গল্প শুনতে কার না ভালো লাগে! আর কবিতা আবৃত্তি যেন সেই ছোটবেলার স্মৃতি মনে করিয়ে দেয় এই কবিতা আমাদের বড় হতেও শেখায় যান্ত্রিক জীবনের কর্মব্যস্ততাকে পাশ কাটিয়ে অনেকেই হয়তো শব্দের মায়ায় হারিয়ে যেতে অনলাইনে আবৃত্তি বা গল্প শোনেন আর এই ক্ষণিক অবসরকে আরেকটু প্রাণবন্ত করতে ইসরাত জাহান ইকরা মতো বাচিকশিল্পীরা নিজের সেরাটা দিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন সাধারণত শ্রোতার কাছে পৌঁছাতে একজন আবৃত্তিশিল্পীর বেশ সময় লাগলেও  IQRA – A Storyteller খুব অল্প সময়ে জনপ্রিয়তা লাভ করে আজকে সেই জনপ্রিয় কন্টেন্ট নির্মাতা ইসরাত জাহান ইকরা, YSSE এর সৌজন্য সাক্ষাৎকারে আমাদের সাথে যুক্ত আছেন আজ আমরা তার সম্পর্কে তার কাজের ব্যাপারে বিস্তারিত জানবো। 

  • প্রথমেই আপনার সম্পর্কে জানতে চাইছি আপনার পরিচয়, বেড়ে উঠা, পড়াশোনা বর্তমানে কী করছেন?

আমার পুরো নাম ইসরাত জাহান ইকরা এখন পড়াশুনা করছি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষে আমার বেড়ে উঠা টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলায় কলেজ ছিলো ঘাটাইল ক্যান্টমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ সেখান থেকে বের হয়ে এখন রাজশাহীতে থাকছি পড়াশোনার পাশাপাশি কবিতা আবৃত্তি, স্টোরিটেলিং এর চেষ্টা করছি অনেকেই ইকরা স্টোরিটেলার নামেই চিনেন 

 

  • কবিতা পাঠের আইডিয়াটা আপনার কাছে কীভাবে এসেছে?

আমরা ছোটবেলায় সবাই কবিতা আবৃত্তি করি শখের বসে ছোটবেলাতে অনেকেই আমরা বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছি কেউ আবৃতিতে, কেউ চিত্রাংকন, কেউ বিতর্কে ইত্যাদি তো সেভাবেই আবৃত্তিটা শুরু আসলে আবৃত্তিতে আসা সবচেয়ে সহজ কেননা গানের জন্য প্রশিক্ষণ লাগে, নাচের জন্য লাগে কিন্তু আবৃত্তির ক্ষেত্রে সেরকম কোন প্রশিক্ষণ লাগে না 

কবিতার সাথে সখ্যতা আমার ছোটবেলা থেকেই আমি দেখলাম কি, যে শব্দ আমাকে টানে কবিতার প্রতি একধরনের ভালোলাগা কাজ করে এবং আমি আমার ক্লাসমেটদের থেকে ভালো করি মানে কবিতা পাঠ এবং ভয়েস আর্ট যেটাকে বলে আমি নাচ করতাম, গান পারতাম, ছবি আঁকতাম, কিন্তু সেগুলোর তুলনায় আমি কবিতা আবৃত্তিতে ভালো করতাম দেখলাম শব্দের সাথে অনুভূতি মিশিয়ে একদম ভিতরে ঢুকে যেতে পারছি আমি  এভাবেই ছোটবেলার ক্লাস ওয়ান থেকে ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা এছাড়াও জেলা পর্যায়ে জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা, অনেক সার্টিফিকেটও আছে আমার সেসব থেকে ধীরে ধীরে অনুপ্রাণিত হই।

 

