আজ মহান বিজয় দিবস। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গৌরবময়, চিরস্মরণীয় দিন। ২০২৪ সালে আমরা উদযাপন করছি বাংলাদেশের ৫৪ তম বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে, মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পরিণতি আসে, যখন পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করে এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার লাল-সবুজ পতাকা পৃথিবীর মানচিত্রে শোভা পায়। শোষণের জাঁতাকলে পিষ্ট বাঙালি স্বাধীন দেশে মুক্তির স্বাদ নিয়েছিল প্রথমবার। বাংলার মানুষের জীবনের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত ও আবেগঘন দিন এই ১৬ ডিসেম্বর।

বাংলাদেশের গৌরবময় বিজয় দিবস

বিজয়ের এই দিনটি শুধুমাত্র একদিনের জয়গান নয়, এটি একটি জাতির আত্মমর্যাদা, সাহসিকতা, এবং স্বাধীনতার সংগ্রামের চূড়ান্ত অর্জন। আজকের দিনটি শুধু জাতীয় আনন্দের দিন নয় , বরং শহিদদের আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের দিনও। আমাদের লাল-সবুজের পতাকা শুধুমাত্র একটি প্রতীক নয়, এটি আমাদের সংগ্রাম, ত্যাগ এবং আত্মমর্যাদার চিহ্ন। এর  প্রতিটি সেলাইয়ের বুননে আছে ত্রিশ লাখ শহিদের রক্ত, দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম, এবং সেই অবিস্মরণীয় সংগ্রামের কষ্ট। পতাকাটি আমাদের মুক্তির গান, আমাদের আত্মবিশ্বাস, আর আমাদের বিজয়ের চিরন্তন স্মৃতি। যাঁদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা লাভ করি, আজও তাঁদের স্মৃতি আমাদের অনুপ্রেরণা যোগায়, যোগায় এগিয়ে যাবার সাহস। 

পাকিস্তানের নৃশংস হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে যখন এ দেশের ঘুমন্ত, নিরস্ত্র, নিরীহ মানুষের ওপর ভয়ংকর মারণাস্ত্র নিয়ে গণহত্যার পৈশাচিকতায় মেতে উঠেছিল, তখন থেকেই শুরু হয়েছিল প্রতিরোধ সংগ্রাম। শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দেশকে স্বাধীনতার আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশের কোটি কোটি মানুষ যুদ্ধে অংশ নেয়। দেশের বীর সন্তানেরা যুদ্ধের ময়দানে ছুটে গিয়েছিলেন শত্রুর মোকাবিলায়। জীবনের মায়া তাঁদের কাছে ছিল তুচ্ছ। তাঁদের ছিল না যুদ্ধের প্রশিক্ষণ, ছিল না কোনো উন্নত সমরাস্ত্র। বাঙালি জাতির পক্ষে ছিল না অভ্যন্তরীণ সাহায্য, না বহির্বিশ্বের সহায়তা, তবুও জিতেছিল তারা সাহসে ও একাত্মতায়। মুক্তিযুদ্ধের প্রতিটি মুহূর্তে ছিল অসম লড়াই, কিন্তু যুদ্ধে ছিল একমাত্র লক্ষ্য—স্বাধীনতা। এক সময় সেই সংগ্রামের ফলস্বরূপ ১৬ ডিসেম্বর আসে, যখন পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করে এবং বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। 

লাল-সবুজের বিজয়কেতন 

দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র সংগ্রাম  শেষে, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতি পায় তাদের  বহু প্রতীক্ষিত বিজয়। এই বিজয়ের ফলে, পূর্ববাংলার জনতা পৃথিবীর মানচিত্রে প্রতিষ্ঠা করে বাংলাদেশ নামের নতুন এক রাষ্ট্র। এই ডিসেম্বরের কুয়াশাঢাকা আকাশে যখন স্বাধীনতার সূর্য উদিত হয়েছিল, তখন আমাদের লাল-সবুজ পতাকা সগর্বে উড়েছিল। আমাদের পতাকার প্রতিটি রঙের মাঝে লুকিয়ে আছে আমাদের সংগ্রামের কাহিনী। লাল রং শহীদদের রক্তের প্রতীক, যাঁরা দেশের স্বাধীনতার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। সবুজ রঙের মাঝে নিহিত আছে বাংলার প্রকৃতি ও সমৃদ্ধির প্রতীক। 

সেদিন বাতাসে ভেসে উঠেছিল ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটির সুর। বিজয়ের এই দিনে আমরা আনন্দের সাথে স্মরণ করি আমাদের বীর শহিদদের, যাদের ত্যাগের বিনিময়ে আমরা স্বাধীন দেশ পেয়েছি। তবে, একই সঙ্গে সেই আকাশে ধ্বনিত হয় স্বজন হারানোর গভীর বেদনা, যে বেদনা আমাদের হৃদয়ে অমলিন থাকবে।

আমাদের বর্তমান এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের ওপরও দায়িত্ব এসে পড়ে তাঁদের সেই আত্মত্যাগকে সম্মানিত করা, দেশের প্রতি তাঁদের ভালোবাসাকে বজায় রাখা। স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের মান বজায় রাখতে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং সবসময় দেশের কল্যাণে কাজ করতে হবে।

বিজয় দিবসের প্রতিজ্ঞা

আজকের দিনে, আমরা শপথ গ্রহণ করি—মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করব, দেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের পথে বাধা সৃষ্টি করতে চাওয়া যে কোনো শক্তিকে পরাজিত করব। দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার আমরা প্রতিটি ঘরে ঘরে করি।

আজকের দিনটি শুধু বিজয়ের নয়, বরং এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা। আমরা প্রতিজ্ঞা করি, স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের পক্ষে আমরা সবসময় ঐক্যবদ্ধ থাকব, যেন ভবিষ্যতেও এই পতাকা অটুট থাকে, সজীব থাকে আমাদের জাতীয় সংগ্রামের চেতনা।দেশের বীর সন্তানদের সেই আত্মত্যাগকে সম্মানিত করা আমাদের বর্তমান এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের  দায়িত্ব।দেশের প্রতি বীর যোদ্ধাদের  ভালোবাসাকে জিইয়ে রাখা। স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের মান বজায় রাখতে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং সবসময় দেশের কল্যাণে কাজ করে যেতে হবে। আমরাই বাংলাদেশ ! 

এরকম আরও লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন। 

লেখক 

ফারদিন বিন আব্দুল্লাহ 

ইন্টার্ন

কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট,

YSSE