সিস্ট এমন একটি বিষয় যার সাথে প্রত্যেকেরই পরিচিত হওয়া উচিত, কারণ সেগুলি একজনের স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। সিস্ট সম্পর্কে জানার মাধ্যমে এবং স্বাস্থ্যের উপর এর বিরূপ প্রভাব সম্পর্কে অবগত হওয়ার ফলে ব্যক্তিরা তাদের স্বাস্থ্যকে আরও ভালভাবে পরিচালনা করার জন্য সক্রিয় পদক্ষেপ নিতে পারে।
সিস্ট – যা তরলের একটি অস্বাভাবিক পকেট, অনেকটা ফোস্কার মতো, যা ত্বক এবং অভ্যন্তরীণ অঙ্গ সহ শরীরের বিভিন্ন অংশে হতে পারে। সিস্টের আকার ছোট-বড় কিংবা ভিন্ন ধরনের আকারের হতে পারে।
সাধারণ লক্ষণ হলো, সেই জায়গাটির চারপাশে ফুলে যাওয়া, তবে এটি ব্যাথা করতেও পারে বা নাও হতে পারে। সিস্টের ধরণ এবং অবস্থানের উপর নির্ভর করে। চলুন বিভিন্ন ধরনের সিস্ট সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক ;
১। অ্যারাকনয়েড সিস্ট (Arachnoid cyst) : অ্যারাকনয়েড মেমব্রেন মস্তিষ্ককে ঢেকে রাখে। একটি শিশু অ্যারাকনয়েড সিস্ট নিয়ে জন্মগ্রহণ করতে পারে। অ্যারাকনয়েড সিস্ট হল সবচেয়ে সাধারন ধরণের ব্রেন সিস্ট। মাথার আঘাত বা আঘাতের ফলেও সেকেন্ডারি অ্যারাকনয়েড সিস্ট হতে পারে।
২। ব্রেস্ট সিস্ট (Breast Cyst) : ব্রেস্ট সিস্ট ব্রেস্টের টিস্যুর মধ্যে বিকাশ লাভ করে এবং সাধারণত তরল দিয়ে পূর্ণ হয়। এগুলি স্তনের কোমলতা বা ব্যথার কারণ হতে পারে এবং দক্ষ চিকিৎসকের পরামর্শেরও প্রয়োজন হতে পারে। এগুলি প্রায়শই মহিলাদের মধ্যে সৌম্য এবং সাধারণ, বিশেষ করে তাদের প্রজনন সময়ে। সিস্ট একটি পিণ্ডের মতো মনে পারে এবং কোমল বা বেদনাদায়ক হতে পারে। যদি আপনার একটি স্তন কিংবা উভয় স্তনে পিন্ডের মতো অনুভূত হয় অর্থাৎ আপনি যদি কোন অস্বাভাবিকতা লক্ষ করে থাকেন তাহলে অবশ্যই একজন স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারের সাথে পরামর্শ করা উচিত হবে।
৩। বার্থোলিনস সিস্ট (Bartholin’s cyst) : এটি যোনিপথের কাছে একটি তরল ভরা পিন্ড। এরা বিভিন্ন আকারের হতে পারে। E.coli ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যান্য ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমনের কারণে বার্থোলিন সিস্ট হতে পারে। যদি সংক্রমিত হয় বা ব্যাথা সৃষ্টি হয় তাহলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
৪। সিস্টিক হাইগ্রোমা (Cystic Hygroma) : সিস্টিক হাইগ্রোমা বা লিম্ফ্যাঙ্গিওমা একটি জন্মগত ক্রটি বা অস্বাভাবিক বৃদ্ধি যা সাধারণত শিশুর ঘাড়ে বা মাথায় দেখা যায়। এটি এক বা একাধিক সিস্ট নিয়ে গঠিত এবং সময়ের সাথে সাথে বড় হতে থাকে।
৫। সিস্টিক ইচিনোকোসিস (Cystic echinococcosis) : সিস্টিক ইচিনোকোসিস বা হাইডাটিড রোগ নামেও পরিচিত। এটি টেপওয়ার্মের ডিম দ্বারা সৃষ্ট একটি পরজীবি সংক্রমণ। টেপওয়ার্ম সাধারণত মেষ এবং কুকুরের মতো পোষকদের মধ্যে বাস করে।
৬। ওভারিয়ান সিস্ট (Ovarian cyst) : ওভারিয়ান সিস্ট নারীর প্রজনন ডিম্বাশয়ের ভিতরে বা বাহিরে হতে পারে। যেকোনো বয়সের নারীরা এই জটিলতায় ভুগতে পারে। বেশিরভাগই বিনাইন বা সৌম্য, ব্যাথাহীন এবং কোনো উপসর্গ সৃষ্টি করে না।
বিভিন্ন ধরনের ডিম্বাশয়ের সিস্ট রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে কার্যকরী সিস্ট (যা স্বাভাবিক মাসিক চক্রের অংশ হিসেবে তৈরি হয়) এবং প্যাথলজিক্যাল সিস্ট (যা বিভিন্ন অবস্থার ফলে হতে পারে)। আপনি যদি ক্রমাগত শ্রোণীতে ব্যথা, পেট ফুলে যাওয়া বা অন্যান্য লক্ষণগুলি অনুভব করেন তবে সঠিক চিকিৎসা এবং উপযুক্ত ব্যবস্থাপনার জন্য একজন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে পরামর্শ করা গুরুত্বপূর্ণ।
৭। পাইলোনিডাল সিস্ট (Pilonidal cyst) : পিঠের নিচের অংশের ত্বকে এটি হয়ে থাকে, কখনও কখনও এটি লোমযুক্ত হয়ে থাকে। এটি আকারে ছোট বাম্প থেকে একটি বড় ফোড়া পর্যন্ত হতে পারে। এর লক্ষণগুলো হলো ব্যাথা, লাল হয়ে যাওয়া কিংবা পূজ নিঃসরণ হতে পারে। এক্ষেত্রে নিজের স্বাস্থ্যবিধির উপর খেয়াল রাখা, দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা এড়ানো এই সিস্ট প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে।
৮। সেবেসিয়াস সিস্ট (Sebaceous cyst) : এই সিস্টটি ছোট ছোট পিন্ড বা মুখ, পিঠের উপরের অংশ এবং বুকের উপরের ত্বকের মধ্যে দেখা যায়। এই সিস্টগুলো সাধারণ, এগুলোকে কখনও কখনও এপিডার্মাল সিস্টও বলা হয়।
সিস্ট হল থলির মতো গঠন যা শরীরের বিভিন্ন অংশে হতে পারে। সিস্ট সম্পর্কে জানা গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি ব্যাথা কিংবা অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে। ডিম্বাশয়, ডার্ময়েড, সেবেসিয়াস, গ্যাংলিয়ন, স্তন, কিডনি এবং লিভার সিস্টের মতো বিভিন্ন ধরনের সিস্টের প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্তকরণ, জটিলতা প্রতিরোধ এবং চিকিৎসা সম্পর্কে সচেতন সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সিস্টের লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি সম্পর্কে অবগত হওয়া এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা গ্রহণে সচেতন হওয়া অতন্ত্য গুরুত্বপূর্ণ।
আরোও ব্লগ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
লেখিকা
তৌহিদা
ইন্টার্ন, কনটেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট
YSSE