সিদ্ধান্তে অত্যন্ত সন্তুষ্ট, আর তা হবেই বা না কেনো? একের পর এক দুর্দান্ত গল্প এবং চোখ জুড়ানো এনিমেশনের মেলবন্ধনে তৈরী এসব চলচ্চিত্রগুলো যে তাদের মন জয় করে নিয়েছে। 

আপনি কি কখনো স্টুডিও জিবলির মন্ত্রমুগ্ধতার জগতে হারিয়ে গিয়েছেন? যদি এখনো না হারিয়ে থাকেন তাহলে বলবো খুব ভালো কিছু থেকে বঞ্চিত আছেন। কোনো একদিন অবসর সময়ে একবার ডুব দিয়ে অনুভব করে নিন না মিয়াজাকির যাদুর রাজ্য, দেখুন কেমন লাগে।

To read more blogs #click here.

Writer,

 Mohammad Mehedi Hasan 

Intern, Content Writing Department, YSSE.