শিক্ষা ও কর্মসংস্থান, শব্দ দুটির সাথে আমরা সকলেই পরিচিত।আমরা প্রতিনিয়তই কর্মসংস্থান নিয়ে বিভিন্ন ধরনের খবরাদি দেখতে  পাই। শিক্ষার ব্যবস্থার সাথে কর্মসংস্থান এর যোগসূত্র রয়েছে। আজ কথা বলবো শিক্ষা ও কর্মসংস্থান নিয়ে এবং এতে তরুন প্রজন্মের চ্যালেঞ্জ গুলো নিয়ে।

শিক্ষা ও কর্মসংস্থান :

বর্তমান সময়ে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই।নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে, নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে হলে শিক্ষা আবশ্যক। আমাদের আশে পাশে তাকালেই আমরা দেখতে পারি শিক্ষার গুরুত্ব কতটা। উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হলে সমাজে সকলের নিকট সম্মানিত হওয়া যায়। শিক্ষার সাথে কর্মসংস্থান বিশেষভাবে সম্পর্কিত।আপনি যদি নিজেকে অনেক দূর নিয়ে যেতে চান,নিজের ক্যারিয়ারকে সমৃদ্ধ করতে চান তাহলে শিক্ষা আপনার জন্য বাধ্যতামূলক। বর্তমান সময়ে যেকোনো সনামধন্য  প্রতিষ্ঠান এ চাকরি করতে হলে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া জরুরি। তাই বলা যায় শিক্ষা আর কর্মসংস্থান একই সুতোয় গাথা।নতুন প্রজন্মের কাছে কর্মসংস্থান ব্যাপারটি খুব চ্যালেঞ্জিং। প্রতিটি সেক্টরেই এই প্রজন্মকে অনেক চ্যালেঞ্জ এর সম্মুখীন হতে হয়।কেও এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সফল হয় আবার কেও ব্যর্থ।

বর্তমান সময়ে শিক্ষার অবস্থা:

বর্তমান সময়ে শিক্ষার মান নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। এই শিক্ষা কি প্রকৃতপক্ষে কোনো কাজে আসছে?আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় কর্মমুখী শিক্ষার চাইতে একাডেমিক শিক্ষার দিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। যার ফলে পড়াশোনা শেষ করার পরেও অনেককেই বেকার থাকতে দেখা যায়। বর্তমান যুগ আধুনিক প্রযুক্তির যুগ। এই সময়ে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে আধুনিক ও প্রযুক্তিগত শিক্ষার দিকে নজর নিতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এই দিক থেকে অনেক পিছিয়ে আছে।ফলে দেশের শিক্ষার্থীরা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও অন্য কোনো দেশে গিয়ে নিজেকে মেলে ধরতে পারে না। বঞ্চিত হয় অনেক কিছু থেকে। আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা অনেকাংশেই একটি বানিজ্যিক রূপ ধারন করেছে। এতে করে শিক্ষার মানের দিক বিবেচনা না করে বানিজ্যিক দিকগুলোই প্রাধান্য পায়। বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীরা অনেক বৈষম্যের শিকার হয়।বঞ্চিত হয় অনেক সুযোগ সুবিধা থেকে।

কর্মসংস্থান এর বর্তমান পরিস্থিতি:

আমাদের দেশে বেকারত্বের হার ব্যাপক। যার মধ্যে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যাই বেশি।কর্মক্ষেত্রের চাইতে প্রার্থী বেশি থাকায় বেকার সংখ্যা বেশি হয়। প্রতিনিয়তই মানুষ চাকরির খোজে শহর কেন্দ্রিক হচ্ছে।যার ফলে প্রতিযোগিতা দিগুণ হারে বেড়েছে। প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এর প্রভাবও লক্ষনীয়। নতুন উদ্যোক্তার অভাবে কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে না। সকলেই সরকারি চাকরির পেছনে ছুটছে।এতে করে প্রতিযোগিতা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। ফলে বেকার সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বর্তমান প্রজন্মের চ্যালেঞ্জ :

কর্মসংস্থান বর্তমান প্রজন্মের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তরুণ  প্রজন্মের কারিগরি দক্ষতার অনেক অভাব রয়েছে। একদিকে কারিগরি দক্ষতার অভাব অন্যদিকে তুমুল প্রতিযোগিতা, দুই মিলিয়ে তরুণ প্রজন্মেকে কর্মসংস্থান তৈরিতে অনেক বেগ পেতে হচ্ছে। বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে বাস্তবিক তেমন মিল খুজে পাওয়া যায় না। যার ফলে পড়াশোনা শেষ করেও কাজের ক্ষেত্রে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। লিঙ্গ বৈষম্যের চ্যালেঞ্জও মোকাবিলা করতে হচ্ছে এই প্রজন্মকে। এছাড়া গ্রামের শিক্ষা এবং শহরের শিক্ষার মধ্যে বিস্তর ফারাক লক্ষ্য করা যায়। ফলে গ্রাম থেকে শহরে আসা শিক্ষার্থীদের নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। সব মিলিয়ে বলা চলে কর্মসংস্থান এর ক্ষেত্রে বর্তমান প্রজন্মকে বেশ চ্যালেঞ্জ এর সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

সমাধানের দিকনির্দেশনা:

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি তা হলো শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার। এই শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন। পড়াশোনার পেছনে একজন শিক্ষার্থীর প্রায় বিশ বছরের মতো সময় লেগে যায়,যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। কর্মকেন্দ্রিক শিক্ষা চালু করা যেতে পারে।পড়াশোনা করা অবস্থায় বিভিন্ন ইন্টার্নশিপ এ সুযোগ এর ব্যবস্থা করতে হবে। একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি দক্ষতার দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। বিভিন্ন স্কিল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের আয়োজন করতে হবে। শুধু চাকরির পেছনে না ছুটে শিক্ষার্থীদেরকে উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য উদ্ভুত করতে হবে। শহরকেন্দ্রিকতা কমাতে হবে। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থাকে এগিয়ে আসতে হবে কর্মসংস্থান এর সমাধান এর জন্য। সর্বোপরি সকলে এগিয়ে আসতে হবে।

একটি শিক্ষিত ও কর্মক্ষম প্রজন্ম গড়ে তুলতে হলে এখন থেকেই পদক্ষেপ নিতে হবে। এই প্রজন্ম এগিয়ে গেলে দেশ এগিয়ে যাবে।দেশের নাম বিশ্বের বুকে তুলে ধরবে এরাই। স্ব-শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে এ জাতিকে। শিক্ষার দিকে যেমন গুরুত্ব দিতে হবে তেমনি গুরুত্ব দিতে হবে কর্মসংস্থান এর দিকে। শিক্ষা ও কর্মসংস্থান এর মাঝে সমতা ধরে রাখতে পারলে নতুন প্রজন্মের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা অনেক সহজ হয়ে যাবে।

এরকম আরো ব্লগ পরতে, ক্লিক করুন

লেখক

পিয়াস মাহমুদ 

ইন্টার্ন, কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট 

YSSE