মানুষের জীবনধারার গতি একেকরকম। কেউ খুব বেশি আধুনিকভাবে চলতে পছন্দ করে আবার কেউ ঐতিহ্যকে ধারণ করে। কেউ হয়তো গ্রাম্য পরিবেশ পছন্দ করে আবার কেউ হয়তো শহরের দালানকোঠার মধ্যে হারিয়ে যেতে পছন্দ করে। 

এই ধারা মানবজীবন শুরু হওয়ার পর থেকেই চলছে। বরং এখন আরো বাহারি রঙে মানুষ নিজেকে সাজিয়ে তুলছে। প্রাত্যহিক জীবনে মানুষের মাঝে এইসব বৈচিত্র্যতা তাদের সংস্কৃতি থেকে আসে। মানুষের ধর্ম, আচার, শিক্ষা, নীতি, মুল্যবোধ এসকল কিছুই সংস্কৃতি থেকে আসে। মূলত সংস্কৃতি মানুষের জেনেটিক্সকে প্রভাবিত করছে।

খাবার

৯০০০ বছর আগেও যেখানে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষেরা দুগ্ধজাত খাবার হজম করতে পারতেন না, সেখানে একদিন একজন খেয়ে অসুস্থ না হওয়ার পর থেকে এই ধারা অব্যাহত থাকে। আবার, যেসব সংস্কৃতির মানুষ দুগ্ধখামার তৈরি করেছিল এবং নিয়মিত দুধ পান করতো তাদের দেহে অন্য এলাকার মানুষের চেয়ে বেশি মাত্রায় ল্যাকটোজ হজম বা সহ্য করার এবং সংক্রান্ত অন্য জিন আছে। ধীরে ধীরে এটা একটি নিয়মে পরিবর্তন হয় সংস্কৃতির এসব ধারা সমাজে নিয়মিত একই ধারায় অব্যাহত থাকে 

ধর্ম 

সংস্কৃতির মাধ্যমে মানুষের মাঝে নানান ধরণের নিয়ামকের সমন্বয় ঘটে। ট্রবিয়ান্ড দ্বীপপুঞ্জে ন্যু নৃগোষ্ঠীদের মধ্যে এ ধরনের উদাহরণ লক্ষণীয়। তারা যে ধর্ম পালন করে, তা মূলত তাদের সংস্কৃতির একটা অংশ। শত বছর ধরে তারা এই ধর্ম পালন করে আসছে। তারা নিজের দেহকে পবিত্র মনে করে, কেউ অসুস্থ হলে তার দেহে কোনো খারাপ কিছু আছে বলে ধারণ করে। আবার, দেখা যায় ধর্মে অনেকে টোটেমে বিশ্বাসী। টোটেম হলো কোনো চিহ্ন বা বস্তুকে বিশ্বাস করে তা নিজের মধ্যে ধারণ করা। যেমন, সূর্য, গাছ, মূর্তি ইত্যাদি। মানুষের প্রতিদিনের জীবনে আমরা তা দেখি। এইতো গেলো ধর্মের কথা।                                         

পোশাক

এবার আসি পোশাকের দিকে। আমরা যে পোশাক পরিধাণ করি, সেটাও সংস্কৃতিকে কেন্দ্র করে হয়। যেমন, আমরা যে আটপৌরে শাড়ি পরি সেটা আমাদের সংস্কৃতির প্রতীক। আবার, এখন যে বাংলাদেশের মানুষেরা ওয়েস্টার্ন পোশাক ধারণ করছে, সেটিও কিন্তু সেইদেশের সংস্কৃতিকে ধারণ করার ফল। আমরা দেখি গারো নারীরা তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে যা দকবান্দী নামে পরিচিত। সেটি তাদের সংস্কৃতিকে ধারণ করে। এভাবেই পোশাক সংস্কৃতিকে ধারণ করে বাছাই করা হয়।

সংস্কৃতি সভ্যতার বাহন। সৃষ্টির শুরু থেকেই এই সংস্কৃতি মানুষের মাঝে বিরাজমান। সংস্কৃতির মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্যের ব্যাখ্যাও পাওয়া সম্ভব যা প্রাত্যহিক জীবনে প্রয়োজনীয়। 

একটি সমাজে বসবাস করতে গেলে সেই সমাজের সংস্কৃতিকে মানুষ ধারণ করে নেয়। যেমনঃ নেপালে সকল বৌদ্ধ মানুষের বসবাস, তাদের আচার সংস্কৃতি ভিন্ন। সেখানে অন্য দেশের মানুষ বসবাস করতে গেলে তাদের সংস্কৃতিকে নিজের মধ্যে ধারণ করে ফেলবে। কেননা, মানুষ যেই সমাজে বসবাস করে সেই সমাজের সবকিছুকে ধারণ করে ফেলতে চায় নিজের তাগিদে

এখন যেমন, বাঙ্গালি জাতিদের মধ্যে পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাব দেখা যায়। নতুন জেনারেশনে এই ধারা ব্যাপকভাবে লক্ষণীয় বাঙ্গালী জাতির সাহিত্য, সংগীত, ললিত কলা,মানবিকতা, জ্ঞানের উৎকর্ষ সকল কিছুর মধ্যে পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। মানুষ এখন পশ্চিমা সংস্কৃতিকে বেশি প্রাধান্য দেওয়ার ফলে আমাদের সংস্কৃতির স্বকীয়তা দিন দিন লোপ পাচ্ছে।

সংস্কৃতি লালনপালন হয় মানুষের প্রতিদিনের জীবনধারায়, তার ধর্মীয় প্রথা, তার মানবিক মানসিক চর্চার মাধ্যমে আমাদের আচার ,আচরণ, রীতিনীতি, নিয়ম, জ্ঞান, বিশ্বাস, নৈতিকতা, শিল্প, আইন, রাজনীতি এবং সমাজের একজন সদস্য হিসেবে মানুষের দ্বারা অর্জিত অন্য যেকোনো সম্ভাব্য সামর্থ্য বা অভ্যাসই মূলত সংস্কৃতি, যা মানুষের প্রাত্যহিক জীবনে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত, জীবনে চলার পথে জেনে বা না জেনেই মানুষ সবকিছু করছে সংস্কৃতিকে কেন্দ্র করেই। যার ফলে সামাজিকতা এখনো বিদ্যমান রয়েছে সমাজে।

আরো ব্লগ পড়ার জন্য লিংকে ক্লিক করুন- 

নামঃ মারিয়া আফসা

ইন্টার্ন , কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট

YSSE