পাবলিক স্পিকিং বা জনসমক্ষে বক্তৃতা দেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা, যা ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে সাফল্যের জন্য অপরিহার্য। এই দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে আপনি আপনার চিন্তাধারা স্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে, শ্রোতাদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে এবং আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করতে পারেন। অনেকই মনে করেন পাবলিক স্পিকিং একটি জন্মগত দক্ষতা। কিন্ত গান শেখা, পড়াশোনা করা বা অন্যান্য কাজের মতো এই দক্ষতা অর্জনের জন্যেও দরকার চর্চা। নিয়মনিষ্ঠ ভাবে চর্চা এবং অনুশীলনের মাধ্যমেই বিশ্বের বিখ্যাত ব্যক্তিত্বগণ এই দক্ষতা অর্জন করেছেন। পাবলিক স্পিকিংয়ে দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রচলিত বেশ কার্যকর পদ্ধতি রয়েছে।
দরকার সঠিক প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা
বক্তব্যের শুরুতে শ্রোতাদের মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য একটি আকর্ষণীয় ভূমিকা এবং শেষে একটি স্মরণীয় উপসংহার বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এর বাইরেও বেশিরভাগ মানুষই কথা বলার সময় নার্ভাস অনুভব করে। ঘেমে যাওয়া, গলা কাঁপা ও শুকিয়ে যাওয়া, হাত পা কাঁপা ইত্যাদি এমন লক্ষণ যা প্রায় সবাই সম্মুখীন করে। কিন্তু যদি আমরা এগুলো কিভাবে কাটানো যায় নিয়ে চিন্তা না করে, আমারই শুধু এমন হচ্ছে এমন চিন্তা করলে কখনোই পাবলিক স্পিকিংয়ে ভালো করতে পারবো না। এগুলো মোকাবেলা করতে চর্চার কোনো বিকল্প নেই। আমরা যে বিষয়ে কথা বলবো বা বক্তব্যে প্রদান করবো সেগুলোর মূল পয়েন্টগুলি নির্ধারণ করে তার জন্য একটি সুসংগঠিত কাঠামো তৈরি করতে পারি। সেই অনুযায়ী চর্চার পাশাপাশি আয়নায় দাঁড়িয়ে স্ক্রিপ্ট পড়া বা নিজের ভিডিও করা অথবা কোনো পার্টনারের সাথে কথা বলা ব্যাপারটাকে অনেক সহজ করে দেয়। বক্তব্যের শুরুর ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে যদি দর্শকদের মনোযোগ আকর্ষন করতে পারেন তবে মনে করবেন আপনি পাবলিক স্পিকিংয়ে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছেন।
আপনাকে জানতে হবে আপনার শ্রোতা কারা
প্রথমেই আপনাকে জানতে হবে কার বা কাদের উদ্দেশ্য আপনি কথা বলবেন। তাদের বয়স, পেশা, শিক্ষা এবং সাংস্কৃতিক পটভূমি সম্পর্কে ধারণা নিয়ে বক্তব্য প্রস্তুত করুন, যাতে তারা আপনার কথার সাথে সহজে যোগাযোগ তৈরি করতে পারে। শ্রোতা সম্পর্কে তথ্য জানা থাকলে স্ক্রিপ্ট তৈরিতে তাদের প্রয়োজন ও আগ্রহ অনুযায়ী শব্দ চয়ন ও তথ্য সংগ্রহ করে বক্তব্য তৈরি করা সহজ হয়। এবং সেই অনুযায়ী বক্তব্যের মূল কথা স্পষ্ট ও সংক্ষিপ্ত রাখতে হবে । জটিল ভাষা বা অতিরিক্ত তথ্যের ব্যবহার এড়িয়ে চলতে হবে যাতে শ্রোতারা সহজে বক্তব্য বুঝতে পারে এবং মনে রাখতে পারে।
আপনার অঙ্গভঙ্গি ও ব্যক্তিত্ব গুরুত্বপূর্ণ
বক্তৃতার সময় অঙ্গভঙ্গি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিজের মতো থাকার চেষ্টা করুন, বেশি বকবক করার প্রয়োজন নেই।
সোজা হয়ে দাঁড়ান, চোখের দিকে সরাসরি তাকান যা কথা বলার সময় আপনার আত্মবিশ্বাস তৈরি করবে। হাতের অঙ্গভঙ্গি ও ডায়াসের ওপর হালকা চলাফেরা শ্রোতাদের আপনার প্রতি আগ্রহী করতে সাহায্য করবে।
কণ্ঠস্বরের ওঠানামা, গতি এবং ভলিউমের পরিবর্তন বক্তব্যকে প্রাণবন্ত ও আকর্ষনীয় করে। একই সুরে কথা বললে শ্রোতাদের বিরক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই কণ্ঠস্বরের বৈচিত্র্যতা ধরে রাখার চেষ্টা করুন।
প্রশ্ন উত্তর সেশন, উদাহরণ দেওয়া বা অভিজ্ঞতা থেকে আলোচনা শ্রোতাদের সাথে সংযোগ স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ভিজ্যুয়াল এইডস ব্যবহার
স্লাইড, ছবি বা ভিডিওর মতো ভিজ্যুয়াল এইডস ব্যবহার করে বক্তব্যকে আরও সহজে ব্যাখ্যা ও আকর্ষনীয় করা যায়। তবে অতিরিক্ত ভিজ্যুয়ালের ব্যবহার মূল বক্তব্য থেকে মনোযোগের ব্যঘাত ঘটাতে পারে।
সময়ের সঠিক ব্যবস্থাপনা
বক্তৃতার সময়সীমা মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত দীর্ঘ বা সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা শ্রোতাদের বিরক্ত করতে পারে। তাই সময়ের মধ্যে বক্তব্য শেষ করার জন্য পূর্বেই সময় নির্ধারণ করে অনুশীলন করুন।
এছাড়া ভালো বক্তৃতা দেওয়ার জন্য বেশি বেশি পড়ার কোনো বিকল্প নেই। বই, পত্রিকা, বিভিন্ন বিষয়ে ব্লগ বা আর্টিকেল ইত্যাদি জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে যা উপযোগী তথ্য ও যুগের সাথে তাল মিলিয়ে কথা বলতে সাহায্য করে। সর্বোপরি অনুশীলন ও দৃঢ় মন মানসিকতা যদি থাকে তবেই সম্ভব একজন দক্ষ স্পিকার হওয়া।
এই রকম আরো ব্লগ পড়তে, ক্লিক করুন
লেখিকা,
সিরাজুম মুনিরা
ইন্টার্ন,
কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট
YSSE.