BD-1 অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ বাংলাদেশের প্রথম ভূস্থির যোগাযোগ ও সম্প্রচার উপগ্রহ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর নামে এই স্যাটেলাইট এর নামকরন করা হয়।
আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগে ১৯৫৭ সালের ৪ অক্টোবর পুরো বিশ্ব কে অবাক করে দিয়ে Soviet Union বিশ্বের প্রথম ক্রিত্তিম স্যাটেলাইট Sputnik ১ পৃথিবীর কক্ষপথে উৎক্ষেপণ করে। সেই থেকে শুরু হয় এই বিশ্বের স্যাটেলাইট এর যাত্রা এবং আজ পর্যন্ত হাজার হাজার স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হয়েছে যাদের মধ্যে BD-1 একটি ।
বিশ্বের ৫৭ তম দেশ হিসেবে ২০১৮ সালের বালাদেশ সময় ১২ মে ২ঃ১৪ am এ নিক্ষেপ করা হয়। এর গ্রাউন্ড স্টেশন গাজীপুরের তেলিপাড়া এলাকায় পাঁচ একর জমির ওপর অবস্থিত। এটিকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়ই বাংলাদেশের গাজীপুর থেকে। কৃত্রিম উপগ্রহটি উৎক্ষেপণ করার পর, বাংলাদেশ ১২ মে ২০১৮ তারিখে এটি থেকে পরীক্ষামূলক সংকেত পেতে শুরু করে।
বাংলাদেশ বহুবছর বহির্বিশ্বের স্যাটেলাইট এর উপর নির্ভরশীল ছিল এই অবস্থা থেকে নিজেদের বের করে নিজস্ব স্যাটেলাইট তৈরির উদ্দেশ্যে ২০০৮ সালে বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি কৃত্রিম উপগ্রহ নির্মাণ বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করে। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে ক্রিত্তিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণের বিষয়টি যুক্ত করা হয়। উপগ্রহ এর নকশা তৈরির জন্য ২০১২ সালের মার্চে প্রকল্পের মূল পরামর্শক হিসেবে ‘স্পেস পার্টনারশিপ ইন্টারন্যাশনাল’ কে নিয়োগ দেওয়া হয় এবং স্যাটেলাইট সিস্টেম কিনতে “থ্যালাস অ্যালেনিয়া” স্পেসের সঙ্গে এক হাজার ৯৫১ কোটি ৭৫ লাখ ৩৪ হাজার টাকার চুক্তি করে বিটিআরসি। ২০১৫ সালে বিটিআরসি রাশিয়ার উপগ্রহ কোম্পানি ইন্টারস্পুটনিকের কাছ থেকে কক্ষপথ (অরবিটাল স্লট) কেনার আনুষ্ঠানিক চুক্তি করে।
এই স্যাটেলাইট টির নকশা ও নির্মাণে কাজ করে ফ্রান্স এর কোম্পানি “থ্যালিস অ্যালেনিয়া স্পেস” এবং স্যাটেলাইট টির আয়ু ধরা হয়েছে ১৫ বছর। ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যক্তিমালিকানাধীন মহাকাশযান সংস্থা স্পেস এক্স পক্ষ থেকে বিডি-১ কে উৎক্ষেপণ করা হয়।
১১৯.১° ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমার ভূস্থির স্লটে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট টি বানাতে খরচ হয়েছে ৩০০০ কোটী। ২০১২ সালের একটি গবেষণাই দেখা যায় এই প্রকল্প টি তার ব্রেক ইভেন এ পৌঁছাতে সময় নিবে ৭ বছর।
বঙ্গবন্ধু-১ কৃত্রিম উপগ্রহটি সম্পূর্ণ চালু হওয়ার পর বাংলাদেশের ভূ-কেন্দ্র থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এই জন্য গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর ও রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায় ভূকেন্দ্র তৈরি করা হয়। জয়দেবপুরের ভূ-কেন্দ্রটি হল মূল স্টেশন। আর বেতবুনিয়ায় স্টেশনটি দ্বিতীয় মাধ্যম ব্যকআপ হিসেবে রাখা হয়। এছাড়া ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনে দুটি ভূ-উপগ্রহ উপকেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের উন্নয়ন এর প্রমাণ হিসেবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট বাংলাদেশের পতাকার লাল সবুজ নকশা বহন করছে যার উপর ইংরেজিতে লেখা রয়েছে বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু ১
এবং সাথে রয়েছে বাংলাদেশ সরকারের একটি মনোগ্রামও।
পূর্বে বাংলাদেশ যেমন অন্য দেশের স্যাটেলাইট ব্যাবহার করতো ঠিক তেমনি বর্তমানে বিশ্বের বহু দেশ বাংলাদেশের স্যাটেলাইট এর ট্রান্সপন্ডার ভাড়া করে ব্যবহার করছে।
এদের মধ্যায়ে উলেক্ষ দেশ হচ্ছে হন্ডুরাস, তুরস্ক, ফিলিপাইন, ঘানা, ক্যামেরুন, দক্ষিণ আফ্রিকা।
দেশের মানুষের জীবন সহজ করে তোলায় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট এর অবদান অপরিসীম। পূর্বে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল এর মানুষ অনেক সুযোগ সুবিধা থেকে ছিল বঞ্চিত। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট ও ব্যাংকিং সেবা, টেলিমেডিসিন এবং প্রত্যন্ত শিক্ষার প্রসারেও ব্যবহৃত হচ্ছে। আবার বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট চ্যানেলের সক্ষমতা বিক্রি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হবে। আবার দেশের টিভি চ্যানেলগুলো যদি এই স্যাটেলাইটের সক্ষমতা কেনে তবে দেশের টাকা দেশেই থাকবে। এছাড়াও বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় মোবাইল নেটওয়ার্ক অচল হয়ে পড়ে। তখন এর মাধ্যমে দুর্গত এলাকায় যোগাযোগব্যবস্থা চালু রাখা সম্ভব হবে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট সফল ভাবে উৎক্ষেপণ ও পরিচালনার পর বাংলাদেশ তার দ্বিতীয় স্যাটেলাইট “বনবন্ধু স্যাটেলাইট -২” প্রেরনের পথে যাত্রা শুরু করেছে। সরকারী সূত্র এ জানা যায় বিডি-২ ২০২৩ সালের er মধ্যায়ে উৎক্ষেপণ করা হবে। এটি একটি Low Earth Orbit (LOW) পর্যবেক্ষণ স্যাটেলাইট।
স্বাধীনতার ৫২ বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ উন্নতির পথে অনেক দুর এগিয়ে গিয়েছে। ঐ দিন বেশি দুরে নয় যখন বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত দেশে পরিণত হবে।
Writer,
Samiha Jahan
Content writing department, YSSE