আপনি কি ব্যবসা (business) করার কথা ভাবছেন? কিন্তু চিন্তায় আছেন কোন ধরনের ব্যবসা শুরু করবেন। তাহলে এই ১০ টি ছোট ব্যবসায়ের ধারণা আপনার জন্য কার্যকরী হতে পারে।
আপনি যদি ব্যবসা শুরু করার কথা ভেবে থাকেন তাহলে আপনাকে প্রথমে বিবেচনা করতে হবে যে, আপনি ঠিক কি নিয়ে ব্যবসা করতে চান এবং আপনার এই ব্যবসায়িক ধারণা জনসাধারণের জীবনে কতটুকু প্রভাব ফেলবে। কিন্তু চিন্তা হচ্ছে কিভাবে আপনি একটি ভালমানের ছোট ব্যবসায়ের ধারণা নিয়ে আসতে পারেন?
চলুন জেনে নেওয়া যাক ১০ টি দুর্দান্ত ব্যবসায়িক ধারণার। এই তালিকা আপনাকে আপনার ব্যবসায়ী উদ্যোক্তার যাত্রা শুরু করতে সাহায্য করবে।
১. অনলাইন রিসেলিং :
চিন্তা করুন আপনি যদি পোশাক এবং বিক্রয়ে আগ্রহী হন তবে আপনি একটি অনলাইন রিসেলার ব্যবসা শুরু করার কথা চিন্তা করতে পারেন। আপনি আপনার এই রিসেলার ব্যবসাটি একটি সাইড ব্যবসা হিসাবে শুরু করতে পারেন অথবা এটিকে একটি ফুল-টাইম রিসেল ব্যবসায় পরিণত করতে পারেন। আপনি পোশাক আইটেম বিক্রি করতে বড় বড় কোম্পানির ওয়েবসাইট ব্যবহার করে পণ্য বিক্রয় শুরু করতে পারেন।
২. টি-শার্ট প্রিন্টিং :
আপনার যদি ফ্যাশনের প্রতি আগ্রহ থাকে তবে আপনি একটি টি-শার্ট প্রিন্টিং ব্যবসা চালু করতে পারেন। একটি ফাঁকা (blank) টি-শার্ট তে ছবি বা লোগো প্রিন্ট করতে পারেন। বর্তমানে এর অনেক চাহিদাও রয়েছে। আপনার যদি টি-শার্ট প্রিন্টিং সেটআপের জন্য জায়গা থাকে, তাহলে আপনি সহজেই শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামগুলি ক্রয় করে এই ব্যবসা করতে পারেন।
৩. অনলাইন শিক্ষাদান :
বর্তমান সময়ে অনলাইন শিক্ষার চাহিদা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে । যা উদ্যোক্তাদের জন্য সম্ভাবনার ধার উন্মুক্ত করেছে। যেহেতু এটি একটি অনলাইন ভিত্তিক, তাই আপনি যে বিষয়ে পারদর্শী সে বিষয়ে অনলাইনে একটি কোর্স শেখাতে পারেন। এরই পাশাপাশি আপনি একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলতে পারেন এবং সেখানে নিজের পারদর্শিতা অনুযায়ী শিক্ষা দিতে পারেন। আপনার যে বিষয়ের উপরই দক্ষতা থাকুক না কেন, বাংলা, ইংরেজি অথবা গণিত আপনি নিজের দক্ষতা অনুযায়ী একটি অনলাইন ভিত্তিক প্লাটফর্মে শিক্ষাদানের পাশাপাশি নিজের পরিচিতিও প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন।
৪. অনলাইন বুক কিপিং :
শিক্ষার মতোই, প্রযুক্তি অনেক হিসাবরক্ষক (Bookkeeping) পরিসেবাগুলিকে অনলাইনে সম্পাদন করার অনুমতি আছে।আপনি যদি একজন ভালো হিসাব রক্ষক হয়ে থাকেন তাহলে এই দক্ষতা কি কাজে লাগিয়ে আপনি অনলাইনে নিজস্ব ব্যবসা শুরু করতে পারেন। আপনি বিভিন্ন ধরনের ওয়েবসাইটে খোঁজ রাখতে পারেন ফলে যেসকল কোম্পানি ব্যবসা পরিচালনার জন্য হিসাবরক্ষক খুঁজে থাকেন খুব সহজেই তাদের সাথে কাজ করার সুযোগ পেতে পারেন। তাহলে আপনার নিজস্ব অনলাইন বুককিপিং পরিষেবার আধুনিক প্রযুক্তির সুবিধা দিতে পারেন।
৫. পরামর্শদাতা:
