পর্ব- ১
আজ ভাদ্র মাসের ৫ তারিখ। এই সময়টার রোদ বেশ কড়া। খুব গরম থাকে। শান্তিনিকেতনের প্রতিটি জায়গা নিস্তব্ধ। রান্নাঘর, বারান্দা, উঠান সবগুলো চুপচাপ। শুধুমাত্র আমার নাতনি টিয়ার ঘর থেকে আসে গানের আওয়াজ।
বয়স সবে মাত্র পাঁচ। বেশ লক্ষ্মী আমার ছোট্ট টিয়া। সারাটাদিন শান্তিনিকেতনের সবটা জায়গায় ছুটে বেড়ায়। ওর ছোট্ট এই দস্যিপনায় সঙ্গ দেয়, শান্তিনিকেতনে থাকা কিছু বিড়ালছানা। টিয়ার মা বাবা চাকরি করে, তাই টিয়া তার নানীর কাছেই থাকে। বাড়িতে তিনটা কাজের লোক আছে যারা সবকিছু দেখাশোনা করে।
টিয়া সব সময় দৌড়ে বেড়ায় আর সাথে গুনগুন করে বিড়াল ছানাদের নিয়ে। রাতের বেলা ও নিজের ঘরে একলাই ঘুমায়। আমি টিয়ার ঘর থেকে দুটো ঘর পরে থাকি। হঠাৎ একদিন রাতে টিয়া ঘর থেকে কান্নার আওয়াজ পেয়ে আমি দৌড়ে গেলাম। কিন্তু একি কাণ্ড, টিয়া তো ঘুমাচ্ছে, তাহলে এই শব্দ আসলো কোত্থেকে!
নিজের মনের ভুল ভেবে আমি নিজের ঘরে ফিরে গেলাম। টিয়ার মা-বাবা চাকরির কাজে তিন দিনের জন্য শহরের বাইরে গেল। টিয়া এদিকে ব্যাপক খুশি তার কোন পড়াশোনা করা লাগবে না, সে তার বিড়াল ছানাদের নিয়ে ঘুরবে আর গুনগুন করবে।
তবে আজ রাতে অদ্ভুত কাণ্ড করে গেল আমি টিয়াকে পেলাম সিঁড়ির ঘরের মেঝেতে, অজ্ঞান অবস্থায়। মুখে পানি ছিটিয়ে দিতেই জ্ঞান ফিরলো টিয়ার। ওর কিছুই মনে নেই কি ঘটেছে। সকালে আমি টিয়ার মা-কে ফোন করে সব জানালাম। ওরা কাল চলে আসবে।
টিয়ার দৌড়ানোর শব্দ যেনো পুরো শান্তিনিকেতনকে প্রাণ এনে দেয়। দুপুরে আমি আর টিয়া মিলে খাওয়া শেষ করে, বেশ কিছুক্ষণ জমিয়ে গল্প করলাম। মেয়েটা বড্ড বেখেয়ালি হয়েছে। চুলগুলো সুন্দর মতো বেধে দিলাম। টিয়া বেশ খুশি। আমায় জড়িয়ে ধরে বলছে আমি নাকি ওর সব থেকে প্রিয়।
কিছুটা দূরেই টিয়ার বিড়ালছানাগুলো লেজ নাড়ছে। টিয়া ওদের ডাক দিতেই দৌড়ে চলে এলো। টিয়ার সাথে খেলছে। হঠাৎ টিয়ার ঘাড়ে আমার চোখ গেলো। লাল হয়ে আছে, সাথে আঁচড়ের দাগ। আমি জানতে চাইলাম কি হয়েছে। টিয়া বললো সে জানেনা কিভাবে এমনটা হলো।
আমি ভাবলাম রাতে পরে যাওয়াতে হয়তো ব্যথা পেয়েছে। কাজের লোকদের বললাম চা করে দিতে। চা খেয়েই আমি আর আমার টিয়া মিলে পুকুরপাড়ে হাটতে বের হলাম। কি সুন্দর ঠাণ্ডা পরিবেশ আজ। টিয়ার ওর বিড়ালছানাগুলো নিয়ে এসেছে। পুকুরপাড়ে আমি বসে বসে ওদের দুষ্টুমিগুলো দেখছি।
হঠাৎ করেই টিয়া দৌড়ে ভিতর দিকে গেলো, আমি আর কোনো শব্দ পাচ্ছিনা। উঠে গিয়ে দেখলাম টিয়া কোথাও নেই। বাড়ির কাজের লোকদের নিয়ে খোজাখুজি করেও পাচ্ছিনা। সব জায়গায় খোঁজা হয়ে গিয়েছে। বিড়ালছানাগুলোকেও দেখতে পাচ্ছি। ছাদে গিয়ে দেখি টিয়া কাদঁছে। আমায় দেখে জিজ্ঞেস করলো আমি কে। আমি অনেকটা আশ্চর্য হয়ে গেলাম।
টিয়াকে বললাম আমি তোমার নানু, চলো ঘরে যাবে। কাঁদতে কাঁদতে টিয়া ঘুমিয়ে পরলো। ঘুম ভাঙলো রাত নয়টায়। আমি কাজের লোককে পাঠালাম এক হুজুর ডেকে আনতে। টিয়ার কিছু মনে নেই।
হুজুর ওকে জিজ্ঞেস করলে ও কিছুই বলতে পারেনা। আমি সবকিছু খুলে বললাম। টিয়াকে দোয়া পড়ে ফু দিয়ে দিলো, আর আমাকে বললেন ওর সাথে খারাপ জ্বীন আছে। কাল সকালে আমি আমার সবকিছু নিয়ে আসবো আর টিয়াকে মুক্ত করবো।
আমি ওকে খাইয়ে দিয়ে শুয়ে পরলাম৷ ঠিক করলাম আজ রাতে ও আমার কাছেই থাকবে৷ ভোর হতেই ওর বাবা মা চলে আসবে তাই আর কিছু জানালাম না। টিয়া ঘুমাচ্ছে, আমারো কখন যে চোখ লেগে এলো বুঝে উঠতে পারলাম না। হঠাৎ করেই দেখি টিয়া নেই পাশে!
আরো ব্লগ পড়তে লিংকে ক্লিক করুন
মারিয়া আফসা
ইন্টার্ন,
কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট
YSSE