“জমিদার বংশের তৃতীয় প্রজন্ম ভোগে দারিদ্রতায়” এই কথাটি প্রচলিত হয়েছে বাস্তব হাজার উদাহরনে। অর্থ ছাড়া যেমন মানুষ জীবনকে উপভোগ করতে পারেনা সেই অর্থই মানুষ এর জীবনকে সবচেয়ে কঠিন এবং নিষ্ঠুরতম অবস্থানে এনে ফেলতে পারে যদি না এই অর্থের সঠিক ব্যবহার এবং প্রয়োগ নিশ্চিত করা হয়।
একজন শিশু মানসিক এবং শারীরিক ভাবে শুধুমাত্র খাবার খাওয়ার মাধ্যমে বেড়ে ওঠে তা আপাত দৃষ্টিতে মনে হলেও একজন মানুষের মতো মানুষ হতে হলে তার কিছু গুনাবলী অর্জন করতে হয় যেমন দায়িত্ববান হওয়া, পরিশ্রম করা, অন্যের উপর নির্ভর না হওয়া, স্বার্থপর না হয়ে অন্যের জন্য কিছু করার মনোভাব রাখা, সময়ানুবর্তি হওয়া, জীবনের সঠিক লক্ষ্য নির্ধারণে সক্ষম হওয়া।
তার জন্য ছোটবেলা থেকে একটি শিশুকে পর্যায়ক্রমে কিছু বিষয় মাথায় রেখে গড়ে তুলতে হয় যেমন সন্তানকে অভাব শেখানো, চাইলে সব পাওয়া যায়না তা বোঝানো, নিজের সামর্থ্যের একটি গোলক তৈরী করে সেই গোলকের ভেতরে থেকে জীবনকে উপভোগ করা, উচ্চাকাঙ্ক্ষা না করা, সামর্থ্যের বাইরে কিছু পেতে চাইলে কঠোর পরিশ্রমের মনোবল রাখা এবং লক্ষ্যে পৌঁছাতে জানপ্রান লাগিয়ে দেয়া, অন্যের সাহায্যে নিজের সুখ খুঁজে নেয়া, কিছু না পেলে তা মেনে নেয়ার সক্ষমতা রাখা।
আর এই সবকিছু একজন ধনীর দুলাল যে কিনা শুয়ে বসেই সব পাচ্ছে এবং সে জানে তার বাবা তার জন্য একটা বিরাট অংশের সম্পদ রেখে যাবেন তার পক্ষে অন্তত সম্ভব নয়। কিন্তু কিছু ব্যতিক্রম এই পৃথিবীতে রয়েছে যার কারনেই এই পৃথিবী বেঁচে আছে। সেই ব্যতিক্রম কে উদাহরণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন এমন একজন হলেন আনন্দ মহেন্দ্র। বাপ-দাদার রেখে যাওয়া ব্যবসাকে কঠোর পরিশ্রম এর মাধ্যমে, হাজার চড়াই উৎরাই এর মধ্যে বুদ্ধি ও শ্রম দিয়ে শীর্ষস্থানে পৌছিয়েন।
১৯৫৫ সালের পহেলা মে ভারতের মোম্বাই শহরে। বাবার নাম হারিশ মহেন্দ্র,মায়ের নাম ইন্দিরা মিহেন্দ্র।তার, রাধিকা নাথ এবং অনুজা শর্মা নামে দুই বোন রয়েছে। তার শিক্ষার কথা বলতে গেলে, তিনি লরেন্স স্কুল, লাভডেল থেকে স্কুলিং শেষ করেন। এছাড়াও, তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিল্ম-মেকিং এবং আর্কিটেকচার অধ্যয়ন করেন। স্নাতক শেষ করার পর, তিনি হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল থেকে ১৯৮১ সালে এমবিএ করেন।
১৯৮১ সালে ইউজিন স্টিল কোম্পানি তে ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্ট এ ডেপুটি নির্বাহী সহকারী হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৯১ সালে মহেদ্র এবং মহেন্দ্র (Mahidra And Mahindra) কোম্পানি তে ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে নিযুক্ত হন। এই সময় মহেন্দ্র নতুন ছয়টি সেক্টরে ব্যবসার প্রসারে অগ্রসর হন। এগুলো হলো অটোমোটিভ সেক্টর, অটোমোটিভ পার্টস এন্ড মেনুফ্রেকচারার,ফার্ম ইকুইপমেন্ট, ফাইনান্সিয়াল সার্ভিসেস, ইনফ্রাস্টাকচার ও সফটওয়্যার কোম্পানি। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত একটি কোম্পানিও লাভের মুখ দেখছিলনা বিপরীতে লোকশান গুনতে হচ্ছিল। এই সময় ভেঙে না পরে তিনি ভিন্ন করে নতুন ব্যবসায়িক কৌশল অবলম্বন করেন। যা তার সফলতার কারন। সেগুলো হলো :