আপনি যদি যে কোন একটি নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে জ্ঞানী হন (যেমন ব্যবসা, স্যেসাল মিডিয়া, বিপণন, মানব সম্পদ, নেতৃত্ব অথবা যোগাযোগ) তাহলে পরামর্শদান একটি লাভজনক ব্যবসা হতে পারে। আপনি নিজেই একটি পরামর্শদান ব্যবসা শুরু করতে পারেন, তারপরে আপনার ব্যবসা বাড়াতে পারেন এবং সময়ের সাথে সাথে অন্যান্য পরামর্শদাতা নিয়োগ করতে পারেন। বড় ধরনের মূলধন ছাড়াই এই ব্যবসায় করতে পারেন।
৬. মেডিকেল কুরিয়ার সার্ভিস :
আপনার যদি একটি নির্ভরযোগ্য যানবাহন থাকে ও ভালো ড্রাইভ করতে পারেন এরই পাশাপাশি ভালো সময় ব্যবস্থাপনার দক্ষতা থাকে, তবে আপনি মেডিকেল কুরিয়ার পরিষেবা দেওয়ার কথা বিবেচনা করতে পারেন। একজন সেলার হিসাবে, আপনি ল্যাবের নমুনা বিলি, মেডিক্যাল রিপোর্ট, ওষুধ এবং বিভিন্ন মেডিকেল সরঞ্জামাদিপরিবহনের মাধ্যমে মানুষের ঘরে পৌছে দিতে পারেন। স্বল্প মূলধন নিয়েই এই অনলাইন ভিত্তিক ব্যবসা শুরু করা সম্ভব।
৭. অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট :
আপনার যদি তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকে এবং অ্যাপ ডেভেলপমেন্টে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হন তবে আপনি অ্যাপ ডেভেলপমেন্টের মাধ্যমে ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। স্মার্টফোন এখন সব দেশের মানুষের একটি দৈনন্দিন আনুষঙ্গিক জিনিস যা যা প্রতিনিয়ত এর চাহিদাকে বাড়িয়ে তুলছে। দিন দিন জনপ্রিয় হওয়া এই অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট এর কাজ করে আপনার জীবন পরিচালনা করতে পারেন।
৮. ফ্রিল্যান্স কপিরাইটিং বা কন্টেন্ট রাইটিং :
আপনার যদি লেখালেখির প্রতি আগ্রহ অথবা দক্ষতা থেকে থাকে তবে আপনি নিজেকে একজন ফ্রিল্যান্স কপিরাইটার বা কন্টেন্ট রাইটার হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন। বর্তমানে এর অনেক চাহিদা রয়েছে। আপনি এই কাজ করতে পারলে প্রচুর কোম্পানি ও বিভিন্ন ওয়েবসাইটে অতি সহজেই কাজ খুঁজে পাবেন।
ক্লায়েন্টদের দেওয়া নির্দিষ্ট কীওয়ার্ডগুলির উপর ভালা তথ্য ও লিখনির কৌশল তৈরি এবং এসইও জ্ঞান ব্যবহার করে আপনি ভালো মার্কেটপ্লেস তৈরি করার মাধ্যমে আয় করতে পারেন। যেমন, Fiverr (www.fiverr.com), Upwork (www.upwork.com), Glassdoor (www.glassdoor.com)
ফ্রিল্যান্স কপিরাইটিং বা কন্টেন্ট রাইটিং একটি দুর্দান্ত ব্যবসা, কারণ যতক্ষণ আপনার ইন্টারনেট সংযোগ থাকে আপনি কাজ করতে পারবেন। আপনি ঘরে বসে এমনকি এই বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে থেকেই এই কাজটি করতে পারবেন। আপনি যদি সুবিধাজনক নেটওয়ার্ক স্থাপন করেন এবং ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে ভালো কাজ পান তাহলে এই ব্যবসায় লাভবান হবেন।
৯. ডিজিটাল মার্কেটিং :