  • ‌IQRA – A Storyteller এর এই পর্যায়ে আসার পিছনের গল্পটা সম্পর্কে জানতে চাইছি

অনলাইনে আসা হয়েছে করোনার সময়। খেয়াল করলে দেখবেন অনেকেই সে সময় কন্টেন্ট ক্রিয়েশনের দিকে ঝুঁকে পড়ে ওই সময়টাতে একদিকে ভার্সিটি অফ, আমি তখন নতুন ভার্সিটিতে, ক্লাস ছিল না, প্রচুর অবসর সময় বাসায় বসে বসে গল্পপাঠ বা কবিতার ভয়েস রেকর্ড করে বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে ছাড়তাম। তখন অনলাইনে কন্টেন্ট বানাতেন এরকম অনেকেই ছিলেন বিশেষত পশ্চিমবঙ্গে প্রথম থেকেই এটা আমার জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, ব্যাপারটা এমন ছিল না প্রথমে ভেবেছিলাম দুই একটা করে করবো, শখকিন্তু না, দেখলাম যে এটা আসলেই আমার ভালোলাগার জায়গা এটা কন্টিনিউ করতে হবে তো ধীরে ধীরে বিভিন্ন গ্রুপে আপলোড করা, এরপর নিজের একটা ফেসবুক পেইজ খুলা, এভাবে আস্তে আস্তে এটা কন্টিনিউ করলাম 

 

  • আপনার ভিডিওগুলোর থাম্বনেইল, উপস্থাপনা এবং ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক সব কিছুই বেশ চমৎকার এবং গুছানো আপনার সৃজনশীলতার দীর্ঘ প্রক্রিয়াটি নিয়ে আমাদেরকে একটু ধারণা দিন এই ব্যপারটায় আপনাকে টেকনোলজিকাল সাপোর্ট দেওয়ার মত কারা আছেন?

আমি মূলত চেষ্টা করি, কবিতার পাশাপাশি ফেসবুকেও অনেক সমসাময়িক লেখকের কোনো জীবনঘনিষ্ঠ নিবন্ধ পছন্দ হলে; যদি মনে হয় যে এটা নিয়ে আমি কাজ করতে পারবো, তখন সেটা টুকে রাখি কেননা খন তো আগের মতো সেই অবসর সময় নেই যে সাথে সাথে সব কিছু রেডি করে বসে পরলাম ক্লাস, পড়াশুনা ইত্যাদির কারণে এখন আসলে সেসব জমিয়ে রাখি তো ছুটির দিনে, সবথেকে যেটা ভালো লাগে সেটা নিয়েই ভিডিও শ্যুট করি।

থাম্বনেইল বানানো, এডিটিং এসবকিছু আমি নিজেই করি এখন ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের ক্ষেত্রে সবসময়ই সতর্ক থাকতে হয় আমি একটু ক্লাসিক্যাল বা সেকেলে ধরনের মিউজিক পছন্দ করি সেগুলোর মধ্যে যেটাই ভালো লাগে সেটা নিজের কালেকশনে রাখার চেষ্টা করি যেমন একটু আগে, আব্বু ফেসবুকে ভিডিও দেখছিলেন একটা গানের টুংটাং শুনে আমি দৌড়ে গেছি সেখান থেকে নাম দেখে আসলাম তো এরকমই, সবসময় চোখ কান খোলা রাখতে হয় আমার বিশাল কালেকশন থেকে টুকে টুকে ম্যাচ করি যে কোনগুলোর সাথে কোনগুলো ভালো লাগছে এমনও আছে কোনো কোনো ভিডিওর সাথে আমি চার পাঁচটা মিউজিক এড করে এডিট করে রেখেছি। ফ্রেন্ডদের শুনাই একটা ভিডিও ছাড়ার আগে আমি নিজেই ভিডিও টা কমপক্ষে ৩০ থেকে ৪০ বার শুনি অর্থাৎ একটা ভিডিও ছোট হতে পারে, তবে এর পেছনে গল্পটা বেশ বড় 

 

  • আপনাকে কোন কোন দক্ষতা অর্জন করতে হয়েছে? এই কাজে কী কী গুণ থাকা দরকার?

