পর্ব ২

কাজের লোকদের ডাকতে ডাকতে আমি নিচে গেলাম। নিচে গিয়ে দেখি এক অদ্ভুত অঙ্গভঙ্গিতে টিয়া বসে আছে, বিড়ালছানাগুলো রীতিমতো ডেকেই যাচ্ছে। এদিকে আমি কি করবো বুঝে উঠতে পারছিনা। ওর কাছে গিয়ে ওকে ডাক দিতেই আমাকে ছুড়ে ফেলে দিলো। 

কাজের লোকগুলো ভয়ে কাচুমাচু হয়ে আমার পাশে এসে বসেছে। আমি কি বলবো, কি করবো কিছুই জানিনা। ভোর এখনো হয়নি। হঠাৎ করেই টিয়া চিল্লানো শুরু করলো। বলে উঠলো, সবাই মরবি, সবাই!

টিয়া কেনো এমন করছে, কি হয়েছে ওর। কাজের লোকগুলো বলছে ওর উপর খারাপ কিছু আসছে। বিদ্যুৎ চলে গেলো। এই প্রথম আমাদের শান্তিনিকেতন একদম অন্ধকার। কাজের লোককে ডেকে বললাম যে পুরনো ড্রয়ারে কিছু মোম রাখা আছে। ওরা একা যেতে ভয় পাচ্ছে। আমি ওদেরকে সাথে নিয়ে গেলাম। মোমবাতি গুলো জ্বলছে আবার বাতাসে নিভে যাচ্ছে।

অনেকক্ষন পর জ্বলে উঠলো ঠিকমতো। টিয়া ঘরে নেই। বের হওয়ার সাহস কারও নেই। ভোর হয়ে আসছে। আলোর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। আর কিছুক্ষণ পরেই ওর বাবা-মার চলে আসার কথা। আলো হওয়ার খানিকক্ষন পর, আমরা বাইরে গেলাম, টিয়াকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছেনা আবার কোথায় গেলো মেয়েটা। 

গেইটের বাইরে গাড়ির শব্দ এসেছে, বোধহয় টিয়ার বাবা মা চলে এসেছে। তারা এসে আমাকে জিজ্ঞেস করলো এতো রাতে কেনো সবাই বাইরে কি হয়েছে। পুরো ঘটনা বলার পর সবাই মিলে টিয়াকে খুঁজতে লাগলাম। পিছনের দিকের ঘন জঙ্গলে গেলো টিয়ার বাবা। 

চিৎকার করে সবাইকে ডাকা শুরু করলো। টিয়া একটি বড় গাছের ডালে দাঁড়িয়ে আছে। অনেকক্ষণ ধরে ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়া পাওয়া গেলো না। ভোর পেরিয়ে সকাল হতে লাগল টিয়া ওখানেই দাঁড়িয়ে আছে। আমি হুজুরকে ফোন করে বললাম যেন জলদি চলে আসে। 

সে আসতেই তাকে নিয়ে এলাম পিছনের জঙ্গলের সেই গাছটার কাছে। হুজুর দোয়া পড়া শুরু করলে সাথে কিছু পানি ছিটানো শুরু করতেই টিয়া রেগে চিৎকার করতে লাগলো। টিয়া গাছের ডাল বেয়ে নিচে নামছে, এক ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিল সে হুজুরকে। 

টিয়া বলল আমি ওকে ছেড়ে যাব না। আমি ওকে নিয়ে অন্য দেশে পাড়ি দিব। এ কথা শুনে আমার খুব চেনা পরিচিত মনে হল। আমি দৌড়ে শান্তিনিকেতনে গেলাম। শান্তিনিকেতনের যে বন্ধ ঘরটি আছে, তার তালা খুলে আমার বড় মেয়ে রিনার সবকিছু বের করলাম। 

রিনা পাঁচ বছর আগে আত্মহত্যা করেছিল তার কারণ আমরা কেউই জানিনা। রিনার খুব ইচ্ছা ছিল আমাদের সকলকে নিয়ে অন্য দেশে যাওয়ার। আমি দৌড়ে টিয়ার কাছে গিয়ে বললাম,”রিনা, মা আমার ওকে ছেড়ে দে, আমাকে নিয়ে চল, ওকে ছেড়ে দে”। টিয়ার মা, আমার এই কথা শুনে অবাক। 

টিয়ার মা বলা শুরু করলো,” আপু, আমাকে প্লিজ ক্ষমা করে দাও, আমার মেয়েকে ছেড়ে দাও, আমাকে নিয়ে যাও, প্লিজ আপু”। রিনা বলে উঠল তোর জন্য আজ আমার এই অবস্থা, আমি তোকে কখনো ক্ষমা করব না। 

এদিকে টিয়ার মাকে জিজ্ঞাসা করলাম এসব কি বলছিস। ও বলল ছয় বছর আগে আমিই আপুকে ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলেছিলাম, কারণ আপুই সবসময় তোমাদের ভালোবাসা পেয়েছে, তোমরা কখনোই আমাকে ওর মত করে ভালবাসনি, আপু যখন যা চাইতো তাই দিতে, আর আমাকে দূরে পাঠিয়ে দিতে, তাই ভাবলাম ও না থাকলে হয়তো তোমরা আমাকে ভালবাসবে।

রিনা বলে উঠলো, আসলে দোষ তোর নয়, দোষ বাবা মায়ের। তারা আমাদের দুই বোনকে দুইভাবে দেখেছে। এই বলে রিনা টিয়াকে ছেড়ে দিল আর তার নিজের মাকে মেরে ফেলে মুক্তি পেয়ে গেলো।

 

আরো ব্লগ পড়তে লিংকে ক্লিক করুন-

 

মারিয়া আফসা

ইন্টার্ন,

কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট 

YSSE