প্রবাদে আছে,

সুস্থ দেহ, সুস্থ মন, কর্মব্যস্ত সুখী জীবন

স্বাস্থ্যই আমাদের সকল সুখের মূল, আর এই সুস্বাস্থ্য গঠনের জন্যে প্রয়োজন কিছু স্বাস্থ্য ব্যাবস্থাপনা। স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা হলো সুনির্দিষ্ট উপয়ায়ের মাধ্যমে দৈহিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া। সঠিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার মধ্যে জীবনধারা পছন্দ, নিয়মিত চিকিৎসা পরীক্ষা, রোগ প্রতিরোধ এবং বিদ্যমান স্বাস্থ্য অবস্থার কার্যকর ব্যবস্থাপনার সমন্বয়ের মাধ্যমে একজনের স্বাস্থ্য বজায় রাখা এবং উন্নত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। আমাদের তাই সুস্বাস্থ্যের জন্যে সঠিক দিক নির্দেশনা প্রয়োজন। সঠিক স্বাস্থ্য ব্যাবস্থাপনার মাধ্যমে আমরা সকলের সুসাস্থ্য নিশ্চিত করতে পারি। নিচে সুস্বাস্থ্য অর্জনের জন্যে ৯টি স্বাস্থ্য ব্যাবস্থাপনা উল্লেখ্য করা হলোঃ

