আচ্ছা আপনি কি মানুষ চিনেন? কখনো কি তাদের দিকে তাকায় তাদের বুঝার চেষ্টা করেছিলেন?কি অদ্ভুত প্রশ্ন মনে হচ্ছে তাই না,কিন্তু প্রশ্নটি একদমিই সেরকম নয়।
‘নক্ষত্রের রাত’ ৯০ দশকের একটি অসাধারণ নাটক,যা প্রথম প্রচার হয় বাংলা টেলিভিশনে। সাহিত্যের জাদুকর হুমায়ূন আহমেদের এক মনস্তাত্ত্বিক নাটক। যেখানে সমাজের একাকিত্ব, অসহায়ত্ব, অবহেলিত, ভিন্নধর্মী মানুষের কথা তুলে ধরা হয়েছে। নাটকটির মধ্যে সমাজের চরম সত্যের ও বাস্তবতার কথা ফুটে উঠেছে। এছাড়া নাটকটিতে দৃশ্যপট ও সংলাপের চেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে চরিত্রের অন্তজগৎ ও অনুভূতি। হুমায়ুন আহমেদ তার চিরচেনা সরল অথচ গভীর ভাষায় চরিত্রগুলোর সংলাপ লিখেছেন।
নাটকের ভাব সম্প্রসারণ
প্রতিটি মানুষের মধ্যে ভিন্ন ধরনের সত্তা বসবাস করে,আমাদের অজান্তেই বা জেনেই আমরা একজন আরেকজনের প্রতি মনে নির্হিত হিংসা-বিদ্বেষ, লালসা, ভালোবাসা, সম্মান, সহানুভূতি, সহমর্মিতা, এইসকল সত্তার বহিঃপ্রকাশ করে থাকি।কিন্তু আমারা কি আধৌ তা সঠিক ও সৎ ভাবে ঠিক জায়গায় প্রকাশ করছি? হুমায়ুন আহমেদের ‘নক্ষত্রের রাত ‘ সমাজের সেসকল মানুষকে নির্দেশ করে যারা নিজেকে চিনতে ও অন্যকে বুঝতে ব্যর্থ।এছাড়া নাটকটি শিখায় মানবিক অস্তিত্বের অপরিহার্য উপাদান। যারা সমাজের মূল ধারার বাহিরে অবস্থান করে, তাদেরও অনুভব আছে, আছে বেঁচে থাকার স্বপ্ন।
নাটকের চরিত্রের বিশ্লেষণ
আসাদুজ্জামান নূর, শমী কায়সার, আবুল হায়াত, শিলা আহমেদ, জাহিদ হাসান, শাওন, যাত্রী আরোও প্রমুখ। নাটকের প্রতিটি চরিত্র অসম্ভব সুন্দর করে অভিনয়ের মাধ্যমে নাটকের কাহানী ফুটিয়ে তুলেছেন যা দর্শকের মনে জায়গা করে নেয়।তবে আমার ব্যক্তিগতভাবে হাসান সাহেব (আসাদুজ্জামান নূর) এবং মনিষা(শমী কায়সার) এই দুটি চরিত্র মারাত্মকভাবে মনে গেথে রয়েছে।এতটা সুপষ্টভাসী ও সাবলীল অভিনয় যেনো নাটকে তাৎপর্যতা বহন করে।
হাসান সাহেব (আসাদুজ্জামান নূর)
চরিত্রটি ছিল নাটকের প্রাণ। তার আচরনে এক ধরনের প্রজ্ঞা,কল্পনা সহজাত অনুভূতি বিদ্যমান।তার ভাবনার গভীরতা দর্শকের হৃদয় স্পর্শ করে। মানুষের জন্য কিছু করার ইচ্ছে,মানুষ নামক বইটি পড়া আর প্রতিনিয়ত জানা,খোলা আকাশের নিচে শুয়ে শুয়ে নক্ষত্র দেখে আর নক্ষত্রের সাথে মানুষের মিলের সন্ধান। জীবন সম্পর্কে তার আলাদা ভাবনা আর সাহিত্যিক কথা যেনো অন্যরকম মাত্রা যুক্ত করেছে নাটকটিতে।
মনিষা (শমী কায়সার)
মনিষা ছিল নাটকে কুরিয়ে পাওয়া পরিবারের ছোট মেয়ে। এই চরম সত্যটি অবলীলায় মেনে নিলেও তার ভেতরের কষ্ট কাউকে বুঝতে দেননি।এই সত্য তার বিয়ে ভেঙ্গে দেয়, তার বাবা-মা মারা যান তবে সে ভেঙ্গে পড়ে না, নিজেকে আরোও শক্ত করে তোলে।মনিষা ছিলেন সকল গুণের সম্পূর্ণ একটি চরিত্র। সংসারী, জ্ঞানী, মহৎ, দৃঢ় এবং অত্যন্ত শান্ত প্রকৃতির মেয়ে।
আবুল হায়াত (মনিষার বাবা)
আবুল হায়াত ‘নক্ষত্রের রাত‘ এ মনীষার বাবার চরিত্রে অভিনয় করেছেন। চরিত্রটি রাগী, নিয়ম কানুনে চলা, ধর্মীয় বিশ্বাসী এবং কিছুটা কঠোর পিতার প্রতিচ্ছবি। এছাড়া পরিবারের কর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন এবং পরিবারের মানুষকে একসাথে রাখা যা মধ্যবিত্ত পরিবারের পিতৃসত্তার বাস্তব ও জীবন্ত প্রতিচ্ছবি তুলে ধরেন।
এছাড়া নাটকের অন্যতম চরিত্র হচ্ছে-পলিন (শিলা আহমেদ), ফুলি(যাত্রী), ময়না(শাওন), দুলভাই চরিত্রে( আব্দুল কাদের) আরোও অনেকেই যাদের ছোট ছোট উপস্থিতি নাটকটিকে একটি বাস্তব পরিবেশ দেয়।
নক্ষত্র বলতে নাটকে বোঝানো হয়েছে ভালো মানুষ-যারা ছিলেন সর্বদা সৎ,অন্যের কষ্ট উপলব্ধি করে,নির্দ্বিধায় অন্যকে সাহায্য করে, অন্যের ভালো কামনা করেন,সমাজের কোন মুখোশধারী নয়। তাদের মত মানুষের মৃত্যুকে নক্ষত্রের নিভে যাওয়াকে নির্দেশ করে।এছাড়াও নাটকের প্রতিটি চরিত্র ছিল একজ্যাক সত্যিকারের নক্ষত্র, তারার মেলায় ঘেরা, কারো সাথে কারো চরিত্রের তুলনা চলে না। হুমায়ূন আহমেদের ‘নক্ষত্রের রাত‘ কেবল শুধু সৃজনশীলতা নয় বরং এটি একটি মানবিক জাগরণ।
এরকম ব্লগ আরো পড়লে,এখানে ক্লিক করুন.
লেখক,
ফারজানা রহমান
ইন্টার্ন, কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট।
YSSE