জীবন গড়ার মূল আলোচ্চ্য বিষয় জানতে আজ আমরা  সবাই উদ্বিগ্ন। নানা প্রশ্নের সম্মুখীন আমরা সকলে। ক্যারিয়ার গঠনে মূল আলোচ্চ্য বিষয় পরিশ্রম নাকি মেধা? এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে আমরা সকলে ব্যস্ত। বির্তকের মাঝে এর উত্তর এখনো প্রকাশ হয়নি। কেউ বলছে ক্যারিয়ারের মূল মেধা আবার কেউ বলছে পরিশ্রম। কোনটির প্রয়োজন আসলে সবচেয়ে বেশি-মেধা নাকি পরিশ্রম, নাকি সফলতার জন্য দুটোরই প্রয়োজন রয়েছে? চলুন এসব প্রশ্নের উদঘাটন করা যাক।

মেধা:  কোনো ব্যক্তির অসাধারণ সৃজনীশক্তি, বুদ্ধিমত্তাবিশিষ্ট গুণাবলী বিশেষকে সাধারণত মেধা নামে অভিহিত করা হয়। মেধার সাহায্যে যে কেউ বিভিন্ন বিষয়ে সহজেই পারদর্শী হয়ে উঠতে পারে। মেধা যা অর্জিত হয় না এটি জন্মগত বিষয়। 

পরিশ্রম : যা বিশেষ্যপদ এবং এর অর্থ মেহনত বা খাটুনি। অর্থাৎ ব্যক্তি জীবনে কোন কাজের ভালো ফল লাভের জন্য কঠোর মনোনিবেশ করে কাজ করার নামই পরিশ্রম।

মেধা পরিমাপের জন্য আইকিউ টেস্ট করা হয়। আইকিউ যুক্তি ও বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের মান নির্ধারনের সুচক। এই মেধা কখনো কখনো জীবনে সফলতা পেতে সামান্য কিছু ভূমিকা রাখে বটে। 

কার্নেগী ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির গবেষণায় দেখা গেছে, মাত্র ১৫ % অর্থনৈতিক ও বানিজ্যিক সফলতার সাথে মেধার কিছু সম্পৃক্ততা আছে আর সিংহভাগ অর্থাৎ ৮৫ % সফলতা এসেছে আলাপ -আলোচনা, সমাযোজন ও নেতৃত্ব দেওয়ার পারদর্শিতা থেকে। 

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে  যারা বাকপটু, কথা বার্তায় সবাইকে খুশি করতে পারে, এক কথায় যারা আকর্ষনীয় বাক্তিত্বের অধিকারী, তাদের গ্রহণযোগ্যতা বেশি। কর্মক্ষেত্রেও তাদের দ্রুত পদোন্নতি হয়। অর্থাৎ, মেধাবীদের কদর সামান্যতম হলেও চলে। অন্যদিকে পরিশ্রমের যুক্তিতে তা অন্য চিত্র বহন করে।

এই পৃথিবীতে সফলতার কোন রেসিপি নেই এমনকি কেউ এটার চাবিকাঠি নিয়েও জন্ম গ্রহণ করে না।কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে সবকিছু অর্জন করতে হয়।

প্রবাদ আছে, ‘পরিশ্রম সাফল্যের চাবিকাঠি’। পরিশ্রমের দ্বারা ভাগ্যের চাবিকাঠি এমনভাবে পরিবর্তন করা সম্ভব, যা অলস মানুষের কাছে অলৌকিক বলে মনে হয়। 

যেকোনো ক্ষেত্রে সফলতার প্রথম শর্ত হল প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও কঠোর পরিশ্রম। তবে এমন কিছু ব্যাক্তির কথা বলি যারা কিনা মেধাবী না হয়েও জীবনে আজ সফল। যাদের বিদ্যাপিঠের ফল তাদের মেধা নয়, তাদের পরিশ্রমই তাদের জীবনের সাফল্যতার বাহক।

বিল গেটসের সাথে মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন পল অ্যালান। প্রোগ্রামিংয়ের নেশায় বুঁদ হয়ে বদ্ধ কম্পিউটার রুমে সেই দীর্ঘ সময়গুলো তারা দুজন একসাথে কাটিয়েছিলেন। অ্যালানও পরবর্তীতে হয়ে উঠেছিলেন সিলিকন ভ্যালির তারকাদের মধ্যে একজন। 