১. পথপ্রদর্শক ব্যবসায়ী: সবসময় কোম্পানির অবস্থান প্রথম ও দ্বিতীয় অবস্থানে রাখার জন্য কাজ করতে হবে। যে ইন্ডাস্ট্রি তে কাজ করা হবে তাতে সর্বোচ্চ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাড় করানোর জন্য সকল সদস্যদের এক সাথে কাজ করে যেতে হবে।
২.বৈশ্বিক সম্ভাবনা : এমন পন্য তৈরি করতে হবে যার গ্রহন যোগ্যতা দেশব্যাপী এমনকি সারা বিশ্বে চাহিদা সৃষ্টি করে। এতে সহজেই কোম্পানি বিশ্ব বাজারে অবদান রাখতে পারবে।
৩. উদ্ভাবন: কোম্পানি কে টিকিয়ে রাখতে এবং যুগের সাথে এগিয়ে নিয়ে যেতে নতুন নতুন পন্য বা সেবা সৃষ্টি করা।প্রতিষ্ঠানে আধুনিকায়ন সব সময় রাখা উচিত।
৪.আর্থিক বিবরণী : কোন কোম্পানি যদি বারো মাসের মধ্যে মুনাফা আনতে না পারে তবে ওই কোম্পানিকে বন্ধ করতে হবে। কেননা যে কোম্পানি বারো মাসের মধ্যে সফল হতে পারে নি সেই ব্যবসায় বিনিয়োগ করা ভুল সিধান্ত হবে।
মহেন্দ্র গ্রুপ এর বর্তমান চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিভিন্ন সেক্টরে তার কোম্পানির বিস্তৃতি ঘটিয়েছেন । সেগুলো হলো মহাকাশ, আফটার মার্কেট, কৃষি ব্যবসা, স্বয়ংচালিত, নির্মাণ সরঞ্জাম, উপাদান, প্রতিরক্ষা, খামার সরঞ্জাম, শক্তি, অর্থ ও বীমা, তথ্য প্রযুক্তি, শিল্প সরঞ্জাম, অবসর এবং আতিথেয়তা, লজিস্টিক, খুচরা, রিয়েল এস্টেট এবং টু-হুইলার।
বর্তমানে মহেন্দ্র গ্রুপ দেড়শটির ও বেশি কোম্পানি নিয়ে বিশ্বের একশোটি দেশে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আনন্দ মহেন্দ্র, একজন কিংবদন্তি ও স্বপ্নদর্শি মানুষ যার কারনে মহেন্দ্র গ্রুপ আজ সাফল্যের চূড়ায়।
আনন্দ মাহিন্দ্রার নেতৃত্বে মাহিন্দ্রা গ্রুপ বিশ্ব বাজারে মানদণ্ড স্থাপন করেছে। একজন মনোযোগী ব্যবসায়ী হওয়ার পাশাপাশি তিনি মানবতা ও সমাজ সেবায় সক্রিয় রয়েছেন। এটি তাকে বিভিন্ন পুরষ্কার এবং প্রশংসার মুখোমুখি করেছে।
এর মধ্যে কয়েকটি হল, ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী অবদানের জন্য রাজীব গান্ধী পুরস্কার (২০০৪), ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি কর্তৃক পুরস্কৃত নাইট অফ দ্য অর্ডার অফ মেরিট, আমেরিকান ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন কর্তৃক নেতৃত্ব পুরস্কার (২০০৫), সিএনবিসি কর্তৃক বিজনেস লিডার অ্যাওয়ার্ড। (২০০৬), ইউএস ইন্ডিয়ান বিজনেস কাউন্সিলের গ্লোবাল লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড (২০১২), ফোর্বস ইন্ডিয়া লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ডস (২০১৩), বিজনেস টুডে সিইও অফ দ্য ইয়ার (২০১৪) ইত্যাদি।
মহেন্দ্র গ্রুপ ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে খ্যাতি অর্জন করেছে। এটি সমাজের সেবা করার জন্য এবং সর্বোত্তম পণ্যের পাশাপাশি পরিষেবাগুলি সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে৷ রকমারি কাজের সাথে, মাহিন্দ্রা গ্রুপটি ২রা অক্টোবর, ১৯৪৫ সালে লুধিয়ানায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে, গ্রুপটির নামকরণ করা হয়েছিল মুহাম্মদ এবং মহেন্দ্র গ্রুপ কারণ এটি মহেন্দ্র ভাই এবং মালিক গোলাম মুহাম্মদ দ্বারা গঠিত হয়েছিল। কোম্পানিটি একটি ইস্পাত উৎপাদন শিল্পে কাজ শুরু করে এখন ১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি সম্পদের একটি গ্রুপে পরিণত হয়েছে।
To get more blogs like this, click here.
Writer,
Sadia Akter,
Intern, Content Writing Department,
YSSE.