পর্ব-২ 

মহীশূর আমাদের বললো অনেক বছর আগে, প্রায় হাজার বছর আগে এখানে এক রাজা বসবাস করতেন। খুব ভালো মানুষ ছিলেন, সবসময় সকলের সাহায্য করতেন। তিনি এক গরীব ঘরের মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন।

 

হঠাৎ করেই এক রাতে মেয়েটি মারা গেলো। এরপর থেকে সে প্রাসাদে আর কেউ বসবাস করতে পারেনি। সেটা এখন আর নেই, কথিত আছে ভূমিকম্পে সেটা মাটির নিচে চলে গিয়েছে। কিছু ধ্বংসাবশেষ এখনো দেখা যায়।

 

তারই লেখা এই ডায়েরি। ডায়েরিটা এর আগে এক দম্পতি পেয়েছিলো, তারপর তাদেরকে আর পাওয়া যায়নি। এরপর থেকেই এই ডায়েরি একেক সময় একেক জায়গায় দেখা যায়। লাইব্রেরিতে এটা কবে থেকে আছে আমাদের জানা নেই।

 

মিলি জিজ্ঞেস করলো, লাইব্রেরিম্যান কেনো কিছু বললেননি? মহীশূর বললো, সে হয়তো ভয় পেয়ে আর কিছু বলেনি। ডায়েরিটি যেহেতু আপনাদের হাতে পরেছে, এবার আর আপনাদের রক্ষা নেই।

 

জর্জ খানিকটা ভয় পেয়ে গেলো। হঠাৎ করেই কোত্থেকে ঝড় আসলো, আর পৃথ্বী চিৎকার করে উঠলো। বিদ্যুৎ ও চলে গেলো। জর্জ টর্চ জ্বালাতেই দেখলো মিলি আমাদের থেকে কয়েক ফুট উঁচুতে হাওয়ায় ভাসছে, আর বলতে থাকলো, “পৃথিবীতে কোন মিথ্যাবাদীর জায়গা নেই। না জীবিত, না মৃত”।

 

এটা বলার সাথে সাথেই মিলি নিচে পড়ে গেলো। ওর জ্ঞান ফিরলো না, পৃথ্বী বললো,”মিলি মারা গেছে”। আমরা আর কিছুই ভাবতে পারছিনা। জর্জ ঠিক করলো এই ডায়েরিটা পড়বে সাথে মহীশূরকে নিয়ে। সবাই মিলে ঠিক করলো এর রহস্য উদঘাটন করবেই।

 

পরদিন সকাল বেলা জর্জ আর মহীশূর লাইব্রেরির দিকে রওনা হলো ডায়েরি পাঠোদ্ধার করতে। আর আমি চার্লি আর পৃথ্বী গেলাম এই বিষয়ে গ্রামের মানুষের কাছে খোঁজ নিতে। আমি চার্লি আর পৃথ্বীকে বললাম, তোরা সামনে চল, আমি আসছি। 

 

বিকেল ঘনিয়ে সন্ধ্যা নেমে আসলো, আমরা সবাই ঘরে ফিরে এলাম। জর্জ সবটা এখনো বুঝে উঠতে পারেনি, সংস্কৃত বাদেও আরো অনেক কিছু আছে যা ওরা বুঝতে পারছেনা। চার্লি বললো গ্রামের মানুষদের সাথে কথা বলতে গিয়ে একজন প্রফেসরের সাথে দেখা হলো। তিনি এই বিষয়ে অনেক জানেন আমরা কাল তার কাছে যাবো তাহলে।

 

কিন্তু আমি যেতে চাইলাম না, চার্লিকে বললাম চল বাড়ি ফিরে যাই। কিন্তু কেউ আমার কথা শুনলো না। সবাই জেদ ধরে বসে আছে এই রহস্য সমাধান করবেই। সকালে সবাই রওনা হলো প্রফেসর ঋগ্বেদের বাড়িতে। 

 

আমাকে দেখে সে হঠাৎ চমকে উঠলো কিন্তু কিছু বললেন না। প্রফেসর চার্লির মুখ থেকে সব কথা শুনে ডায়েরিটা দেখাতে বললেন। হঠাৎ করে আমার দম বন্ধ হয়ে আসতে থাকলো। মনে হচ্ছিলো কেউ একজন আমার গলা টিপে ধরেছে। আমি জ্ঞান হারালাম। 

 

চোখ খুলে দেখলাম সন্ধ্যা নেমে এসেছে। আমরা এখনো প্রফেসরের  বাড়িতে। প্রফেসর ডায়েরির লেখা সমাধান করে ফেলেছে, ডায়েরিটায় কালো জাদুর সব মন্ত্র আর তার সারাজীবনের কর্মের কথা লেখা আছে। রাজা সবার প্রতি দয়াশীল ছিলো বাইরে থেকে, ভিতর থেকে সে ছিলেন একজন পিশাচ। 

 

তিনি অনন্তকাল ধরে বাঁচতে চেয়েছেন, সেইজন্য মানুষকে শয়তানের কাছে বলি দিয়ে, নিজে যুগের পর যুগ থেকেছেন। তার স্ত্রীকেও তিনি এক রাতে এইভাবে হত্যা করেছেন। সেই রাতে তার স্ত্রীকে সে জোর করে নিয়ে আসে তার যজ্ঞে এবং তাকে বলি দেয় শয়তানের কাছে।