মাইক্রোসফটের ইতিহাসে তৃতীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি হলেন স্টিভ বালমার। তিনি ২০০০ সালের পর থেকে ২০১৪ পর্যন্ত মাইক্রোসফট পরিচালনা করেছিলেন। স্টিভ বালমার সফটওয়্যার জগতে অন্যতম শ্রদ্ধেয় নির্বাহীদের মধ্যেএকজন।  স্টিভ বালমারের জন্ম তারিখ হলো মার্চ ২৪, ১৯৫৬।

এডিসন অফ দ্য ইন্টারনেট বিল জয়ের কথা বলা যাক। তিনি সান মাইক্রোসিস্টেমস এর প্রতিষ্ঠাতা ও কম্পিউটার বিজ্ঞানী। বিল জয় ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগানে এসেছিলেন জীববিজ্ঞানী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে। কিন্তু সেখানের সদ্য প্রতিষ্ঠিত হওয়া কম্পিউটার সেন্টারের কল্যাণে । আর হয়ে ওঠেন সফটওয়্যারের জগতের মহারথীদের একজন। বিল জয় জন্মগ্রহণ করেছিলেন নভেম্বর ৮, ১৯৫৪।

তিনি আর কয়েক বছর আগে জন্ম নিলে হয়তো কম্পিউটার বিজ্ঞানী বিল জয়ের পরিবর্তে আমরা জীববিজ্ঞানী বিল জয়কে পেতাম। এছাড়া সান মাইক্রোসিস্টেমসের বাকি তিনজন সহ-প্রতিষ্ঠাতাদের জন্ম তারিখও পড়ে যায় আমাদের সীমার আওতায়;

স্কট ম্যাকনেলি নভেম্বর ২৩, ১৯৫৪, 

ভিনোদ খোসলা জানুয়ারি ২৮, ১৯৫৫ এবং 

অ্যান্ডি বেখটোলশাইম সেপ্টেম্বর ৩০, ১৯৫৫। 

উপরিক্ত ব্যাক্তিদের মেধার বিকল্প ছিলো পরিশ্রম। আমরা আরেকজন বিশ্ব বিখ্যাত ব্যাক্তির কথা বলি যার হাত ধরেই পদার্থবিজ্ঞানীদের যুগান্তরকারী সূচনা। তিনি আর কেউ নন আইনস্টাইন -যার মেধা বলতে পরিশ্রমই সবকিছু, তার জীবন পর্যালোচনা করলে বুঝা যায় মেধার বদলে পরিশ্রমই তার অনন্য আবিষ্কারের ধারক ও বাহক।

জীবনে সফল হওয়ার এক এবং অন্যতম জাদুকাঠি হল পরিশ্রম। যদি এই জাদুকাঠি ব্যাক্তি জীবনে থেকে থাকে তবে জীবনে সফল হতে কোন বাধায় আটকায় না। 

পরিশ্রম ভাগ্যের প্রসূতি। কঠোর পরিশ্রমের ফলে সব কিছু অর্জন করা সম্ভব। কর্মের মাধ্যমে মানুষ তার ভাগ্য গড়ে তোলে। আর এই পরিশ্রমই সৌভাগ্য নিয়ে আসে মানব জীবনে। অন্যদিকে মেধা স্রষ্টা প্রদত্ত হওয়ার শর্তেও তা ধারা সফল্য অর্জন হওয়া সম্ভব নয় যদি না পরিশ্রম করা হয়।

সর্বোপরি বলা যায় পরিশ্রম সাফল্যের আলোচ্চ বিষয়, মেধা সাফল্য অর্জনের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখলেও পরিশ্রমের ভূমিকা সম্পর্কে অবগত হলে এর কদর কিন্তু একটু ভিন্ন রকমই হবে।  কারণ কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায় হলো সাফল্যের মূল পন্থা।

এরকম আরো ব্লগ পড়তে, ক্লিক করুন। 

লেখিকা

মোরশেদা বেগম

ইন্টার্ন, কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট

YSSE