বর্তমান সময়ে উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে বাংলাদেশের অনেক শিক্ষার্থী উন্নত দেশে অর্থাৎ বিদেশে পড়াশোনা করার স্বপ্ন দেখে। কিন্তু এদেশে শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে কঠিন একটা বাধা হয়ে দাঁড়ায় ইংরেজি ভাষার উপর দক্ষতা না থাকা। আসলে আমাদের এসব বিষয়ে ধারণা কম থাকার কারণে আমরা অনেক সময় সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগি। কিভাবে আমরা ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করব, আমাদের দ্বারা কি হবে এ ধরনের অনেক চিন্তা ভাবনা আমাদের অনেকের মনেই আসে।
চলুন আজকে আপনাদের কিছুটা হলেও ধারণা দেয়া যাক। TOEFL নাকি IELTS, কোন পরীক্ষাটি আপনার জন্য শ্রেয় হবে এই সম্পর্কে ধারনা পাবেন আজকের লেখায়। ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা যাচাই এর জন্য IELTS এবং TOEFL ছাড়াও আরো কয়েকটি পরীক্ষা রয়েছে। যেমন: Duolingo, PTE। তবে বর্তমানে শিক্ষার্থীদের কাছে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হলো IELTS এবং TOEFL।
TOEFL (iBT)পরীক্ষা কি?
TOEFL বা Test of English as a Foreign Language হলো এমন একটি পরীক্ষা যার মাধ্যমে যাদের মাতৃভাষা ইংরেজি নয় তাদের ইংরেজি দক্ষতা যাচাই করা হয়ে থাকে।
এখানে দুইভাবে এই পরীক্ষাটি নেয়া হয়, একটি হলো ইন্টারনেট বেসড পরীক্ষা এবং অন্যটি পেপার বেসড পরীক্ষা। তবে বর্তমানে TOEFL এর যে ভার্সনটি চালু আছে তাকে বলা হয় ইন্টারনেট বেসড TOEFL(Internet based TOEFL or iBT) কারণ ২০২১ সালের পর থেকে পেপার বেসড পরীক্ষাটি আর নেয়া হয় না। এখন এ পরীক্ষাটি কেবল কম্পিউটারে নেয়া হয়ে থাকে। ইংরেজি ভাষা দক্ষতা যাচাইয়ের জন্য 1962 সালে আমেরিকায় এই পরীক্ষাটি প্রথম শুরু করা হয়েছিল। এই কারণে, আমেরিকার বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় IELTS নামক পরীক্ষার স্কোরের সাথে TOEFL স্কোরও গ্রহণ করে। যাইহোক, আপনি যদি উচ্চশিক্ষার জন্য একটি নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চান, তাহলে আপনি তাদের ওয়েবসাইট থেকে TOEFL স্কোর গ্রহণ করে কিনা তা আগে দেখে নিবেন।
TOEFL (iBT) পরীক্ষার ফরমেট:
রিডিং, লিসেনি, স্পিকিং এবং রাইটিং এই চারটি সেকশনের প্রতিটি অংশে ৩০ নম্বর করে মোট ১২০ নম্বরের পরীক্ষা নেওয়া হয়। রিডিং সেকশনের জন্য ৩৫ মিনিট সময় দেয়া হয়। এ সময়ের মধ্যে ২টি প্যাসেজ পড়ে শেষ করতে হয় এবং প্রতিটিতে ১০ টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। লিসেনিং সেকশনের জন্য দেয়া হয় ৩৬ মিনিট, যার মধ্যে ৩টি লেকচার শুনতে হয় এবং প্রতিটি লেকচার শোনা শেষ করার পরে ৬টি প্রশ্নের উত্তর লিখতে হয়, এরপর ২টি কনভারসেশন শুনতে হয় এবং প্রতিটি কনভারসেশন শোনার পরে তিনটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। স্পিকিং সেকশনে মোট চারটি বিষয়ে একজন পরীক্ষার্থীকে কিছু নির্দেশাবলি শোনানো হয়, যার ওপর ভিত্তি করে তাকে নিজের মতামত প্রকাশ করতে বলা হয়। ১৬ মিনিটে ঐ পরীক্ষার্থী কতটুকু সাবলীলভাবে ইংরেজিতে কথা বলতে পারে, তা যাচাই করা হয়। রাইটিং সেকশনে দুটি বিষয়ের ওপর লিখতে দেওয়া হয় এবং এর জন্য সময় হলো ২৯ মিনিট।
কোন পরীক্ষা দেওয়া উচিত, TOEFL নাকি IELTS?
