আমরা সকল জানি সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ। বলা হয় মানব সভ্যতাকে আশরাফুল মাখলুকাত। বিজ্ঞানও স্বীকৃতি দিয়েছে সৃষ্টির সেরা জীব হলো মানুষ এই কথা।এই বিষয়ে সন্দেহ নেই কারোও।কেননা মানুষের রয়েছে বিভিন্ন নতুন বিষয় শেখার ক্ষমতা, বিভিন্ন গবেষণার দিক উন্মোচন, সমস্যা সমাধানের নানা দিক ইত্যাদি। নতুন দিগন্ত উন্মোচনে মানুষ পারে নানা দিক সমূহ নিয়ে কাজ করতে।তাদের রয়েছে নিজস্ব ভাষা।যার মাধ্যমে মনের ভাব প্রকাশ করা যায় পাশাপাশি প্রকাশ করা যায় আবেগ ও অনুভূতি। এছাড়া মানুষ তৈরি করতে পারে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি যা কাজে লাগিয়ে কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন কাজ সম্পূর্ণ করা যায়।এককথায় মানুষ সৃজনশীল কার্যকলাপে পারদর্শী।
বুদ্ধিমত্তার দিক থেকে মানুষের কাছাকাছি পর্যায়ে রয়েছে শিম্পাঞ্জি ও বানর। এছাড়া ডলফিন, অক্টোপাস, কাক, কুকুর, বিড়াল, টিয়াপাখিরও বুদ্ধিমত্তা অন্যসব প্রাণির চেয়ে উন্নতর। কিন্তু মানুষ খুব সহজে এসব প্রাণিদের নিজের পোষ মানাতে পারে। সেটা সম্ভব হয়েছে মানুষের সবচেয়ে উন্নত মস্তিষ্ক থাকার কারণে। কিন্তু প্রশ্ন হলো- যদি পৃথিবীর সকল প্রাণির মানুষের মতো বুদ্ধিমত্তা থাকতো তাহলে কী হতো? অথবা হঠাৎ করে যদি পৃথিবীর সকল প্রাণি মানুষের মত বুদ্ধিমান হয়ে ওঠে তাহলে কী ঘটতে পারে? মানুষ কি তার আধিপত্য ধরে রাখতে পারবে? অথবা পৃথিবীর সকল প্রাণি কি এরপরও কোনো একক প্রাণির দ্বারা শাসিত হবে?
আপাতদৃষ্টিতে এটি একটি অবাক করার মত এক প্রশ্ন। পৃথিবীর সকল প্রাণির মানুষের মতো বোধসম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। কিন্তু তবুও প্রশ্ন থেকে যায়- যদি কখনো এমন হয় অথবা পূর্বে থেকেই এমন হতো, তাহলে পৃথিবীর প্রাণিকুলে কী ঘটতো? এই প্রশ্নের হাইপোথিটিক্যাল উত্তর হলো ‘বিশৃঙ্খলা’। সকল প্রাণির সমান বুদ্ধিমত্তা থাকার অর্থ হলো একে অপরের উপর কর্তৃত্ব স্থাপনের চেষ্টা করা। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মনস্তাত্ত্বিক বিষয়ের অধ্যাপক (রবিন ডানবারের) মতে- “এমন হলে পৃথিবীর সকল প্রাণী একে অপরকে হত্যা করবে”।
মানবজাতির ইতিহাসের দিকে লক্ষ্য করলেই সমান শক্তির কুফল সম্পর্কে বোঝা যায়। বর্তমান বিশ্বের পরাশক্তিরা একে অপরের উপর আধিপত্য বিস্তার করার জন্য লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করছে। কারণ মানুষ নিজেই অপরিচিত ও নিজের অস্তিত্বের জন্য হুমকির সম্মুখীন এমন কারো প্রতি সদয় নয়। মানুষ আগন্তুক কাউকে দেখলেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে আক্রমণাত্মক আচরণ করে। সেই হিসেবে সকল প্রাণির যদি মানুষের সমান বুদ্ধিমত্তা হয় তাহলে কুকুরকে পোষ মানানো সম্ভব হবে কি? পাশাপাশি অন্যান্য পোষা প্রাণিদের কেমন অবস্থা হবে তখন?এর অর্থ হলো প্রাণিকুলের অন্যান্য প্রাণী মানুষের অধীনস্তে থাকবে না।বলা যায় প্রাণীকুলে যুদ্ধ স্থাপন হবে।এখন প্রশ্ন হলো এই যুদ্ধে জয়ের পাল্লা ভারী হবে কার পক্ষে? এক্ষেত্রে প্রাণিদের বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। যেমন- বর্তমান বিশ্বে যদি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয় তাহলে মালদ্বীপের মতো দেশকে কিন্তু পরাশক্তি দেশসমূহ গণনায় ধরবে না। কারণ এদের সেনাবাহিনীই নেই। বিশেষ কিছু দেশ এই যুদ্ধে সামনের সারিতে থাকবে।
