সিংহাসন কখনো খালি থাকে না। একজন শাসকের মৃত্যুর পর আরেকজন দায়িত্ব গ্রহন করতে হয়। এই নিয়ম টির ব্যাতিক্রম ঘটেনি পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যাক্তিদের ক্ষেত্রেও।
পৃথিবীতে সবচেয়ে দীর্ঘসময় ধরে রাজত্ব করেছেন যুক্তরাজ্যের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ।রাজা ষষ্ঠ জর্জ মারা যাওয়ার পরে ১৯৫২ সালে রানী এলিজাবেথ শাসনকাজ এর দায়িত্ব পান।
গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের ৮ ই সেপ্টেম্বর রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ স্কটল্যান্ডের বালমোরাল ক্যাসেলে মৃত্যুবরণ করেন। এর পরেই সিংহাসনের দায়িত্ব পেয়ে ২০২২ সালের ১০ সেপ্টেম্বর রাজার উপাধি লাভ করেন রানী এলিজাবেথ এর জৈষ্ঠ পুত্র তৃতীয় চার্লস, যিনি ওয়েলস এর সাবেক যুবরাজ।
তৃতীয় চার্লস এর জন্ম ও পারিবারিক জীবনকাল:
রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ও প্রিন্স ফিলিপ দম্পতির জৈষ্ঠ পুত্র চার্লস ফিলিপ আর্থার জর্জ ১৯৪৮ সালের ১৪ ই নভেম্বর লন্ডনের বাকিংহাম প্রাসাদে জন্মগ্রহণ করেন। ৮ বছর বয়সে তাঁকে স্কুলে পাঠানো হয়। পরবর্তী তে নানা ছড়াই উৎরাই পার করে ক্যামব্রিজ এর ট্রিনিটি কলেজ থেকে প্রথমে প্রত্নতাত্ত্বিক এবং পরে নৃ বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশুনে করে রাজবংশের প্রথম ডিগ্রী ধারী উত্তরাধিকার হিসেবে পড়াশুনা শেষ করেন। ১৯৬৯ সালে কারনেশন ক্যাসেলে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাকে ওয়েলস এর প্রিন্স হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়।
পারিবারিক নিয়ম অনুযায়ী তখন সামরিক বাহিনীতে যোগ করতে হতো। চার্লস প্রথমে বিমান বাহিনী তে যোগদান করলেও পরবর্তীতে নৌবাহিনীতে যোগদান করেন এবং সাফল্যের সহিত দায়িত্ব পালন করতে থাকেন।
রাজা চার্লস সুদর্শন চেহারার অধিকারী থাকায় অনেক নারীদের সাথে তার সম্পর্কের কথা জানা যায়। বর্তমান কুইন কন্সট ক্যামিলার সাথেও তখন তার সম্পর্ক ছিলো বলে জানা গিয়েছে।কিন্তু ১৯৮১ সালে জানা যায় চার্লস লেডি ডায়ানার সাথে বাগদান সম্পন্ন করেন এবং পরবর্তী তে তাদের বিয়ে ও হয়। চার্লস এবং ডায়ানার দুইজন পুত্র সন্তান রয়েছে।
পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে এই যুগল এর বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। ১৯৯৭ সালে ডায়ানা গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যায় এবং ২০০৫ সালে রাজা চার্লস বর্তমান কুইন কন্সট ক্যামিলা কে বিয়ে করেন।
রাজা তৃতীয় চার্লস এর অভিষেক:
রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ এর মৃত্যুর দুইদিন পরে অর্থাৎ ২০২২ সালের ১০ সেপ্টেম্বর লন্ডনের সেন্ট জেমস প্যালেসে এক আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে তিনি রাজার দায়িত্ব পালন করেন।
রাজা তৃতীয় চার্লস ই সবচেয়ে বেশি বয়সে সিংহাসনে আরোহণ করেছেন। পরবর্তীতে ২০২৩ সালের ৫ই মে লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার এবি তে এক জাঁকজমকপুর্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রাজা তৃতীয় চার্লস এর অভিষেক সম্পন্ন হয়।
এই সময় তাকে রাজমুকুট পরানো হয়েছিলো।
রাজার অভিষেক এর পরপর ই তাঁর স্ত্রী ক্যামিলা কে রানীর মুকুট পরানো হয়।
এই সময় ১০০ টি দেশের দেশ প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।
অভিষেক এর সময় রাজার পোশাক এবং মুকুট নিয়ে সারা বিশ্ব জুড়ে এক জল্পনা কল্পনার শুরু হয়। জানা যায় রাজার মুকুট টি ৩১০ বছরের পুরোনো। ৩০ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যের মুকুট টিতে খচিত রয়েছে ২২ ক্যারেট স্বর্ণ। এই মুকুটটির ওজন প্রায় সোয়া দুই কেজি। এছাড়াও রয়েছে প্রায় ৪৪৪ টির মতো রত্ন।
এছাড়াও রাজার পোশাকটি প্রায় ২০০ বছরের পুরনো। এই পোশাকের ওজন প্রায় ২-৩ কেজি।
১৯৫২ সালের পর থেকে এই প্রথম রাজার অভিষেক দেখলো যুক্তরাজ্যবাসী। বংশ পরম্পরায় ব্যবহৃত পোশাক এবং মুকুট এর সাথে জড়িয়ে রয়েছে নিজেদের পূর্বপুরুষদের সম্মান এবং ঐতিহ্যের কাহিনী।খাবারের আয়োজন থেকে শুরু করে কোনো কিছুর ই কমতি ছিলো না এই অভিষেকে। তবে রাজা তৃতীয় চার্লস এর স্ত্রী ক্যামিলা কে এখনো রানী হিসেবে মেনে নিতে পারেননি অনেক জনগণ। জনগনের মন প্রান জুড়ে রয়েছে প্রিন্সেস ডায়ানা।
অভিষেক আয়োজনে কমতি রাখেন নি রাজা তৃতীয় চার্লস তবে জনগনের মন কতটুকু জুগিয়ে শাসনকাজ চালাতে পারেন সেটি ই দেখার অপেক্ষায় বিশ্ববাসী।
Writer,
Marjahan Akter
Intern at Content Writing Department,
YSSE