বেশ কিছু বছর আগেও হৃদরোগ বললেই আমরা ধরে নিতাম এটি বয়স্কদের সাথে সম্পর্কিত। কিন্তু বর্তমানে পাল্টে গেছে সে চিত্র।ইদানিং ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সীদের মধ্যে বাড়ছে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার হার।
প্রশ্ন এসেই যায় কেনো বাড়ছে এ হার? কেনো তরুনরা এতো ঝুঁকিতে?
হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণ ও লক্ষন নিয়ে প্রতিনিয়ত চিকিৎসকরা গবেষণা করছেন। বিভিন্ন গবেষণা থেকে ৬ টি কারণ উঠে এসেছে যেগুলো হৃদরোগ সংক্রমনের জন্য দায়ী। সেগুলো হলো – ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল লেভেল, ধূমপান, বংশগত ও জীবনযাপনের ধরণ।
প্রথমেই বলে রাখা ভালো, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ এই দুটিতে অনেক আগে থেকেই তরুণ বয়সীরা আক্রান্ত হয়ে আসছেন। অতএব, সাম্প্রতিক সময়ে অল্প বয়সীদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার হার বেড়ে যাওয়ার জন্য ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ প্রধানভাবে দায়ী তা ঠিক বলা যাচ্ছে না।
গবেষকরা বলছেন, ৩০-৪০ বছর বয়সীদের হৃদরোগ ঝুঁকির পেছনে দায়ী জীবনযাত্রার ধরন। মূলত অস্বাস্থ্যকর খাবার, ফাস্টফুড, স্ট্রেস, অবেসিটি, অতিরিক্ত ওয়ার্কআউট এসব বাড়িয়ে দিচ্ছে ঝুঁকি।
ফাস্ট ফুডে থাকে প্রচুর পরিমাণে স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও টেস্টিং সল্ট, যা ‘সাইলেন্ট হার্ট অ্যার্টাক’ এর কারণ। কারন এসবস্যাচুরেটেড ফ্যাট হার্টে অক্সিজেন যুক্ত রক্তের সরবরাহ কমিয়ে দেয়, উপরন্তু বাড়িয়ে দেয় কোলেস্টেরলের মাত্রা।
সাম্প্রতিককালে, বিশেষজ্ঞরা তরুণদের মধ্যে হৃদরোগের মাত্রা বৃদ্ধির জন্য দায়ী করছেন ট্রান্সফ্যাটকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বিশ্বের ১৫টি দেশে ট্রান্সফ্যাট গ্রহণের কারণে মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করছেন। এই তালিকায় বাংলাদেশ ও রয়েছে। প্রতিবছর প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ ট্রান্সফ্যাটজনিত হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে থাকেন।
এই ক্ষতিকর ট্র্যান্সফ্যাট কিভাবে আসে খাবারে?
ডালডা তৈরির সময় ট্রান্সফ্যাট উৎপন্ন হয়। এছাড়া একি তেলে বারবার খাবার ভাজার ফলেও তাতে ট্র্যান্সফ্যাট তৈরি হয়ে থাকে। ইয়াং জেনারেশন প্রতিনিয়ত বাইরের অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করে, যাতে থাকে প্রচুর পরিমানে ট্রান্সফ্যাট। এই ট্রান্সফ্যাট রক্তে মিশে যায় এবং খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় ও ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা যার কারনে বেড়ে যায় হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি।
অবেসিটি বা স্থূলতা তরুণদের হৃদরোগ ঝুঁকির আরেকটি উল্লেখযোগ্য কারণ। সাম্প্রতিক সময়ে স্থূলতা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, এখন ৩ জনের মধ্যে ১ জন যুবক/যুবতী অবেসিটিতে ভুগছেন। স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যাওয়া এবং টাইপ-2 ডায়াবেটিস হওয়ার জন্য দায়ী ; যার ফলে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও যাচ্ছে বেড়ে।
গবেষণায় আরো দেখা গেছে, পেশাগত চাপ তরুণদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়। “ইউরোপীয় সোসাইটি অফ কার্ডিওলজি” দ্বারা পরিচালিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ৩০-৪০ বছর বয়সীরা যাদের কর্মক্ষেত্রে চাপ বেশি ও একি সাথে বিভিন্ন ধরণের কাজের সাথে সম্পর্কিত, তারা অন্যান্যদের চেয়ে বেশি মানসিক চাপ অনুভব করে। এতে করে তাদের করোনারি ধমনী রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়, যা হার্ট অ্যাটাকের একটি প্রধান কারণ। গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে, যারা প্রতি সপ্তাহে 55 ঘণ্টার বেশি কাজ করেন তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি বেশি।
এছাড়াও পেশাগত চাপের কারণে মানুষ বিভিন্ন অস্বাস্থ্যকর জীবনধারার দিকে ধাবিত হতে পারে। যেমন : অতিরিক্ত খাওয়া, ধূমপান এবং অত্যধিক অ্যালকোহল সেবন যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। অধিকন্তু, দীর্ঘস্থায়ী চাপ হতাশা এবং উদ্বেগেরকারণ হতে পারে, যা হৃদরোগের ঝুঁকির কারণও।
এছাড়াও এখনো তরুণদের মধ্যে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার অভ্যাস গড়ে উঠেনি। যার দরুন হৃদরোগ ঝুঁকি থাকাসত্ত্বেও সঠিক সময়ে নিরীক্ষনের অভাবে তা ধরা পড়ে না।
অল্পবয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া কারোরই কাম্য নয়। কিছুটা সাবধানতা অবলম্বন করলেই হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিকমানো সম্ভব।
ক্ষতিকর ফাস্টফুড বর্জন করে সুষম খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। মাসে একবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন। ধূমপানের অভ্যাস থাকলে ধীরে ধীরে ত্যাগ করার চেষ্টা করুন। মানসিক চাপ মুক্ত থাকার চেষ্টা করুন। সেই সাথে হৃদরোগ সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে নিন যাতে নিজেকে এবং পরিবারের সবাইকে হৃদরোগ থেকে দূরে রাখতে পারেন।
To read more blogs, click here!
Writer
Kaneta Islam
Intern
Content Writing Department, YSSE