চাকরি এখন এক সোনার হরিণের নাম। বর্তমান যুগে ভালো সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন এবং মনের মতন চাকরি পাওয়া একটি কঠিন কাজ।
আবার বর্তমান চাকরির বাজারে আবেদন করতে গেলে দেখা যায় অভিজ্ঞতা ছাড়া প্রাথমিক আবেদন করাও কঠিন কাজ! কেননা প্রতিটি কোম্পানিই চায় একজন দক্ষ প্রার্থী নিয়োগ দিতে। কিন্তু একজন সদ্য পড়াশোনা শেষ করা চাকরি প্রত্যাশী হিসেবে নিজেকে দক্ষ ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রমাণ করবেন কী করে? এর সহজ উত্তর হতে পারে ইন্টার্নশিপ।
ইন্টার্নশিপ কী:
ইন্টার্নশিপ কথাটা আমরা সবাই কমবেশি শুনেছি। নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে পারিশ্রমিকের বিনিময়ে বা বিনা পারিশ্রমিকে কাজ শেখা, দক্ষতা বৃদ্ধি এবং অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য কাজ করাকেই ইন্টার্নশিপ বলে।
আর যারা ইন্টার্নশিপ করে তাদেরকে বলা হয় ইন্টার্ন। সাধারণত যে যেই বিষয়ে পড়াশুনা করে তারা সেই বিষয় রিলেটেড কাজের উপর ইন্টার্নশিপ করে। ইন্টার্নশিপ মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে, পেইড ইন্টার্নশিপ ও আনপেইড ইন্টার্নশিপ।
সাধারণত কোন ইন্টার্নশিপের মেয়াদ ৩ মাস থেকে ১ বছর হয়ে থাকে। শিক্ষার্থীরা ইন্টার্নশিপের মাধ্যমে কর্পোরেট কালচার সম্পর্কে বাস্তব ধারণা গ্রহণ করতে পারে। একজন শিক্ষার্থী ইন্টার্নশিপের মাধ্যমে কর্ম পরিবেশ সম্পর্কে বাস্তব অভিজ্ঞতা লাভ করে যা পরবর্তীতে তাদের জীবনে স্থায়ী কর্মক্ষেত্রের সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।
কোথায় ইন্টার্নশিপ করবেন :
আপনার পঠিত বিষয় আর ক্যারিয়ার পরিকল্পনার সাথে সামঞ্জস্য রেখে ইন্টার্নশীপের জন্য প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করবেন। অর্থাৎ আপনি যে সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়তে চান সেই সব কোম্পানিতে ইন্টার্নশিপের জন্য আবেদন করতে পারেন।
যেভাবে ইন্টার্নশীপের খোঁজ পাবেন :
অধিকাংশ কোম্পানি তাদের ওয়েবসাইটে ইন্টার্নশিপের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে থাকে। এছাড়াও আপনি বিভিন্ন জব ফেয়ার, অন লাইন জব পোর্টাল, লিঙ্কডইন, বিভিন্ন ফেসবুক ভিত্তিক গ্রুপ আর পেইজে ইন্টার্নশীপের সার্কুলার পেতে পারেন। এর পাশাপাশি খোঁজ পেতে পারেন আত্নীয়-স্বজন, পরিচিত সিনিয়রদের মাধ্যমেও যারা বিভিন্ন জায়গায় চাকরি করছে।
ইন্টার্নশিপ খোঁজার সময় যেসব বিষয়ে গুরুত্ব দেবেন :
বেশিরভাগই আসলে বুঝতে পারে না কোন ক্ষেত্রে বা কোন বিষয়গুলোকে মাথায় রেখে ইন্টার্নশিপ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত। তবে ইন্টার্নশিপ খোঁজার ক্ষেত্রে নিম্নে দেওয়া বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখতে পারেন :
- নিজস্ব আগ্রহ খোঁজা
- কোম্পানির তালিকা তৈরি করা
- একটি সিভি তৈরি করা
- দক্ষতার বিকাশ ঘটানো
- নেটওয়ার্ক তৈরি করা
ইন্টার্নশিপ কেন গুরুত্বপূর্ণ ?