এটা মূলত YouTube দেখে দেখে শেখা প্রথম কথা হচ্ছে আমাকে ভিডিও এডিট করতেই হবে আমি কারোর কাছে শিখিনি বা কোনো কোর্স করিনি। এখন তো ইউটিউবে সব আছে। আমার মনে আছে, প্রথমে ইন্সটল করলাম KineMaster তখন তো কাইনমাস্টার দিয়ে অতটা ভিডিও এডিট করতে পারতাম না চলে গেলাম ইউটিউবে, সেখানে সার্চ করলাম যে কাইনমাস্টার দিয়ে কিভাবে ভিডিও এডিট করা যায় এভাবেই শুরু 

তারপর বিভিন্ন টেক ভিডিও দেখতামকিভাবে ভয়েস এডিট করতে হয় ইত্যাদি আসলে আপনার যদি আগ্রহ থাকে তাহলে আপনি একটু চেষ্টা করলেই পেরে যাবেন। আর কাজ করতে করতে আমার এখন প্রায় সাড়ে তিন বছরের অভিজ্ঞতা, একটা দারুণ স্পিড চলে এসেছে। এখন যেমন Capcut দিয়ে করছি, এটারও কোর্স করিনি আসলে ইচ্ছাশক্তিটা হচ্ছে মূল কথা

 

  • আপনার এই দীর্ঘ জার্নিতে সফলতা বা বিশেষ ভালোলাগার দুএকটি মূহুর্ত আমাদের সাথে যদি শেয়ার করতেন

আচ্ছা শুরু থেকেই বলি, যারা কন্টেন্ট ক্রিয়েটর আছেন তাদের প্রথম যে ভালোলাগাটা কাজ করে তা হল অনেক মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়া  আমার মনে আছে যে আমি সময় গুণতাম, অপেক্ষা করতাম যে আজকে একটা ভিডিও পোস্ট করেছি , কবে সেটা হাজার লাইক হিট করবে তো এভাবেই এক বছর কাজ করার পর আশা ছেড়ে দিয়েছি যে আমার হয়ত আর কোনোদিন এক হাজার লাইক রিচ করবে না তো ২০২১ সালের আগস্ট মাসে একদিন, একটি ভিডিও দিনভর এডিট করে আপলোড করেছি একটু ফ্রেশ হচ্ছি হঠাৎ ফোনের উপর ফোন আসছে। একটা ফ্রেন্ড ফোন দিচ্ছে। বললো একটা ঘটনা ঘটছে, তাড়াতাড়ি ফেসবুকে আসতে। আমার মনে আছে কয়েকজন ফ্রেন্ড মিলে ভিডিও কলে ছিলাম।  দেখলাম যে ঝড়ের বেগে লাইক পরছে আমার তো টার্গেট ছিল হাজারের দুই মিনিটের মধ্যে হাজার, এরপর ., এভাবে তিন মিনিটের মধ্যে হাজার লাইক ! ওটা ছিল আমার প্রথম ভিডিও যেটা অনেক মানুষের কাছে পৌঁছেছে এখন পর্যন্ত ওটা তিন মিলিয়ন মানুষের কাছে পৌঁছেছে তবে প্রথম কয়েক মিনিটের ওই মুহূর্তটাকে আমি কোনো কিছুর সাথে তুলনা করতে পারব না। মানে ওটা অন্যরকম ছিল। এটা ছিল আমার যাকে বলে “প্রথম পাওয়া”

মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়া একটা বড় প্রাপ্তি প্রথম আলোস্বপ্ন নিয়েম্যাগাজিনটি আমি ছোটবেলা থেকে পড়ে পড়ে বড় হয়েছি সেখানে অনেক মানুষের স্বপ্ন ; যাদেরকে ফলো করতাম তাদেরকে নিয়ে ফিচার হতো তো আমি দিন ক্লাস করে, বাসায় এসে দেখলাম অনেকে ফোন দিচ্ছে কিছুদিন আগে যদিও ইন্টারভিউ হয়েছিলো তবে আমি জানতাম না এটা প্রথম আলো থেকে ভেবেছিলাম কোনো অনলাইন নিউজ পোর্টাল থেকে হয়ত দেশের একটি জাতীয় দৈনিকে যখন নিজেকে দেখলাম, তাও প্রিন্টেড! তখন আসলে ভালোলাগা টা আরোও অনেক বেশি ছিল 

 

  • আবৃত্তি বা গল্পপাঠে অনেক ধরনের জনরা আছে  আপনি কোনটি নিয়ে কাজ করতে বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করেন? কোনো ফিউচার প্রজেক্ট আছে কি যা নিয়ে আপনি বেশ আগ্রহী?

আপনি দেখবেন ইংলিশে অনেক সুন্দর সুন্দর কবিতা পাওয়া যায় তারা সব সময় যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলেছেন আমাদের বাংলা সাহিত্যেও অনেক সুন্দর সুন্দর কবিতা আছে সেসব নিয়ে খুব ভালো মানের কন্টেন্ট ইদানিং তৈরি হচ্ছে কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের শিল্পীরা যেভাবে ভালো ভালো কবিতাকে প্রতিনিধিত্ব করে চলেছেন, ঐ তুলনায় বাংলাদেশে ব্যাপারটি এখনো প্রতিষ্ঠিত নয়। আর যারা খুব প্রতিষ্ঠিত শিল্পী আছেন তারা বেশিরভাগই অনলাইন বিমুখ তারা তাদের জায়গা থেকে সেরাটা দিচ্ছেন, তবে আমি মনে করি বর্তমানে মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়ার মূল মাধ্যম হচ্ছে অনলাইন প্লাটফর্মগুলো। আমি চাই কবিতার শিল্পীরা যেন আরো বেশি এক্টিভ হোন। সেই জায়গা থেকে আমার ইচ্ছা আগ্রহ জীবনানন্দ দাশ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মত কবিদের গভীর জীবনবোধের যে কবিতাগুলো আছে সেসব আরো বেশি বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া আমি এখনো শুরু করিনি তবে নিজেকে প্রস্তুত করছি  

আমার স্টোরিটেলিং পছন্দ কবিতার ভাবগুলো একটু গম্ভীর তো, সবাই গ্রহণ করতে চান না সেদিক থেকে স্টোরিটেলিং একদম তৃণমূল পর্যায়ের মানুষও রিলেট করতে পারেন জীবনের বোধকে গল্পের মাধ্যমে অনেক সহজে ছড়িয়ে দেয়া যায় তাই স্টোরিটেলিং কন্টিনিউ করতে চাই। পাশাপাশি কবিতাকে একটু আর্টিস্টিক্যালি পরিবেশন করতে চাই যাতে সেটি গানের মত মানুষের সাথে রিলেটেড হয়

 

  • বর্তমানে অনলাইনে যথেষ্ট প্রতিযোগিতা রয়েছে, তো এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য আপনি কি পন্থা অবলম্বন করেছেন?

আমি অনেকের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি তবে আমরা যতই শিখি না কেন আমাদের প্রত্যেকেরই একটা নিজস্ব স্বত্তা আছে স্টোরিটেলিংয়ের একটা নিজস্ব স্টাইল আছে সবার কাছ থেকে শিখলেও আমি নিজের মতো করে আমার কথা উপস্থাপনা করার চেষ্টা করি। কারন আমরা যদি শুধু অন্যের কপি করি তাহলে কখনোই মৌলিক কিছু তৈরি হবে না 

