সন্তানের সুন্দর ও আদর্শ জীবন গঠনে মা – বাবার ভূমিকা অতুলনীয়। প্রত্যেক বাবা মা’ই চান তাদের সন্তান যেনো একজন ভালো মানুষ হয়ে বেড়ে উঠে। এর জন্য তাদের চেষ্টার অন্ত থাকে না। দেশ, সংস্কৃতি, বর্ণ, গোত্র ভেদে সব বাবা-মার একটাই উদ্দেশ্য – তা হলো সন্তানের সঠিকভাবে গড়ে তোলা।
তবে এখানে উল্লেখযোগ্য হলো, যুগ পাল্টেছে ; সেই সাথে পাল্টেছে ছেলেমেয়েদের আচার-আচরন, চাহিদা। স্বাভাবিকভাবেই প্যারেন্টিং-এ এর প্রভাব পড়ছে। যার ফলস্বরূপ ইফেক্টিভ প্যারেন্টিং, পসিটিভ প্যারেন্টিং, জেন্টেল প্যারেন্টিং এসব কনসেপ্টের চর্চা যেন বেড়েই চলেছে।
চলুন এই ব্লগে জেনে নেয়া যাক ইফেক্টিভ প্যারেন্টিং কি এর প্রয়োজনীয়তা এবং কিভাবে ইফেক্টিভ প্যারেন্টিং চর্চা করা যায়।
ইফেক্টিভ প্যারেন্টিং বলতে মূলত প্যারেন্টিং এর এমন একটি “ধারণাকে” বোঝায় যেখানে একটি ইতিবাচক পরিবেশ সৃষ্টি করার মাধ্যমে সন্তানের সর্বোচ্চ বিকাশ নিশ্চিত করা হয়। ইফেক্টিভ প্যারেন্টিং এর মূল লক্ষ্য হলো সন্তানের সুষ্ঠু শারীরিক, মানসিক ও মানবিক বিকাশ নিশ্চিত করা। একি সাথে মা-বাবা ও সন্তানের মধ্যে হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা।
ইফেক্টিভ প্যারেন্টিং সন্তানকে আদর্শ মানুষ হিসেবে তৈরি করতে অতুলনীয় অবদান রাখে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তার ব্যক্তিগত ও কর্মজীবনে কিরূপ আচরন করবে তা অধিকাংশভাবে নির্ভর করে শৈশবে তাকে কিভাবে গড়ে তোলা হয়েছে।
ইফেক্টিভ প্যারেন্টিং এর সর্বপ্রথম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো যোগাযোগ সুদৃঢ় করা। একজন সন্তান ও মা-বাবার মধ্যে যোগাযোগ ও বোঝাপড়া যতোটা দৃঢ় হবে সন্তানের সঠিক বিকাশ ততটাই সুনিশ্চিত হবে।
মা-বাবা সন্তানের পরম বন্ধু। সন্তান যখন ছোট থাকে তখন তার আধো আধো বোলে মা বাবাকে সারাক্ষণ মাতিয়ে রাখে। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় সেই একি সন্তান কিছুটা বড় হওয়ার পর মা-বাবার সাথে তার মনের ভাব ঠিকমতো প্রকাশ করতে পারেনা, বলা চলে প্রকাশ করতে চায় না।
কেন দাড়িঁয়ে যায় মা-বাবা ও সন্তানের মধ্যে এই অদৃশ্য দেয়াল? এর জন্য দায়ী কিন্তু প্যারেন্টিং টেকনিক।
সন্তানের যেকোনো ভুলে অথবা খারাপ আচরণে যদি তাকে প্রচন্ড বকাঝকা করা হয়, সেক্ষেত্রে ছেলেমেয়েদের মনে এক প্রকার ভীতি সৃষ্টি হয়। বকাঝকা না করে, বরং কেনো ভুলটা করেছে সন্তান সেই কারণ অনুসন্ধান গুরুত্বপূর্ণ বেশি।
বাবা-মার উচিত সন্তানের মনোভাব, চাহিদা ও দৃষ্টিভঙ্গি বোঝার চেষ্টা করা তারপর ভুল সংশোধনের জন্য সন্তানকে সুন্দর পরামর্শ দেয়া। এতে করে বাচ্চা যেমন তার ভুলটা বুঝতে পারে সেই সাথে তার মধ্যে ভালো খারাপের একটি ধারণাও গড়ে উঠে, যা পরবর্তী জীবনে তাকে আদর্শ মানুষে পরিণত করে।
সন্তানের সাথে বাবা-মার ভীতিপূর্ণ নয়, হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা উচিত। “কানেক্ট বিফোর ইউ কারেক্ট” – এই নীতিটি তাই বলা চলে ইফেক্টিভ প্যারেন্টিং এর মূলমন্ত্র।
ইফেক্টিভ প্যারেন্টিং এর পরবর্তী ধাপ হলো সন্তানকে কঠোর নির্দেশনা প্রদান থেকে বিরত থাকা। এটা করো, ওটা করো, এটা করা যাবে না, ওটা করা যাবে না – এমন সার্বক্ষণিক কঠোর নির্দেশনা সন্তানের বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এতে করে সন্তানের নিজে নিজে কোনো কাজ করার, কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা গড়ে উঠে না। ধীরে ধীরে বাচ্চাদের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্তার অভাব দেখা দেয়। এছাড়াও অতিরিক্ত নির্দেশনা বাচ্চাদের মানসিক চাপ প্রদান করে যা সুষ্ঠু বিকাশের অন্তরায়।
তাই মা বাবার উচিত সন্তান কে তার নিজের মত করে নিজস্ব কাজগুলো সম্পাদন করতে দেওয়া যা তাদের মানসিক বিকাশেও সাহায্য করবে। সেই সাথে অবশ্যই সময়ে সময়ে সঠিক দিকনির্দেশনা দিয়ে পাশে থাকা।
ইফেক্টিভ প্যারেন্টিং এর তৃতীয় ধাপ হলো সন্তানের মধ্যে আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলা। অন্য বাচ্চার সাথে তুলনা না করে, বরং সন্তান নিজ শ্রম, মেধা ও সময় দিয়ে কিছু করার চেষ্টা করেছে এই বিষয়কে প্রাধান্য দেয়া। অন্যের সাথে তুলনা করলে বাচ্চা হীনমন্যতায় ভুগতে পারে এবং তার মধ্যে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি দেখা দেয়। সন্তানের কাজের প্রশংসা করার পাশাপাশি আরো কিভাবে ভালো করা যায় সে বিষয়ে পরামর্শ দিলে, বাচ্চার মধ্যে নতুন উদ্যমের সৃষ্টি হয়।
কোনো মা-বাবাই সন্তানের অমঙ্গল চান না। সন্তানকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে তাঁরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন। তবে যে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে তা হলো, প্রত্যেক মানুষ আলাদা। একেক জনের বোঝার ধরন, চাহিদা, দৃষ্টিভঙ্গি একেক রকম। মা-বাবারা যখন সন্তানের চাহিদার প্রতি খেয়াল করবে, সন্তানকে বুঝতে পারবে তখনই তাঁরা সন্তানের জন্য উপযোগী পরিবেশ ও সঠিক প্যারেন্টিং টেকনিক অবলম্বন করতে পারবেন।
To read more blogs, click here!
Writer
Kaneta Islam
Intern
Content Writing Department, YSSE