ঠিক তেমনি প্রাণিদের মধ্যে যদি যুদ্ধ শুরু হয় কিছু প্রাণী হিসাবের বাইরে থাকবে। উদাহরণ হিসেবে তৃণভোজীদের কথাই ধরা যাক। এদের দেহে শক্তি যোগানোর জন্য দিনের অধিকাংশ সময় ঘাস খেতে হয়। ফলে এরা অন্যদের সাথে যোগাযোগ, কোনো যন্ত্র তৈরি, নিজেদের সংস্কৃতির বিকাশ অথবা কোনো যুদ্ধে অংশগ্রহণের মতো সময় পাবে না। আবার যারা আমিষ খায় তাদেরও কিছু সমস্যা হবে। কারণ তাদের আমিষ সংগ্রহ করতেই বেশিরভাগ সময় ব্যয় করতে হবে।আবার হাঙর, ডলফিন কিংবা ঘাতক তিমি এই যুদ্ধের বাইরে থাকবে। কারণ তারা সমুদ্রের পানিতে বন্দী। তবে তারা অন্যান্য জলজ প্রাণিদের সাথে লড়াইয়ে লিপ্ত হবে।
প্রাথমিকভাবে তারা মানুষকে নিজেদের খাদ্যে পরিণত করবে। তবে শেষপর্যন্ত তারা মানুষের সাথে পারবে না। কারণ মানুষের কাছে রয়েছে উন্নত প্রযুক্তির অস্ত্রশস্ত্র। যদি সৃষ্টির আদিকাল থেকে মানুষের সমপরিমাণ অন্যদের বুদ্ধি থাকতো, তাহলে হয়তো মানুষকে এসব অস্ত্র তৈরির আগেই অন্য প্রাণির নিয়মিত খাবারে পরিণত হতে হতো। কিন্তু যদি হঠাৎ করে বর্তমান সময়ে কিংবা ভবিষ্যতে সকল প্রাণীর মানুষের সমান জ্ঞানবুদ্ধি হয়, তাহলে বাঘ, সিংহ কিংবা হাতি লড়াইয়ে টিকতে পারবে না। এর বড় কারণ মানুষের হাতে থাকা উন্নত প্রযুক্তি।কিন্তু পৃথিবীর ভয়ঙ্কর মাংসাশী প্রাণীদের চেয়েও বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দাঁড়াবে আমাদের নিকটবর্তী প্রজাতির প্রাণীরা। বিশেষ করে শিম্পাঞ্জি, ওরাংওটাং ও গরিলা। এই প্রাণীদের বুদ্ধিমত্তা মানুষের কাছাকাছি। তারা খুব সহজেই মানুষের তৈরি কম্পিউটারে প্রবেশ করতে পারবে। এছাড়া শারীরিকভাবে তারা মানুষের থেকে এগিয়ে থাকবেই। তারা খুব সহজেই মানুষের তৈরি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে নতুন নতুন প্রযুক্তি তৈরি করতে সক্ষম হবে। এমনকি তারা চাইলে আমাদের প্রযুক্তি হ্যাক করার মতো সক্ষমতাও অর্জন করতে পারবে!
অন্যদিকে ডানবারের মতে, এই যুদ্ধে যদি খুবই ক্ষুদ্র প্রাণী জয়লাভ করে এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এখন যদি এই যুদ্ধে মানুষ হেরে যায় তাহলে কী হবে? যদি মানুষ হেরেও যায় এরপরও যুদ্ধ থামবে না। বরং তা অনন্তকাল ধরে চলমান থাকবে। কিন্তু এটা ভাবার কোনো কারণ নেই যে অন্য কোনো প্রাণী মানুষকে হারাবে। কারণ সকল প্রাণী যে সরাসরি মানুষকে প্রতিপক্ষ মনে করবে তেমন তো নয়। তারা একে অপরের সাথে যুদ্ধ করবে। এমনকি স্বজাতির সাথেও যুদ্ধে লিপ্তে হবে।
পরিশেষে বলা যায় এই যুদ্ধ বাস্তুতন্ত্রের জন্য বড় এক ক্ষতি বয়ে আনবে। পৃথিবীকে বড় এক ক্ষত বয়ে বেড়াতে হবে। তবে শেষ পর্যন্ত মানুষের জয় হবে। কারণ মানুষের চেয়ে কল্যাণময় আর কোনো প্রজাতি নেই। অন্য কোনো প্রাণি মানুষের মতো করে সমস্যার সমাধানও করতে পারবে না। তবে এই বিশৃঙ্খল পরিবেশের শিক্ষা হলো- আমরা প্রকৃতিতে যে ভারসাম্য দেখতে পাই তা একমাত্র ক্ষমতার ভারসাম্যতার কারণেই সম্ভব হয়েছে। দুর্বল ও সবল প্রাণি আছে বলেই প্রাণিকূলে বিশৃঙ্খলা নেই। সবশেষে এটা বলা যায়, পৃথিবীর অন্য প্রাণী যদি মানুষের সমপরিমাণ বুদ্ধিপ্রাপ্ত হয়, তাহলে মানুষ বিলীন হয়ে যাবে এমন ভাবার কোনো কারণ নেই।
এরকম আরো ব্লগ পড়তে, ক্লিক করুন।
লেখিকা
মোর্শেদা বেগম।
ইন্টার্ন, কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট
YSSE