ধরুন জীবনানন্দ দাশের একটি কবিতা, আমি সেই কবিতার প্রতিটি লাইনকে নিজের মতো করে অনুভব করি, আমার নিজস্ব জীবন বোধ দিয়ে আমার ভেতরে যে বিশাল অনুভব আছে সেটা যেন সবাইকে আমার মত করে বোঝাতে চাই তার জন্য আমি যেভাবে শব্দগুলোকে অনুভব করছি ঠিক সেভাবেই শব্দগুলোকে অন্যদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে 

এখন আমি একটু কম কম্পিটিশনে বিশ্বাসী। একটা জিনিস কি যে আরো যারা কন্টেন্ট বানান, যারা মিমার বা যারা এডুকেশনাল ভিডিও বানান, তাদের থেকে আমি নিজেকে একটু আলাদা করব কারণ আমি জীবনবোধের গল্প বলি আর আমি নিজে যদি কম্পিটিশনের মধ্যে থাকি তাহলে আমিও সবাইকে কম্পিটিশনের মধ্যেই ঠেলে দিব। রেষারেষি কম করে কেউ কোনো ভালো কাজ করলে তাকে অ্যাপ্রিশিয়েট করা উচিত এরকমটা না হলে একটা অসুস্থ কম্পিটিশন তৈরি হয়ে যাবে আমি এই জিনিসটা থেকে বের হয়ে আসছি এবং চাই সবাই সুস্থ চিন্তা করুক, পজিটিভ চিন্তা করুক কাজ করে যাওয়াটাই মূলকথা 

 

  • আপনি কি ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছেন এবং কীভাবে কাটিয়ে উঠেছেন?

অন্যান্য কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের কথা জানিনা, তবে আমার মত যারা মধ্যবিত্ত ফ্যামিলি থেকে উঠে আসে তাদের কাছে নিজের স্বপ্নটাকে এগিয়ে রাখা একটি চ্যালেঞ্জ বাসায় অনুকূল পরিবেশ না পাওয়ার একটা ব্যাপার থেকে যায়। অনেক একা লাগবে নিজেকে। আমি আমার চলার পথে খুব কম মানুষের কাছ থেকে উৎসাহ পেয়েছি। আশেপাশে থেকে কি করছিস এসব একটা ব্যাপার থেকেই যায়, যতক্ষণ না পর্যন্ত আপনি সাফল্যের দেখা পান কেউ আপনাকে সাহায্য করবে না 

আমরা এখন একটা রেনেসাঁসের সময়ে আছি এখন আসলে ইউটিউবাররা তৈরি হচ্ছে। ১০ বছর পরে যেটা ভিন্ন থাকবে, কিন্তু বর্তমানে তৃণমূল পর্যায়ে কেউ ক্যামেরা নিয়ে শুট করছে, এই দৃশ্য অতটা গ্রহণযোগ্যতা পায় না।

প্রথম এক-দেড় বছরে অর্থনৈতিক কোন সফলতা তো ছিলই না বরং অর্থ শ্রম ও সময়ের ইনভেস্টমেন্ট। সবকিছু মেনে নিয়ে আমি কাজ করে যাচ্ছিলাম আমি চাই বাংলা ভাষার কবিতার ক্ষেত্রে আমার একটি নাম থেকে যাবে নিজের নাম করার থেকেও আমার অনুভবকে অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার যে চিন্তা এটার পেছনে মূলমন্ত্র ছিল লেগে থাকা। আমি কখনো ভাবি নি যে আমি এত অল্প সময় দেড় বছরে নিজের একটা পরিচয় তৈরি করতে পারবোযারা আমার ভিডিও দেখেন, আমাকে পছন্দ করেন, আমার ফলোয়াররা, এরাই আমার ইন্সপিরেশন। 

 

  • আপনার কাজ বেশ সময়সাপেক্ষ, কনসেস্টেন্সি বজায় রাখার ব্যপারে কিভাবে পাড়াশোনা  কাজ দুটোই সমান তালে সামলান?