 

কেউ যেনো কিছু না বুঝে তাই তার লাশ ফেলে দিলো প্রাসাদের সামনের পুকুরে। হঠাৎ একরাতে রাজা ঘুমাচ্ছিলেন, স্বপ্ন দেখলেন রানী ফিরে এসেছেন কিন্তু কি বীভৎস তার চেহারা, রাজা ভয়ে চোখ খুললেই দেখে তার পাশে রানী শুয়ে আছে তার দিকে তাকিয়ে আছেন।

 

চোখ গুলো ভিতর থেকে বের হয়ে আসতে চাইছে, আর শুধু বললেন, “পৃথিবীতে কোন মিথ্যাবাদীর জায়গা নেই। না জীবিত, না মৃত”। “তার মানে সেইদিন মিলির ভিতরে যে ছিলো তিনি ছিলেন রানী”, পৃথ্বী বললো। প্রফেসর বললেন, তোমাদেরকে একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার আছে, তবে এটার জন্য আমার মৃত্যুও হতে পারে”।

 

হঠাৎ করে ডায়েরিটা প্রফেসরের গলা পেঁচিয়ে ধরলো, সবাই ধরে ছাড়াতে চাইছে কিন্তু পারছেনা। খুব চেষ্টা করে বললেন, “তার নাম রি..রি…রি…”। প্রফেসরের মৃত্যুতে আমরা যেনো সব দিক হারিয়ে ফেললাম। 

 

ডায়েরিতে কোথাও রাজার নাম লেখা নেই। রাতের বেলা চার্লি কাউকে কিছু না বলেই গ্রামের পুরনো পন্ডিতের বাড়িতে গেলো। সেখান থেকে ফিরলো ভোর সকালে, সঙ্গে নিয়ে আসলো পণ্ডিতকে। পৃথ্বী জিজ্ঞেস করলো, কোথায় ছিলি সারারাত? 

 

চার্লি চুপ করে রইলো, কিছুক্ষণ পর বললো,”রাজার নাম ঋষি”। পৃথ্বী চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে গেলো, সবাই বিস্মিত চোখে আমার দিকে তাকালো কারণ আমার নাম ঋষি। 

 

সবাই আমার দিকে সন্দেহের চোখে তাকালো, আর পৃথ্বী বললো তুই প্রফেসরকে মেরেছিস। সেদিন রানী এসেছিলো তোকে মারতে। গ্রামে যাওয়ার সময় তুই আমাদের সাথে যাসনি। এমনকি তুই এইখান থেকে সবাইকে চলে যেতে বলেছিস। কলেজের আশেপাশে হঠাৎ করে মানুষগুলো গুম হচ্ছিলো তোর জন্য।

 

” হ্যাঁ, হ্যাঁ, আমি সেই মহারাজা ঋষি, কিন্তু তোরা আমার কিচ্ছু করতে পারবিনা”। পণ্ডিত মন্ত্র দিয়ে আঘাত করতে চাইলে পণ্ডিতকে ছুড়ে ফেলে দেই আমি। হঠাৎ করে ঝড়ো হাওয়ার সাথে পৃথ্বীর শরীরে রানী ভর করে এবং বলে, “ওকে মেরে ফেলা যাবেনা, কিন্তু ওইযে ডায়েরি ওই ডায়েরির মধ্যে তাকে বন্দী করা যাবে আজীবন”। 

 

এর জন্য ওর রক্তের ফোটা ডায়েরিতে ফেলতে হবে। এর মধ্যে ঋষি ওর আসল রূপ ধারণ করে, হাজার বছর আগের বীভৎস চেহারায় আমরা সবাই ভয় পেয়ে গেলাম। পিছন থেকে এসে চার্লি মারতে চাইলে চার্লিকে বাড়ির বাইরে ছুড়ে ফেলে। পৃথ্বী ওকে আঘাত করতেই জর্জ ডায়েরিটা সামনে নিয়ে যেতে চায়।

 

কিন্তু ডায়েরি ওর হাত পেঁচিয়ে গলা অব্দি উঠে আসছে। সেইভাবেই খুব কষ্ট করে এক ফোঁটা রক্ত ডায়েরির সাথে লাগতেই, আমি ডায়েরির সাথে মিশে যাই। 

 

আমি আর কখনো এইখান থেকে বেরোতে পারবো না। ডায়েরির প্রতিটি পাতায় যেনো আমি আবদ্ধ হয়ে আছি। আমি কেনো আছি এখানে? আমার সাথে কি হয়েছে ওগুলো? আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারছিনা। আমি আর কিছু ভাবতে পারছিনা। আর কিছু ভাবতে চাইও না। কিন্তু এখন কাউকে বলা যাবে না, বললে ও আমায় মুক্তি দিবে না। আমি মুক্তি চাই। মুক্তি চাই…।

 

আরোও ব্লগ পড়তে এখানে  ক্লিক করুন। 

Writer,

মারিয়া আফসা

ইন্টার্ন,

কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট 

YSSE