এখানে পরিবর্তনের কারিগর দ্বারা এমন ব্যক্তিদের বোঝানো হয়েছে যারা তাদের সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনার মাধ্যমে পৃথিবীর ভাবধারায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন এবং এখনো করে যাচ্ছেন। তাঁরা তাদের ব্যতিক্রম ও নতুন তত্ত্বের মাধ্যমে পৃথিবীকে করছেন উন্নত ও প্রজন্মের জন্য রেখে যাচ্ছেন নতুন মতধারা।

এখানে বাংলাদেশের তিনজন পরিবর্তনের কারিগর নিয়ে আলোচনা করবো যারা অর্থনীতি, শিক্ষা ও সমাজিক পরিবর্তনে ভূমিকা রেখেছেন। আশাকরি এই আর্টিকেল পড়া শেষে পাঠকরা জানতে পারবেন কীভাবে পরিবর্তনের কারিগররা ব্যতিক্রমি চিন্তার মাধ্যমে বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করে পরিস্থিতির উন্নয়ন করে এবং সমাজের পরিবর্তন এনে নতুন ভাবধারায় প্রভাবিত করে।

ড. ইউনুস

ড. ইউনুস যিনি বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম নোবেল বিজয়ী ব্যক্তিত্ব। গ্রামের গরীব মানুষদের জন্য কিছু করার চেষ্টা থেকে তিনি স্থাপন করেন ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানকারী বিশেষায়িত সামাজিক উন্নয়ন ব্যাংক, যা গ্রামীন ব্যাংক নামে পরিচিত। এই ব্যাংকের জন্য তিনি অর্থনীতিতে যৌথভাবে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দারিদ্র পীড়িত মানুষের কাছে জামানত ছাড়াই ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান শুরু করেন। যার মাধ্যমে দরিদ্র মানুষজন অর্থনৈতিক ভবে সাবলম্বিতা অর্জনের সুযোগ পায়।

অর্থনীতির ভাষায় এটি মাইক্রোক্রডিট নামে পরিচিত যা বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের ৬৪টিরও বেশি দেশে এই প্রকল্প পরিচিতি পেয়েছে। উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে ২০২২ সাল পর্যন্ত লক্ষাধিক ঋণগ্রহীতার মধ্যে ৯৬.৮১% ই নারী। যা নারী ক্ষমতায়নে ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এছাড়াও তাঁর সামাজিক ব্যবসা মডেল, শক্তি ড্যানোন মডেল উল্লেখযোগ্য। শক্তি ড্যানোন মডেল এর আওতায় শিশুদের পুষ্টির চাহিদা মেটানোর লক্ষ্য গ্রহন করা হয়েছিল।

ড. কুদরত-ই-খুদা

স্বাধীনতার পর যে কয়জন মানুষের সৃষ্টিশীল প্রতিভা আমাদের সমাজ ও শিক্ষা ক্ষেত্রের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে তাঁদের মধ্যে অন্যতম পথিকৃৎ হলেন ড. কুদরত-ই-খুদা। তিনি রসায়নবিদ, গ্রন্থকার এবং শিক্ষাবিদ হিসেবে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন।

তাঁর বিখ্যাত বই আ টেক্সটবুক অব ইনরগানিক কেমিস্ট্রি (১৯২৪) দীর্ঘকাল ধরে কলেজের পাঠ্যবই হিসেবে অধ্যয়ন করা হত। বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর মৌলিক অবদানের সাথে সাথে শিক্ষা ক্ষেত্রের অবদানের কথা না বললেই নই। ১৯৭২ সালের ২৬ জুলাই তিনি গঠন করেন ড. কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন। এই কমিশনের আওতায় বাংলাদেশে প্রথম বার অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক এবং বিনা মূল্যে করা হয়। যার ভাবধারা ধরে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এতদূর এসেছে, যদিও পুরো প্রকল্প বাস্তবায়নের সুযোগ হয়নি। আমাদের মাতৃভাষায়ও তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।

আয়মান সাদিক

বর্তমানে যে কয়জন তরুন অনুপ্রেরণার নাম শোনা যায় তাদের মধ্যে আয়মান সাদিকের নাম সবার আগে আসে। এই তরুন বয়সেই তার প্রাপ্তির ঝুলিতে রয়েছে কুইন্স ইয়াং লিডার, এশিয়া প্যাসিফিক আইসিটি অ্যালায়েন্স (এপিক্টা) পুরস্কার, আইডি এলসি প্রথম আলো পুরস্কার সহ বেশ কিছু এওয়ার্ড। এছাড়াও ফোর্বস ম্যাগাজিনের ৩০ অনূর্ধ্ব ৩০ এও তার নাম ছিলো। এইসব প্রাপ্তি অর্জনের পেছনে ছিলো দেশের সকল স্তরের শিক্ষার্থীদের সহজে ও বিনামূল্যে শিক্ষা সরবরাহ করা। যার জন্য প্রতিষ্ঠা করেন টেন মিনিট স্কুল যা বর্তমানে দেশের সেরা শিক্ষা গ্রহনের অনলাইন প্লার্টফর্ম। জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি লেভেলের শিক্ষার্থীরা ফেসবুক ইউটিউবে পেইড এবং ফ্রী ক্লাস করতে পারে। গ্রামের শিক্ষার্থীরা যারা শহরে এসে শিক্ষা গ্রহনে অক্ষম তারা সহজেই মোবাইলে পড়াশোনা করতে পারে।

এছাড়াও পড়াশোনার বাইরে দক্ষতা অর্জনের জন্য পেইড এবং ফ্রী কোর্স প্রদান করা হয়। যা বেকারত্ব দূরীকরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। এছাড়া ১৩ লাখ সক্রিয় সদস্যের এই অনলাইন প্লার্টফর্মে হাজার হাজার তরুন শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি আয়ের সুযোগ পাচ্ছে।

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিগণ তাঁদের তৎকালীন সময়ে বাধা ও ব্যতিক্রমতা সত্ত্বেও নিজ নিজ জায়গা থেকে দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিচরন করেছেন। তাঁদের উদ্ভাবনী মূলক চিন্তা ধারার মাধ্যমে আমাদের বর্তমান এবং ভবিষ্যতের জন্য আদর্শ রূপরেখা গঠন করেছেন।

এই রকম আরো ব্লগ পড়তে, ক্লিক করুন এখানে

লেখিকা,

সিরাজুম মুনিরা তৃণা  

ইন্টার্ন, কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট

YSSE