আপনি পড়াশোনা করলে দেখা যাবে আপনার মা এক কাপ চা এগিয়ে দিচ্ছেন কিন্তু যখন আপনি কন্টেন্ট বানানোর বিভিন্ন সরঞ্জাম নিয়ে বসে থাকবেন তখন আপনার পাশে কেউ থাকবে না তিন মাস আগেও আমি অনেক চিন্তিত ছিলাম যে আমি আমার পড়াশোনার চেয়ে বেশি সময় কনটেন্ট ক্রিয়েশনে দিচ্ছি আমার ফিউচার কি! এরকম দ্বন্দ্বে মাঝে মাঝেই পড়তে হয় যেহেতু পড়াশোনাটাও একটা বিশাল ভালোবাসার জায়গা। মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তানদের ক্ষেত্রে ব্যালেন্স করা একটি প্রতিবন্ধকতার মতই

কনটেন্ট ক্রিয়েশন বা কবিতা আবৃত্তি চর্চার জায়গা এখানে খুব বেশি কনসিসটেন্ট থাকতে হয় যারা সপ্তাহে একটি, দুটি, তিনটি বা তারও বেশি ভিডিও আপলোড দেন তাদের মূল্যায়নটা তত বেশি হয় একদিকে পড়াশোনার এত চাপ এবং অন্যদিকে দৈনন্দিন জীবনের চাপ আছে আর আমার তো সব কাজ নিজে নিজে করতে হয়, আমাদের তো কোনো কোম্পানি নেই তাই কন্টেন্ট বানাতেও প্রচুর সময় লাগেলিখে রাখা, শুট করা ইত্যাদি ; সবকিছু মিলিয়ে কখনো কখনো একটাকে ছাড়তে হবে এরকম একটা সিচুয়েশন তৈরি হয়

পড়াশোনার ক্ষেত্রে নিজের একটি স্বপ্ন রয়েছে, সেটাকে পাশে রেখে একটা বিশাল পরিমাণ সময় অন্য একটি ক্ষেত্রে ইনভেস্ট করা একটা সাহসিকতার পরিচয় আসলে জীবন তো এত কন্সিস্ট্যান্ট থাকে না চড়াইউতরাই থাকবেই তবে যেহেতু সুযোগটা পেয়েছি, আমি সহজে তা হাতছাড়া করব না কারণ এই সৌভাগ্য সবার হয় না তাই দাঁতে দাঁত চেপে সব কিছু ব্যালেন্স করার চেষ্টা করে যাই

 

  • কখনোও কোনো কন্টেন্ট নিয়ে সমালোচিত হয়েছেন কি? দর্শকদের ক্রিটিসিজম কিভাবে হ্যান্ডেল করেন?

যারা আসলে মাইকটা হাতে তুলে নেন তারা অনেক বড় একটা শক্তি রাখেন আপনি কন্টেন্ট বানাবেন, সেখানে আপনার গালি খাওয়ার মেন্টালিটি রাখতে হবে আপনাকে মাথায় রাখতে হবে যে অনেকেরই আপনার কন্টেন্ট পছন্দ হবে না, তারা ক্রিটিসাইজ করবে আমার ভাগ্য ভালো, আমি এখনও তেমন কোনো কিছুর সম্মুখীন হই নি।

তবে কিছু কটাক্ষ আমিও ফেস করি। মাঝে মাঝে অনেকের কমেন্ট আমার পছন্দ হয় না ; কেউ চোখ নিয়ে গালি দিয়ে যাচ্ছে, কেউ দাঁত নিয়ে! এরকম কমেন্ট থাকবে ওগুলোকে ইগ্নোর করতে হবে প্রথম দিকে এগুলোকে খারাপ লাগতো, এখন আসলে সেরকম খারাপ লাগে না

 

  • আপনার কন্টেন্টগুলো বিনোদনমূলক তো বটেই তবে এর পাশাপাশি পজিটিভিটি স্প্রেড করা, সোশাল ওয়েলফেয়ার নারীদের কেন্দ্র করে কোনো স্পেশাল কন্টেন্ট বানানোর ইচ্ছা আছে কি না সোশাল ইস্যু নিয়েও কোনো আলাদা কন্টেন্ট পাবো কি?