বর্তমান বিশ্বে ইন্টারনেটের ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে, কিন্তু ব্যবসার (Business) জন্য সঠিক বিজ্ঞাপন এবং নিজেদের পণ্যের সঠিকভাবে বাজারজাত করাও কঠিন হয়ে পড়েছে। ৷ আপনার যদি ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ইমেইল মার্কেটিং, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, ভিডিও এডিটিং, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি কাজের উপর দক্ষতা থাকে, তাহলে আপনি একজন ডিজিটাল মার্কেটার হিসাবে ঘরে বসেই কাজ ও আয় করতে পারবেন।
১০.রাইডশেয়ার ড্রাইভিং :
যদি আপনার নিজের ব্যবসা শুরু করা দুঃসাধ্য মনে হয় বা খুব বেশি ঝুঁকিপূর্ণ মনে হয় তাহলে আপনি আপনার বাইক বা অন্যান্য গাড়ি ব্যবহার করে রাইডশেয়ার ড্রাইভার হতে পারেন। যা আপনাকে নিজের ইচ্ছামতো কাজ করার স্বাধীনতা প্রদান করব এবং এর দ্বারা ভালো পরিমাণে আয় করাও সম্ভব।
Uber এর মতো রাইডশেয়ার অ্যাপ্লিকেশানে রেজিস্ট্রেশন করার মাধ্যেমে এখান থেকে ভাল অর্থ আয় করতে পারেন ।
☞আপনি কিভাবে টাকা ছাড়া আপনার নিজের ব্যবসা শুরু করতে পারেন?
একটি ছোট ব্যবসার মালিক হতে হলে আপনার তেমন অর্থের প্রয়োজন নেই। কোনো টাকা ছাড়াই ব্যবসা শুরু করার প্রথম ধাপ হল আপনার মেধাকে কাজে লাগানো, সঠিক চিন্তাধারার মাধ্যমে প্রথমে একটি ছোট ব্যবসা চালু করা। তারপর, আপনার ব্যবসায়িক পরিকল্পনার বিকাশ করুন এবং সেই অনুযায়ী কাজ করলে আপনি সফল হতে পারবেন।
➤ কম্পিউটার ভিত্তিক অনলাইন কাজ
অনলাইন থেকে আয় করা বর্তমান সময়ে খুবই জনপ্রিয়তা পেয়েছে এবং আগামীর ভবিষ্যৎ আমাদের এই প্লাটফর্ম একটি ভালো অবস্থানে নিয়ে যাবে বলে আমার বিশ্বাস। আমাদের বাংলাদেশের সরকার প্রধানও অনলাইন থেকে আয় বা ফ্রিল্যান্সিংয়ে উৎসাহিত করেছেন, তাই একজন রেমিটেন্স যোদ্ধা হিসেবে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে আমাদের অগ্রণী ভূমিকা রাখা উচিত বলে আমি মনে করি।
আসলে অনলাইনে কোন সেক্টরে আপনি বেশি দক্ষ বা কোন বিষয়ে আপনি বেশি পারদর্শী হতে পারবেন সেটা আপনাকে নির্বাচন করতে হবে। আপনি যদি কম্পিউটারে পারদর্শী না হন সেক্ষেত্রে আপনাকে কিছুদিন সময় নিয়ে কোনটা আপনি সফল হতে পারবেন সহজেই সেটি আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে। আপনি যে বিষয়ে পারদর্শী হোন না কেন ইনকাম আপনি করতে পারবেন তাতে কোন সন্দেহ নাই।
বর্তমান সময়ে ডিজিটাল মার্কেটিং, এফিলিয়েট মার্কেটিং, সিপিএ মার্কেটিং এগুলোই অবশ্য শীর্ষে অবস্থান করছে, আমি কোন কাজকেই কিন্তু ছোট করে দেখছি ন। আপনি ভালো করে খুঁজলে এর চেয়েও ভাল ডিসিশন খুঁজে পেতে পারেন, ধন্যবাদ।
পরিশেষে, ব্যবসা (business) একটি স্বাধীন পেশা, আমাদের সমাজে অনেক শিক্ষিক লোক আছে তারা চাকুরি না করে নিজে উদ্যোক্তা হয়ে ছোট পরিসরে ব্যবসা করতে আগ্রহী হন। এই ১০ টি ছোট ব্যবসায়ের ধারণা কিছুটা হলেও অনুপ্রেরণা দিবে আশা রাখি।
এরকম আরও ব্লগ পড়তে, ক্লিক করুন।
লেখক,
ফারিহা আলিফ
ইন্টার্ন, কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট
YSSE