Illustration of an industrial landscape with factories and smokestacks against a purple background. Bengali text on the right discusses industry opportunities and challenges.

বর্তমান বিশ্বে দিন দিন প্রযুক্তির ব্যবহার ও প্রসার বেড়েই চলছে। প্রতিটি দেশ প্রতিনিয়ত তাদেরকে প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ করে চলছে। নতুন আবিষ্কার ও উদ্ভাবনে একে অপরকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এ পরিবর্তনের নামই চতুর্থ শিল্প বিল্পব। এর মাধ্যমে শুধু প্রযুক্তির উন্নয়নই নয় পাশাপাশি আমাদের জীবন যাপনের ধারারও আমূল পরিবর্তন আসবে। এই শিল্প বিপ্লবের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিক্স, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ইত্যাদি। 

এই পরিবর্তনের যুগ আমাদের জন্য কি কি সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ সামনে নিয়ে আসছে? এগুলো মোকাবেলা করার উপায় কি? এবার এসব বিষয় আলোচনা করা যাক।

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুযোগসমূহ

১. উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি

নতুন উদ্ভাবনী প্রযুক্তির ব্যবহারে বাড়ছে উৎপাদন এবং কমছে খরচ ও সময়। যেকোনো পণ্য তৈরি করা যাচ্ছে খুব সহজেই। পণ্য সরবারাহের ও মজুদের জন্যও আছে ভিন্ন প্রযুক্তির ব্যবহার যা লাভজনক ফলাফল বয়ে আনছে।

২. নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি 

বেকারত্ব হ্রাসে অন্যতম ভূমিকা রাখতে পারে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব। যদিও অনেকেই বলছেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় হারাতে হতে পারে চাকরি,তবে সফটওয়্যার, ওয়েব ডেভেলপিং, ডিজিটাল মার্কেটিং ইত্যাদি বিষয়ে সঠিক দক্ষতা অর্জন করতে পারলে তৈরি হবে বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ। 

৩. উন্নত জীবনযাত্রা

মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হচ্ছে এ যুগে। ছোটো একটি কাজ করতেও যেখানে আগে দূর দূরান্তে যেতে হতো তা এখন ঘরে বিসেই এক ক্লিকে করে ফেলা যাচ্ছে। তাছাড়াও বাজার করা, শপিং করা, বিভিন্ন বিল পরিশোধ সবকিছুই এখন হাতের মুঠোয়।

৪. জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির বিকাশ

দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাতকে আরো শক্তিশালী করা যাবে জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির বিকাশের মাধ্যমে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষিসহ আরও প্রতিটি খাতকে উন্নত করা সম্ভব।

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জসমূহ

১. চাকরির ভবিষ্যৎ 

প্রযুক্তির পরিবর্তন ও নতুন সংযোজন বয়ে আনতে পারে বাড়তি চিন্তা। এ সমস্যার দরুন অনেকেই হারাতে পারেন চাকরি। তাই সময়ের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে হবে এবং সে অনুযায়ী প্রস্তুতি রাখতে হবে। প্রতিনিয়ত নিজেকে নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত থাকতে হবে। তবেই সফল হওয়া সম্ভব।

২. গোপনীয়তা ও তথ্য ঝুঁকি 

তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে ব্যক্তিকে তথ্য ঝুঁকিতে থাকতে হয় সবসময়। বিভিন্ন সাইবার হামলা, তথ্য চুরি বা প্লেজিয়ারিজম, সোশাল মিডিয়ায় ভুয়া খবর প্রচার ইত্যাদি ঘটনা ঘটেই চলছে যা আমাদের জন্য কোনো ভালো কিছু বয়ে আনছে না। তাই এসব বিষয়ে সবার সচেতন থাকতে হবে।

৩. বিভাজন

যারা প্রযুক্তির দক্ষতায় পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত তারা অনেকটা দূরে সরে যেতে পারে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় সামর্থ্যের অভাবে অনেকের আয়ত্তে এসব আসে না। সেখান থেকেই আসলে পিছিয়ে পড়ার শুরু। আমরা উদাহরণ হিসেবে গ্রাম আর শহরের বিভাজন দেখতে পারি।

৪. নৈতিক ও সামাজিক প্রশ্ন

মানুষের যেরকম মূল্যবোধ আছে তা একটি রোবট বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নেই। সে স্বভাবতই সেসব আবেগী সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। জনমানুষের জন্য কি কল্যাণকর হবে তা ভেবে কি সে আদৌ সুদূর ভবিষ্যতে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে?

বাংলাদেশের প্রস্তুতি 

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে সামনে রেখে বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। এখনই সময় এই বিপ্লবে অংশ নিয়ে আমাদেরও এগিয়ে যাওয়ার। গুরুত্বপূর্ণ সব খাতকে ডিজিটালাইজেশন করার এখনই সময়। এজন্য প্রয়োজন তরুণদের অংশগ্রহণ। আমাদের শিক্ষা, প্রযুক্তি ও কৃষিখাতে গবেষণা খুবই কম। তাই গবেষণাভিত্তিক প্লান নিয়ে আগানোই আমাদের জন্য সফলতা নিয়ে আসতে পারবে। একবিংশ শতাব্দীর অন্যতম চালিকাশক্তি হবে গবেষণা। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর সংশ্লিষ্ট খাতে সফলতার প্রধান কৌশলই ছিলো গবেষণা। তাই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে গবেষণা খাতের উন্নয়নের বিকল্প নেই।

আমাদের করণীয় কি?

১. মানবসম্পদ উন্নয়ন করা

একটি প্রজন্মকে যোগ্য ও দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে শিক্ষার বিকল্প নেই। তাই স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গুণগত ও মানসম্মত শিক্ষার কথা ভাবতে হবে। শুধুমাত্র পাঠ্য পুস্তকই নয় বরং ব্যবহারিক জ্ঞানও গড়ে তুলতে হবে। এর মাধ্যমেই দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন সম্ভব।

২. সবার জন্য প্রযুক্তি 

প্রযুক্তিকে সবার হাতের নাগালে আনতে হবে। গ্রাম থেকে শহর প্রতিটি জায়গায়ই সবার সমান সুযোগ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। প্রযুক্তিতে পিছিয়ে পড়া এসময়ে কখনোই গর্ব করার মতো কিছু না। তাই সব স্থানে ইন্টারনেট ও ডিজিটাল সেবা সবার জন্য আরো সহজলভ্য করে তুলতে হবে।

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে সামনে রেখে চলার জন্য কেবল নতুন উদ্ভাবনী শক্তি আর দক্ষতাই নয় তার পাশাপাশি প্রয়োজন একটি সুন্দর পরিকল্পনা আর দূরদর্শীতা। মানবসম্পদকে আরো দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে এখন থেকেই দরকার তার নকশা করা। তবে এই বিপ্লব সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যে তৈরি করতে পারে। তাই তার জন্য সকলকে আরো মানবিক ও নৈতিক হতে হবে। তবেই আমরা আমাদের একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে পারবো।

 

এ ধরনের আরো ব্লগ পড়তে, ক্লিক করুন।

 

লেখক

তামজিদ আহসান চৌধুরী 

ইন্টার্ন, কনটেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট 

YSSE