চমৎকার দৃশ্য দেখার সুযোগ থাকলেও, বাড়ি থেকে এক বছর দূরে গিয়ে, মহাশূন্যের আন্তর্জাতিক একটি স্টেশনে গিয়ে থাকার কথাটি কেউ কখনও চিন্তা করতে পেরেছে? কিন্তু প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষ আজ সুদুর মহাকাশে পাড়ি জমিয়েছে তো বটেই সাথে থাকার মতো ছোটখাটো ব্যবস্থাও করেছে। এমনিই কিছু অবিস্মরণীয় তথ্যবহুল ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে আজকের ব্লগে।
এক বছরের বেশি সময় আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে আটকে ছিলেন রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের ৩ নভোচারী। অবশেষে তাঁরা পৃথিবীতে ফিরেছেন। তিনজনের মধ্যে দুজন রাশিয়ার নভোচারী ও বাকি একজন যুক্তরাষ্ট্রের। কাজাখস্তানের একটি প্রান্তিক এলাকায় অবতরণ করেন ওই তিন নভোচারী।
অনাকাঙ্খিত ঘটনায় মহাকাশে আটকে পড়ায় যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশচারী ফ্রাঙ্ক রুবিও— মার্কিন নভোচারী হিসেবে দীর্ঘ সময় মহাকাশে থাকার রেকর্ড গড়ে ফেলেছেন!
মহাকাশে অবস্থানের সময়কাল :
এই তিন মহাকাশচারীর মিশন ছিল ৬ মাস বা ১৮০ দিনের। কিন্তু কিছু ত্রুটির কারণে সেই মিশনের দৈর্ঘ্য গিয়ে দাঁড়ায় ৩৭১ দিনে যা কিনা প্রায় এক বছরেরও বেশি সময়।
এই মিশনটি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের মহাকাশ মিশন। তবে মহাকাশে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় থাকার রেকর্ডটি রাশিয়ার দখলে। দেশটির মহাকাশচারী ভ্যালেরি পলিয়াকভ ১৯৯৪ সালের জানুয়ারি থেকে ১৯৯৫ সালের মার্চ পর্যন্ত ৪৩৭ দিন পর্যন্ত মহাকাশে অবস্থান করেছিলেন।
মহাকাশচারী ত্রয়—নাসার ফ্র্যাঙ্ক রুবিও ও রাশিয়ার সের্গেই প্রকোপিয়েভ এবং দিমিত্রি পেতেলিন আগেও পৃথিবীতে ফেরার চেষ্টা করেছেন। তবে মহাকাশীয় বর্জ্যে ‘স্পেস জাঙ্ক’র সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে তাদের যাত্রায় ব্যাঘাত ঘটে এবং আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার সময় তাদের বহনকারী মহাকাশযানটির সবটুকু শীতলীকারক ‘তরল কুলান্ট’ পদার্থ হারিয়ে ফেললে তাদের যাত্রা বিলম্বিত হয়।
এরপর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে নতুন করে আরেকটি ক্যাপসুল সেখানে পাঠানো হয়। এই ক্যাপসুলে করেই পৃথিবীতে ফিরে এসেছেন তারা।
মহাকাশযানের ত্রুটি :
আগের ক্যাপসুলটিতে একটি ছিদ্র ধরা পড়েছিল। তখন রাশিয়ার মহাকাশ বিজ্ঞানীরা জানিয়েছিলেন, তারা সন্দেহ করছেন ক্যাপসুলটিতে একটি স্পেস জাঙ্ক আঘাত হেনেছে।
ওই সময় ক্যাপসুলটির তরল পদার্থ বের হয়ে যাওয়ার পর— মহাকাশচারীদের জীবনের নিরাপত্তার কথা ভেবে গত বছরের শেষের দিকে ক্যাপসুলটি খালি ফিরিয়ে নিয়ে আসে রাশিয়ার মহকাশ গবেষণা সংস্থা।
