২৮ জুলাই “বিশ্ব পরিবেশ সংরক্ষণ দিবস” এই উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় যাওয়ার জন্য রাস্তায় বের হয়ে পথে দেখেন এখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনার স্তুপ। আবার  রাস্তায় গাছ নেই প্রয়োজনের তুলনায়।এইদিকে তীব্র রোদে আপনার নাজেহাল অবস্থা।এখন একটু পানি খেতে যাবেন সে পানিও দূষিত। বর্তমানে আমরা এমন অবাসযোগ্য পরিবেশেই  বসবাস করছি। পৃথিবী বহুদিন ধরেই একটু একটু করে বিনষ্ট হয়েছে। মানুষই সেই ক্ষতিসাধন করেছে। অথচ নিজেকে সে শুধরে নেয়নি। এখনও সে ক্ষতি চালিয়েই যাচ্ছে। পরিবেশের যথেষ্ট ক্ষতিসাধন তো হয়েই গেছে এখন এই মৃত পরিবেশে একটু প্রাণদানের চেষ্টায় না হয় করা যাক।

আমাদের দেশ গত কয়েক বছর ধরে বিশ্বে প্রথম স্থান দখল করে আছে বায়ুদূষণে।এমন অনেক দূষণের মাধ্যমে আমরা নিজেদের বিপদ  ডেকে এনেছি।আমরা কি চাইলেই এই পৃথিবী ছেড়ে  যেতে পারব অচীন গ্রহে ! না,পারব না। তাহলে চলুন কাজে লেগে যাওয়া যাক গ্রহকে একটু ঠিকঠাক তো করতে হবে।

ময়লা-আবর্জনা যেখানে সেখানে ফেলে দেয়াটা ভালো কাজ নয়। কিন্তু একটা বিষয় খেয়াল করলে দেখা যাবে ডাস্টবিনের দূরত্বের কারণেও অনেক সময় আশেপাশেই এসবের স্তুপ করে রাখা হয়।ডাস্টবিন যে ২ ফুট ২ ফুট দূরত্বে রাখতে হবে বিষয়টি তা নয়।তবে ডাস্টবিন অল্প দূরত্ব পর পর রাখতে হবে এবং  আমাদের সচেতনার টনক নড়িয়ে ডাস্টবিনের যথেষ্ট ব্যবহার করতে হবে।

পরিবেশের অন্যতম শত্রু একটি হলো প্লাস্টিক।এটি প্রকৃতির সাথে মিশে যেতে অনেক বছর লেগে যায় আমরা। প্রথমেই আমাদের তৈরি এই বিপদ কিছুটা কাটানোর জন্য প্লাস্টিকের কিছু এমন ব্যবহার করতে পারি যেমন প্লাস্টিক হতে পরিবেশবান্ধব ইট তৈরির মতো উদ্যোগ। এখন একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের পরিবর্তে সুপারি পাতা নিয়ে প্লেট তৈরি করা হচ্ছে। সবচেয়ে ভালো হয় প্লাস্টিকের পরিবর্তে পুনর্ব্যবহারযোগ্য জিনিস ব্যবহার করা।প্লাস্টিক পুরোপুরিভাবে বর্জনই আমাদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ হবে। 

হাসপাতাল-ক্লিনিকের বর্জ্য সঠিক স্থানমতো রাখা খুব জরুরি।এটি পরিবেশে মিশে স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতিসাধন করে।এ বিষয়ে খেয়াল রাখা প্রয়োজন।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিদ্যুত্‍ উত্‍পন্ন হয় কয়লা পুড়িয়ে। এর ফলে প্রচুর পরিমাণ গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গত হয়। গ্রিন হাউস গ্যাস, কার্বন ডাই অক্সাইড এবং নাইট্রাস অক্সাইড পরিবেশে দূষণ ঘটায়। তাই সোলার পাওয়ার এবং উইন্ড পাওয়ারের মতো অচিরাচরিত শক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে।

আমাদের দেশ পোষাকখাতে বিখ্যাত।এই পোষাকখাতে বিষাক্ত বর্জ্য নিষ্কাশিত হয়ে পরিবেশের দূষণ ঘটায়। সমস্যা থাকলে তার সমাধানও থাকে। তাই এই দূষণ রোধে কাজ করতে হবে।

গাছ পরিবেশে অক্সিজেন জোগানো ছাড়াও আরও নানাভাবে পরিবেশ রক্ষা করে। তাই পরিবেশ বাঁচাতে আমাদের সবার গাছ লাগানো প্রয়োজন। এছাড়া গাছ বাঁচলে বন্যপ্রাণীও বাঁচবে। তাই বায়োডাইর্ভাসিটির জন্য গাছ লাগানো খুব প্রয়োজনীয়।

বায়ুদূষণের কারণে চীনে চার দশমিক এক, বাংলাদেশে চার দশমিক সাত, ভারতে তিন দশমিক নয় এবং পাকিস্তানে তিন দশমিক আট বছর গড় আয়ু কমেছে। গবেষক টমাস মাঞ্জেল বলেন, প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ অকালমৃত্যুর জন্য মূলত মানবসৃষ্ট দূষণই দায়ী। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে বছরে প্রায় ৫৫ লাখ মানুষকে অকালমৃত্যুর হাত থেকে বাঁচানো সম্ভব।

পরিবেশ রক্ষায় করণীয় হিসেবে সুপারিশের মধ্যে তামাক চাষ বন্ধ করা, অপরিপক্ক গাছ না কাটা, বৃক্ষ রোপণ, পাথর বালির সংরক্ষণ, ইটভাটায় লাকরীর বদলে কয়লা ব্যবহার, পরিকল্পিতভাবে পাহাড়ের জুম চাষে নতুন পদ্ধতি অবলম্বন, পাহাড় কাটা বন্ধ, কীটনাশক ব্যবহারের নিষেধ, বিভিন্ন ঝিরি-ঝর্ণার বিশুদ্ধ পানীয় সংরক্ষণে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।

এখনই যদি আমরা সচেতন হই, তা হলে হয়তো অন্তত আগামী প্রজন্ম বসবাসের জন্য এখনকার তুলনায়  কিছুটা কম দূষিত সুস্থ-সবুজ বসবাসযোগ্য এক পৃথিবী পাবে। সেটুকুও যাতে করা যায় অন্তত সেই প্রতিজ্ঞাটুকু আমাদের সকলেরই গ্রহণ করা  উচিত। আমাদের সচেতনতা পারে আমাদের বাঁচাতে।

 

আরও ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন।

 

Writer:-

Rumman Bente Razzaque 

Intern

Content writing Department 

YSSE