হ্যাঁ সাহিত্য আসলে সমাজের দর্পণ আর আমি সাহিত্যেরই ক্ষুদ্র একটি অংশের প্রতিনিধিত্ব করছি আমি যে গল্পগুলো পড়ি সেখানে সামাজিক যেকোনো অবস্থাই  উঠে আসে। সেসবের মাধ্যমেই সোশ্যাল জাস্টিস নিয়ে কথা বলি। এছাড়াও আমি ব্যক্তিগতভাবে ৮-৯ মাস আগে মানসিক স্বাস্থ্যর উপর কয়েকটি ভিডিও বানিয়েছিলাম। এছাড়াও নারীর ক্ষমতায়ন এর মত বিষয়গুলো বিভিন্ন গল্পের মাধ্যমে উঠে আসে হয়তো কখনো সরাসরি বলার সুযোগ হয় তবে আমি আমার গল্প বা কবিতার আলোকে বলে যেতে চাই।

 

  • আপনার কাজের মূলমন্ত্র কী? কনটেন্ট ক্রিয়েটিংকে পেশা হিসেবে নিতে চান কিনা?

আমি আসলে কতদিন বাঁচবো তা আমি জানিনা আমরা খুব অল্প সময় বেঁচে থাকি এখন আমি জীবন থেকে যা যা শিখছি, আমার যে জীবন বোধ, আমি যা আয়ত্ত করছি, সেইটা আমি সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে চাই আমার নিজের মতো করে। যেটা কেউ লেখনির মাধ্যমে দিয়ে যান, কেউ সিনেমার মাধ্যমে দিয়ে যান। আমি আসলে গল্প বলা, কবিতা আবৃত্তি এসবের মাধ্যমে আমার জীবনের বোধটাকে রেখে যেতে চাই এটাই আবার মূলমন্ত্র

আমি হয়তো কন্টেন্ট ক্রিয়েটিং এর সাথে অন্য কিছুকে পেশা হিসেবে নিতে পারি যেহেতু আমি আমার জীবনবোধকে রেখে যেতে চাই, তাই কন্টেন্ট ক্রিয়েটিংটা বা আমি যে গল্প বলছি, কবিতা পড়ছি, সেটা আমার সাথে সব সময় থেকে যাবে বলতে পারেন এটিই আমার মূল পেশা। এর পাশাপাশি অন্যান্য প্রফেশনেও যুক্ত হতে পারি সামনে।

 

  • যেসকল শিল্পীরা সোশাল মিডিয়াতে কাজ করছেন বা নতুন যুক্ত হতে চাচ্ছেন তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কি হবে?

প্রথম প্রথম যখন আপনার পাশে অনুপ্রেরণা দেওয়ার মত কেউ থাকবে না তখন দাঁতে দাঁত চেপে কাজ করে যেতে হবে, যদি  আপনি আপনার কাজটিকে ভালোবসেন যেভাবে মানুষের কাছে যেতে চাচ্ছেন, আপনি সেভাবেই যেতে পারবেন, অবশ্যই সেটা কয়েক বছরেও হতে পারে, আবার সাত দিনেও হতে পারে আপনাকে ধৈর্যশীল হতে হবে 

আমার সব সময় পরামর্শ থাকবে যে ভালো যারা কাজ করছে তাদের দেখে শিখুন। আশেপাশে এখন  youtube, facebook সবকিছু থেকে শেখা যায়। সেসব সোর্সকে কাজে লাগিয়ে আসুন আমরা দক্ষ হই ও কাজটা করে যাই এবং কখনো থামবো না। ভুল করতে করতে আমরা সামনের দিকে এগোবো।

 

  • আপনার কাজের ব্যপারে একটি স্লোগান থাকলে সেটি কি হতো?

