কাজের মাঝে, মাথা ব্যথায়, চাপ কমাতে, ঘুম থেকে উঠে, আবার ঘুম যাবার আগে , আলসেমির ফাঁকে, সকালের নাস্তায়, বিকেলের অবসরে, বন্ধুর আড্ডায়, টিফিনের ফাঁকে, রিমঝিম বৃষ্টিতে, মন খারাপে কিংবা কারণে অকারণে চাই শুধুই চা!
“চলো সবাই চা খেয়ে আসি ! কোথায় নেই চা ? এসি রুমে, পথের বাঁকে, টং এর দোকানে। বড় মগে, ছোট কাপে কিংবা গ্লাসে গ্লাসে।”
তবে তা এবং চা-বাগানের রাজ্যে প্রবেশের আগে চা নিয়ে কয়েকটি তথ্য দিয়ে নিই। কিংবদন্তি অনুসারে, চা প্রথম আবিষ্কার করেন চীনা সম্রাট শেন নাং, খ্রিষ্টপূর্ব ২৭৩৭ সালে। ওই সময় তাঁর গরম পানির পাত্রে বুনো গাছের কিছু পাতা পড়ে, তিনি যেটি পান করলেন সেটাই চা।
তবে জানেন কি, পৃথিবীতে কত জাতের চা আছে ?
সংখ্যাটা হয়তো আনুমানিক ৩০০০। যদি পানিকে বাদ দেয়া হয় তবে চা হলো পৃথিবীতে বেশি পান করা পানীয়। ব্ল্যাক টি, গ্রিন টি, হোয়াইট টি, ওলং টি—সব ধরনের চা আসে ক্যামেলিয়া সিনেসিস নামের উদ্ভিদ থেকে। তাদের স্বাদ, চেহারা আর গন্ধে ভিন্নতার কারণ প্রক্রিয়াজাতকরণের প্রক্রিয়ায় ভিন্নতা।
পৃথিবীতে আসাম ও চীন জাতীয় দুই ধরণের চা গাছ পাওয়া যায়। আসাম গাছ বেশ বড় এবং বহু পাতা যুক্ত। চীন জাতীয় গাছ আকারে ছোট এবং পাতার সংখ্যাও কম। বিভিন্ন প্রকারের চা পাওয়া যায়। গ্রীন টি, কালো চা, সাদা চা, ওলং টি, মাচা টি। দুধ চা পান করার সংস্কৃতি কিন্তু ব্রিটিশদের অবদান। এখন তো মাল্টা চা, স্ট্রবেরি চা, তেঁতুল চা, তুলসি চা, কাঁচা মরিচের চা, তন্দুরি চা ; কতো যে চা।
তবে, পুরান ঢাকার সর ভাসা মালাই চা এর আবেদনই আলাদা। সিলেটের সাত রং এর চা পান করতে ছুটে যাই ” নীল কণ্ঠ চা কেবিনে। ”
চা পানের শুরু কোথায়?
ইংরেজিতে “চা বা টি” কথাটি গ্রীক দেবি থিয়ার এর নামানুসারে করা হয়েছিলো। এর বৈজ্ঞানিক নাম ক্যামেলিয়া সাইনেনসিস। ১৬৫০ সালে চীনে বাণিজ্যিকভাবে চায়ের উৎপাদন শুরু হয়। ভারতবর্ষে চাষ শুরু হয় ১৮১৭ সালে। ১৬৫৭ সালে প্রথম চায়ের দোকান হয় ইংল্যান্ডে।
এখন পর্যন্ত পৃথিবীর প্রায় ৫০টির বেশি দেশে চা জন্মে। সবচেয়ে বয়স্ক গাছ আছে চীনে, বয়স প্রায় ৩ হাজার ২০০ বছর। পানীয় হিসেবে এত জনপ্রিয়তা পাওয়ার আগে চা ব্যবহার হতো মূলত ওষুধ হিসেবে। চায়ের পাতা কিন্তু মশা প্রতিরোধে সাহায্য করে। ব্যবহৃত চা-পাতা শুকিয়ে পোড়ালে যে ধোঁয়া হয়, তা মশাকে দূরে রাখতে সাহায্য করে।
চায়ের কিছু উপকারিতা
চা শুধুই এক কাপ প্রশান্তির নাম নয় বরং এটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। চায়ের মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের ক্ষতিকর টক্সিন দূর করে। গ্রীন টি ও হারবাল চা ওজন কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও চা মানসিক চাপ কমায় মনকে সতেজ রাখে।
বাংলাদেশে চায়ের সংস্কৃতির শুরু কোথায় ও কেমন?
বাংলাদেশের চায়ের বিশেষ একটি গুরুত্ব রয়েছে সিলেটে লিনি ছড়া চা বাগান দেশের প্রথম চা বাগান । বর্তমানে শ্রীমঙ্গল পুরো দেশের চায়ের রাজধানী হিসেবে পরিচিত। বাঙালির প্রতিদিনের আড্ডা অফিসের বিরতি কিংবা বই পড়ার মুহূর্ত সব কিছুতেই চায়ের উপস্থিতি থাকাটা মোটামুটি বাধ্যতামূলক বলে মনে করা হয়।
মনে পড়ে, রবীন্দ্রনাথের কথাসাহিত্যে চায়ের প্রসঙ্গ অল্পস্বল্প এসেছে কিন্তু চা নিয়ে যে তিনি হাস্যরসাত্মক একটি গান লিখেছেন এবং তা গীতবিতানে সংকলিত, তা আমাদের অনেকেরই নজরে আসেনি!
এক কাপ চা, একটু ভালোবাসায়- উষ্ণ ছোঁয়ায়- শুধু আমি তোমাকে চাই!
চা গাছ রোপন, আগাছা নিধন, সার প্রয়োগ, কচি পাতা তোলা,, শুকানো, প্যাকিং, ইত্যাদি কাজে দক্ষ অদক্ষ শ্রমিক কাজ করে। তবে, যেহেতু বিষয়টি বেশ ধৈর্যের তাই নারী শ্রমিকদের নিয়োগ দেয়া হয়।
জাপান ও চীনে চায়ের ঔষধি গুণাগুনের জন্য খুব গুরুত্ব দিয়ে চা পান করা হয়। তুর্কি আর পারসিরা তাদের প্রাণীজ আমিষ ও ফ্যাট নির্ভর ভারি গোছের চর্ব্য ও চোষ্য ভোজনের পর মুখশুদ্ধি হিসেবে চা পান করে।
আর আমরা বাঙালিরা যেন চায়ের কাপেই ঝড় তুলেই ফুঁসে তুলেছি, ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা আন্দোলন, নব্বই এর আন্দোলন।
চা নিয়ে কতো কবিতা, কতো গান, কতো কাহিনী। আমরা তো বেঁচে থাকার আশা খুঁজে পাই এক চুমুক চা পান করে। ডাল ভাত খেয়েও চাই এক কাপ চা।
লেখাটি পড়ে চায়ের তৃষ্ণা পেয়ে বসেছে? তাহলে দেরি না করে বানিয়ে ফেলুন এক কাপ উষ্ণতায় ভরা চা, আয়েশ করে চুমুক দিতে দিতে শুরু করুন না হয় কোন এক চা-বাগান ভ্রমণের পরিকল্পনা !
এরকম আরো ব্লগ পড়তে, ক্লিক করুন এখানে
লেখক,
মাফরুহা সুমাইয়া
ইন্টার্ন, কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট
YSSE