আপনার আগামীর কর্মজীবনকে সহজ করতে ইন্টার্নশিপের কোন বিকল্প নেই। পুরোদমে পেশাজীবন শুরু করার আগে এটাই হলো নিজের দক্ষতা বা দুর্বলতাগুলো খুঁজে বের করার সুযোগ। ইন্টার্নশিপের মাধ্যমে আপনি কর্মের বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করবেন, যা আপনাকে ভবিষ্যতে অন্যান্য প্রতিযোগীর চেয়ে এগিয়ে রাখবে।
- অভিজ্ঞতা : ইন্টার্নশিপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা হলো হাতে-কলমে বাস্তবিক অভিজ্ঞতা অর্জন করা যায়, যা পরবর্তীতে আপনার ক্যারিয়ার গড়ায় সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
- নেটওয়ার্কিং : ইন্টার্নশিপের সময়কালে প্রতিষ্ঠান সমূহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, কর্মী, সহকর্মী, ব্যক্তিদের সাথে নেটওয়ার্ক তৈরি হয়।
- ফুলটাইম চাকরি : ইন্টার্নশিপের ফলে ইন্টার্নশিপ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ফুলটাইম কিংবা পার্টটাইম চাকরির অফার বেশি বেশি পাওয়া যায়।
- প্রফেশনাল সিভি : ইন্টার্নশিপ একজন শিক্ষার্থী বা অন্যদেরও প্রফেশনাল সিভি তৈরিতে সহায়তা করে। কাজের অভিজ্ঞতা, দক্ষতা হিসেবে ইন্টার্নশিপটা সিভিতে যুক্ত করা যায়, এর ফলে সিভিটা নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পায়।
- মেন্টরশিপ : ইন্টার্নশিপ চলাকালীন সময় ঐ প্রতিষ্ঠানের কর্মকতার্দের কাছ থেকে ক্যারিয়ার গড়ার বিষয়ে পরামর্শ পেয়ে থাকবেন। এছাড়া প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন মিটিংয়ে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন পযার্য়ের ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকেও ক্যারিয়ার গাইডলাইন পাবেন।
- সময় ব্যবস্থাপনা : আমরা সবাই জানি কর্মক্ষেত্রে আমাদেরকে প্রতিনিয়তই নির্দিষ্ট ডেডলাইন মেনে চলতে হয়। ইন্টার্নশিপের সময়টা আপনাকে সময় ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে অধিক সচেতন করে তুলবে।
- যোগাযোগ দক্ষতা : ইন্টার্নশিপ করার সময় আপনাকে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিভাগের অনেকের সাথে কাজ করতে হতে পারে। সেসব ক্ষেত্রে আপনাকে সবার সাথে যোগাযোগের জন্য মেইল কিংবা সরাসরি মোবাইলে কথা বলার মাধ্যমে বার্তা আদান-প্রদান করতে হবে যা আপনার যোগাযোগ দক্ষতা বাড়িয়ে তুলবে।
- কর্পোরেট জগৎ : ইউনিভার্সিটি আর কর্পোরেট লাইফ আসলে ভিন্ন দুটি জগৎ। যেখানে বন্ধু-বান্ধব নয় চারপাশে বরং ভিন্ন বয়সী, ভিন্ন ভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের, ভিন্ন ভিন্ন দক্ষতার, নানান সংস্কৃতির আর বর্ণের লোকজনের দেখা পাবেন। ইন্টার্নশিপ করার মাধ্যমে আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা আর বাস্তব জীবনের কাজের পার্থক্যগুলোকে চিহ্নিত করতে পারবেন।
ভালো ইন্টার্নশিপের মাধ্যমে পছন্দের ক্যারিয়ারের পথে হাঁটা সহজ হবে। সেই সঙ্গে একজন নতুন চাকরি পদ প্রার্থী হিসেবে অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকার সুযোগ বৃদ্ধি হবে। শুধু শিক্ষাগত দিক থেকেই নয় বরং পেশাগত দিকেও আপনি যে অন্যদের থেকে দক্ষ তাই প্রমাণ করতে পারে এই ইন্টার্নশিপ।
এরকম আরও ব্লগ পড়তে ক্লিক করুন।
লেখিকা
মেহরীন খান
ইন্টার্ন, কনটেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট
YSSE