কাজকে ভালোবাসুন

আপনার কন্টেন্ট ক্রিয়েশন জার্নিতে যদি আপনি আপনার কাজকে ভালো না বাসেন, শুধু অর্থপরিচয় এসবের আগ্রহ থাকে তাহলে আপনি সামনে আগানোর জ্বালানী পাবেন না কাজকে ভালো না বাসলে আপনি আগ্রহ পাবেন না এজন্য কাজকে ভালোবাসাটা জরুরী আমি যখন ক্যামেরা মাইক্রোফোন ইত্যাদি ভিডিও সেটিংস নিয়ে বসি তখন অন্যরকম অনুভব করি। কারণ আমি আমার কাজটিকে ভালোবাসি। সেই ভালোবাসা জায়গা থেকেই এটি আমার পরিচয়কে বহন করে।

 

  • সবশেষে আপনার দর্শকদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন

দর্শকদের উদ্দেশ্যে যেটা বলব, আমার এগিয়ে চলার অনুপ্রেরণা আসলে আপনারাই আমি যখনই হতাশ থাকি, যখন মনে হয় কাজ করতে পারছি না, ব্যালেন্স করতে কষ্ট হচ্ছে; আমি নিজের প্রোফাইলেই ঢুকি তখন । আপনাদেরই মন্তব্য গুলো পড়ি। যে আপনারা কিভাবে আমাকে অনুপ্রেরণা দেন, পাশাপাশি আমার সামনের ভিডিও কবে আসবে তার জন্য অপেক্ষা করেন, আমার কোনো কাজের প্রশংসা করেন বা গঠনমূলক ভুল ধরেন,  এটাই আমার শক্তি ; আপনারাই আমার শক্তি আসলে আপনারা আমাকে সবসময় সাপোর্ট করে যাবেন। আপনাদের জন্যই আমি কাজটাকে সাথে নিয়ে আগাতে পারছি  এটা আমার জন্য অনেক কিছু 

আমার জীবনের সবচেয়ে বড় একটি পাওয়া হচ্ছে…..

আমি খুব সাধারন একজন মানুষ মধ্যবিত্ত পরিারে জন্ম নেওয়া, বেড়ে ওঠা একজন মানুষ যে শুধমাত্র নিজের ইচ্ছাতে কিছু কাজ করে যাচ্ছি সেই আমি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় যখন হুট করে কেউ ছুটে আসে, ছুটে এসে যখন জড়িয়ে ধরে বলে  আপু আমি আপনার বিশাল ভক্ত, একটা ছবি তুলতে চাই সেই পাওয়া টা যে কতবড় পাওয়া সেটা আমি বলে বোঝাতে পারবো না এই ভালোবাসাটাই আমার কণ্ঠ দিয়ে পাওয়া একমাত্র ভালোবাসা যেটায় কোনো পারিবারিক পরিচয় নাই, যা কোনো সামাজিক অর্জনের কারণে না সেটা শুধুই আমার কন্ঠ দিয়ে পাওয়া একমাত্র ভালোবাসার জায়গা সেটার জায়গা আসলে অন্য জায়গায়, অন্য রকমের, অন্য লেভেলের… 

ধন্যবাদ সবাইকে

 

ফেসবুক : IQRA – A Storyteller 

ইউটিউব : IQRA -A STORYTELLER

মেইল : isratiqra4545@gmail.com

আমাদের “Heroes by our side” ক্যাম্পেইনের  সাফল্যের গল্প এর পরবর্তী ব্লগ পড়তে, YSSE website এবং Facebook blog page এর সাথেই থাকুন। 

 

আমাদের আরো ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন  

 

লেখক :

মোঃ রাকিব রায়হান 

ইন্টার্ন, কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট

Youth School for Social Entrepreneurs (YSSE)