  1. স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর খাদ্যঃ প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় সুষম খাবার রাখা অত্যাবশ্যক। কেননা সুষম খাদ্য আপনার দৈনন্দিন জীবনের সকল পুষ্টিচাহিদা পূরন করে থাকে। খাবারে ফল, সবজি, গোটা শস্য, চর্বিহীন প্রোটিন এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি সমৃদ্ধ সুষম খাদ্য বজায় রাখতে হব। সব সময় হাইড্রেটেড থাকার চেষ্টার পাশাপাশি প্রক্রিয়াজাত খাবার, চিনিযুক্ত পানীয় এবং অতিরিক্ত লবণের ব্যবহার সীমিত করতে হবে। আমরা বেচে থাকার জন্যে খাবার গ্রহন করে থাকি, তবে খাবারের অনিমিত আহার এবং গুনাগুন কে গুরুত্ব কম দিলে তা শরীরের সুস্বাস্থ্য অর্জনে বাধা দেবে। 
  2. শারীরিক এবং মানসিক ব্যায়ামঃ নিয়মিত শারীরিক ব্যায়ামে নিয়োজিত থাকতে হবে। যেমনঃ অ্যারোবিক কার্যকলাপ, শক্তি প্রশিক্ষণ, নমনীয়তা ব্যায়াম এবং ভারসাম্য ব্যায়াম ইত্যাদি। প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে 150 মিনিটের মাঝারিতীব্রতার বায়বীয় ব্যায়াম বা 75 মিনিট জোরালোতীব্র ব্যায়ামের অভ্যাশ গড়ে তুলতে হবে। বিভিন্ন খেলাধূলায় অংশগ্রহন করলেউ অনেক শারীরিক ব্যায়াম হয়ে যায়, যেমনঃ ফুটবল। শারীরিক ব্যায়ামের পাশাপাশি মনবল কে দৃঢ়  রাখার জন্যে প্রয়োজন মানসিক ব্যায়াম। যেমনঃ ইয়োগা। সুস্বাস্থ্যের জন্যে শুধু শারীরিক ব্যায়ামই নয় বরং মানসিক অবসাদ দূর করার জন্যে মানসিক ব্যায়াম প্রয়োজন। 
  3. পর্যাপ্ত ঘুমঃ একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ঘুমের সময়সূচী স্থাপন করতে হবে এবং প্রতি রাতে 7-9 ঘন্টা মানসম্পন্ন ঘুমের লক্ষ্য রাখতে হবে। কারন দৈনন্দিন জীবনের সকল অবসাদ দূর করার উপযুক্ত মাধ্যম হলো ঘুম। ঘুমের মান উন্নত করার জন্য একটি অনুকূল ঘুমের পরিবেশ তৈরি করতে হবে এবং শিথিলকরণ কৌশল অনুশীলন করতে হবে। এতে শরীর আবারো কাজ করার শক্তি ফিরে পাবে ফলে শরীর সুস্থ্য থাকবে।
  4. স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টঃ মানসিক চাপ কমানোর কৌশল আয়ত্ত করতে হবে, যেমন মননশীলতা, ধ্যান, গভীর শ্বাস, যোগব্যায়াম, বা মানসিক চাপের মাত্রা লাঘব করতে পারে এমন বিভিন্ন পদ্ধতি আতত্ত করতে হবে। স্বাস্থ্যকর মোকাবেলা করার পদ্ধতি বিকাশ করতে হবে এবং প্রয়োজনে পেশাদার সহায়তা নিতে হবে। স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট এর সব চেয়ে বড় একটা মাধ্যম হিসেবে আপনার নিজস্ব ধর্মীয় চর্চা অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
  5. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষাঃ প্রতিরোধমূলক স্ক্রীনিং, টিকা এবং স্বাস্থ্য মূল্যায়নের জন্য আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে নিয়মিত চেকআপের সময়সূচী নির্ধারণ করতে হবে। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে স্বাস্থ্যের অনেক ত্রুটি, ঘাটতি ইত্যাদি সম্পর্কে জানা যায়। ফলে সুনির্দিষ্ট চিকিৎসার মাধ্যমে সহজেই সুস্বাস্থ্য পুঃন্রুদ্ধার করা যায়।
  6. ঔষধ ব্যবস্থাপনাঃ আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর দ্বারা নির্দেশিত পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন এবং তাদের সাথে কোন উদ্বেগ বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করতে হবে। ওষুধের একটি আপডেট তালিকা রাখতে হবে সাথে এবং প্রতিনিয়ত সেটা স্বাস্থ্য কর্মীদের সাথে আলোচনে করতে হবে।
  7. অস্বাস্থ্যকর পদার্থ এড়িয়ে চলাঃ ধূমপান, অত্যধিক অ্যালকোহল সেবন এবং বিনোদনমূলক ড্রাগ ব্যবহার এড়িয়ে চলতে হবে। প্রেসক্রিপশন এবং ওভারদ্যকাউন্টার ওষুধের প্রতি সচেতন থাকতে হবে এবং যথাযথ ডোজ এবং ব্যবহারের নির্দেশাবলী অনুসরণ করতে হবে।
  8. স্বাস্থ্য শিক্ষা সচেতনতাঃ সুস্বাস্থ্য অর্জনের জন্যে প্রয়োজনীয় কিছু সাধারন শিক্ষা থাকা উচিত, যেমনঃ কোন জিনিসটা স্বাস্থ্যের জন্যে ভালো, কোন টা স্বাস্থ্যের জন্যে ক্ষতিকর সেগুলো সম্পর্কে সঠিক ধারনা রাখা অতযাবশ্যকীয়। আপনার স্বাস্থ্য জ্ঞান বাড়াতে স্বাস্থ্য শিক্ষা কার্যক্রম, কর্মশালা বা সেমিনারে অংশগ্রহণ করতে পারেন
  9.  স্বাস্থ্যবিধি এবং স্যানিটেশনঃ নিয়মিত হাত ধোয়া এবং সঠিক দাঁতের যত্ন সহ ভাল ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখার চেষ্টা। সংক্রমণ এবং রোগ প্রতিরোধের জন্য বাসস্থান এবং কাজের জায়গাগুলি পরিষ্কার এবং স্বাস্থ্যকর রাখা অতি প্রয়োজন। খাবার আগে ও পরে হাত নিয়মিত ধুয়ে নেওউয়া, স্বাস্থ্যকর টয়লেট ব্যাবহার, হাতের নখ কাটা সহ অন্যান্য স্বাস্থ্য বিধি যথা নিয়মে মেনে চলতে পারলে সহজেই সুস্বাস্থ্য অর্জন করা সম্ভব।

পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, আমাদের সুস্বাস্থ্য গঠনের জন্যে প্র্যোজন কঠোর মানসিক পরিকল্পনা। কারন সুস্বাস্থ্য চাইলেই সেগুলো অর্জন করা সম্ভন নয় যদিনা থাকে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা। কঠোর সংকল্প করলে সেই সংকল্প আমাদের নিয়ে যেতে সাহায্য করবে উৎফুল্লের দিকে। এতে আমাদের শুধু শরীর নয় বরং থাকবে ভালো মন।সঠিক স্বাস্থ্য ব্যাবস্থাপনা আমাদের এনে দেবে এভাবে সুস্বাস্থ্য এবং মনোরম জীবন।

আরোও ব্লগ পরতে এখানে ক্লিক করুন।

 

লেখক

মোঃ রায়হান কবীর 

ইন্টার্ন, কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট

YSSE