মূলত চলতি বছরে ফেব্রুয়ারি মাসে এই তিনজনের ফেরার কথা ছিল। কিন্তু রাশিয়া তাদের ফেরত আনার জন্য প্রথমবার যে সয়ুজ মহাকাশযান পাঠিয়েছিল সেটি মহাকাশের কোনো বস্তুর আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করেন, মহাকাশযানটির কুল্যান্ট বা রেডিয়েটর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাঁরা আশঙ্কা করেছিলেন, এই অবস্থায় মহাকাশচারী আনতে তা তাদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। পরে মহাকাশযানটিকে খালি ফিরিয়ে আনা হয়।
কিন্তু রাশিয়ার হাতে নতুন কোনো সয়ুজ মহাকাশ যান প্রস্তুত ছিল না যার মাধ্যমে তড়িঘড়ি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে আটকে পড়া নভোচারীদের ফিরিয়ে আনা যায়। অবশেষে চলতি মাসের শুরুর রাশিয়া আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে নতুন একটি মিশন পাঠায়। যা সেখানে প্রায় দুই সপ্তাহ আগে পৌঁছায়। পরে সেই যানে করেই গতকাল বুধবার ওই তিন মহাকাশচারী পৃথিবীতে ফিরে আসেন।
নাসার তথ্য অনুসারে, রুবি, সের্গেই প্রকোপিয়েভ এবং দিমিত্রি পেতেলিন এই সময়ের মধ্যে ১ লাখ ৫৭৪ মাইল ভ্রমণ করেছে এবং পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ৫ হাজার ৯৬৩ বার আবর্তন করেছে।
মহাকাশচারীদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা :
জনপ্রিয় গণমাধ্যমে মহাশূন্য বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর বাইরে অবস্থান, খাবার গ্রহণ, নতুন পরিবেশে অভিযোজন নিয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন। বিজ্ঞানিদের তেমন কিছু অভিজ্ঞতার চুম্বক অংশের তুলে ধরা হলো-
➤ “আমরা নভোচারীরা মহাশূন্যে যাই। হয়তো একদিন আমরা মঙ্গলে যাবো। তখন হয়তো সেখানে আমাদের লম্বা সময় ধরে থাকতে হবে। তাই আমরা মহাশূন্যে থেকে বোঝার চেষ্টা করি, সেখানে লম্বা সময় থাকতে কেমন লাগবে? আর এজন্য একটি স্পেস স্টেশন হচ্ছে আদর্শ জায়গা। কিন্তু মহাশূন্যে থাকাটা ছুটি কাটানোর মতো কোন ব্যাপার নয়। সেখানে তাদের অনেক কাজ করতে হয়।”
➤”ভোর ছয়টার সময় আমাদের ঘুম থেকে উঠতে হয়। সেখানকার আমাদের কাজকর্মকে তিনটা ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। প্রথমত বৈজ্ঞানিক গবেষণা। এরপর আছে স্টেশনের বিভিন্ন হার্ডওয়্যার মেরামত করা বা ঠিকঠাক রাখা। এর বাইরে আমাদের প্রতিদিন অনেক ব্যায়ামও করতে হয়।”
➤”আমাদেরকে হয়তো বিজ্ঞানের অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার চালক বলা যেতে পারে।
যখন অনেক দিন চলে যায়, তখন আমরা স্পেস স্টেশনের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখি। বিশেষ করে যেসব পরীক্ষা নিরীক্ষা চালানো হয়েছে, সেগুলো নজরদারি করি।”
➤”মাঝে মাঝে আমরা পৃথিবীকে দেখি। বেগুনি নীলের মাঝে পৃথিবীকে দেখতে খুব ভালো লাগে। তখন আমাদের নিজেদের খুব ভাগ্যবান মনে হয়, যে এই সুন্দর স্থানটি আমাদের ঠিকানা। কিন্তু একই সময় পৃথিবীর অনেক জায়গা দূষণে আক্রান্ত বলেও দেখতে পাই। এখান থেকে পরিষ্কার বোঝা যায় যে, পৃথিবী কিভাবে পাল্টে যাচ্ছে।
এমনিই সুন্দর সুন্দর ব্লগ পড়তে হলে আমাদের সাথেই থাকুন।
এরকম আরো ব্লগ পড়তে ক্লিক করুন।
লেখিকা,
ফারিহা আলিফ
ইন্টার্ন, কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট
YSSE