উচ্চশিক্ষার জন্য বাইরের কোন দেশে পড়তে যাওয়ার ক্ষেত্রে সবারই মনে প্রশ্ন আসে যে, আমি IELTS দিব নাকি TOEFL দিব। এই পরীক্ষাগুলোর ফরমেট ও টাইমিং এর মাঝেও রয়েছে ভিন্নতা। সুতরাং, আপনি কোন পরীক্ষা দেবেন তা সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আপনি কোন দেশে এবং কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে চান সে সম্পর্কে আপনার চিন্তা করা দরকার। এছাড়াও, আপনি যে সকল বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনা করতে চান সে সকল বিশ্ববিদ্যালয় IELTS নাকি TOEFL কোন পরীক্ষার ফলাফল গ্রহণ করে তার সম্পর্কেও জেনে নিতে হবে এবং এর উপর ভিত্তি করেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। এখন, আরও বিস্তারিতভাবে IELTS এবং TOEFL এর মধ্যে প্রধান পার্থক্যগুলো সম্পর্কে কথা বলা যাক।
১। IELTS পরীক্ষা দুই ধরনের পদ্ধতিতে নেওয়া হয়। যেমন:
- IELTS জেনারেল এবং
- IELTS একাডেমিক।
যারা ইমিগ্রেশন এর জন্য যেতে চান অথবা কারিগরি বিষয় বা প্রশিক্ষণে ভর্তি হতে চান তাদের জন্য IELTS জেনারেল ট্রেনিং পরীক্ষা। যে কেউ এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে। যারা উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পড়তে যেতে চান তাদের জন্য IELTS একাডেমিক পরীক্ষায় দুই ঘন্টা পয়তাল্লিশ মিনিট সময় লাগে। অন্যদিকে TOEFL iBT (Internet based test বা ইন্টারনেট বেসড পরীক্ষা) পরীক্ষা দিতে দুই ঘন্টা সময় লাগে।
২। IELTS পরীক্ষাটি দুই ভাবে দেওয়া যায়। একটা হলো ইন্টারনেট বেসড পরীক্ষা আর অন্যটি হলো পেপার বেসড পরীক্ষা। অন্যদিকে বর্তমানে বাংলাদেশে TOEFL এর iBT (Internet based test বা ইন্টারনেট বেসড পরীক্ষা) ভার্সনটি চালু আছে। বাংলাদেশে ব্রিটিশ কাউন্সিল এবং আইডিপি থেকে IELTS পরীক্ষাটি দেওয়া যায় এবং সারা বাংলাদেশের মোট পাঁচটি বিভাগের (ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, খুলনা) বেশ কয়েকটি স্থানে IELTS পরীক্ষা দেওয়া যায়। অন্যদিকে TOEFL পরীক্ষা ইটিএস (এডুকেশন টেস্টিং সার্ভিস) থেকে দেয়া যায়।
৩। উভয় পরীক্ষার খরচও বিভিন্ন দেশভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে IELTS চার্জ হলো $১৮৪ ডলার এবং TOEFL চার্জ হলো $২০৫ ডলার। আপনাকে তাদের ওয়েবসাইটে উভয় পরীক্ষার জন্য ফি প্রদান করতে হবে এবং রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। তবে হ্যাঁ, পরীক্ষা ফি যেকোনো সময় পরিবর্তন হতে পারে সেক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই উক্ত ওয়েবসাইট দুটিতে খেয়াল রাখতে হবে।
৪। স্কোরিং করার ক্ষেত্রে IELTS পরীক্ষাতে সার্টিফাইড পরীক্ষকরা থাকেন। কিন্তু TOEFL পরীক্ষায় পরীক্ষকের পাশাপাশি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সও ব্যবহার করা হয়।
৫। IELTS স্কোরের মেয়াদ থাকে দুই বছর। অন্যদিকে TOEFL পরীক্ষাটি সারা বছরই যতবার ইচ্ছা ততবারই দেয়া যায়, তবে একবার পরীক্ষা দেওয়ার ১২ দিনের মধ্যে দ্বিতীয়বার পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা যায় না এবং দুই বছর পর্যন্ত TOEFL স্কোরের মেয়াদ থাকে।
৬। TOEFL পরীক্ষা দেওয়ার পরে, আপনার ফলাফল পেতে আপনাকে আট দিন অপেক্ষা করতে হবে। একবার আপনি আপনার স্কোর জানতে পারলে, আপনি বিনামূল্যে চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্পূর্ণ ফ্রিতে পাঠাতে পারেন। আর IELTS পেপার বেসড পরীক্ষার ক্ষেত্রে আপনি তেরো দিনের মধ্যে ও ইন্টারনেট বেসড পরীক্ষার ক্ষেত্রে তিন থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে আপনার ফলাফল জানতে পারবেন এবং আপনি অতিরিক্ত অর্থ প্রদান ছাড়াই আপনার স্কোর মোট ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাতে পারেন।
৭। TOEFL হলো এমন একটি পরীক্ষা যা বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রহণ করা হয়ে থাকে। TOEFL আমেরিকার প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়েই গ্রহণযোগ্য। TOEFL বিশ্বের প্রায় ১৬০ টি দেশের ১১,৫০০ টি বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রহণ করা হয়ে থাকে। আবার IELTS বিশ্বের প্রায় ১৪০টি দেশের ১১,০০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রহণ করা হয়ে থাকে।
IELTS অথবা TOEFL যে পরীক্ষাই দিতে চান না কেন ভালো স্কোর পেতে হলে আপনাকে বেশি বেশি প্র্যাকটিস করতে হবে। আর প্র্যাকটিস টেস্ট দিতে হবে। তাহলেই আপনারা টেস্টের নিয়মাবলি এবং বিষয়বস্তু সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পাবেন। ইটিএস এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে(www.ets.org/toefl) TOEFL-এর অনেক ফ্রি এবং পেইড ম্যাটেরিয়াল আছে যা আপনাকে একটা ভালো স্কোর তুলতে সহায়তা করবে।
এরকম আরও ব্লগ পড়তে, ক্লিক করুন।
মেহরীন খান
ইন্টার্ন, কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট
YSSE