আমাদের প্রকৃতি স্থিতিশীল কোনো বিষয় নয়। এটি সর্বদা গতিশীল। বায়ুমন্ডলের অস্থিতিশীলতা, সমুদ্রস্রোত কিংবা নানা কারনে পৃথিবীর আবহাওয়া অস্থিলিশীল হয়ে উঠে। ফলে প্রকৃতিও সাথে সাথে অস্থিতিশীল হয়ে উঠে। ফলে দরকার হয় বিভিন্ন আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ এবং অস্থিতিশীতলতার পূর্বাভাস প্রদান। 

কিন্তু কিভাবে এই পূর্বাভাস দেওয়া হয়?

আমাদের বাংলাদেশে এমন কিছু সংস্থা আছে যা আভাওয়ার পর্যবেক্ষণ করে নানা পূর্বাভাস দিয়ে থাকে। যেমনঃ BMD, এর পূর্ণরূপ হলো Bangladesh Meteorological Department। এটি একটি বৈজ্ঞানিক অপারেশন মূলক প্রতিষ্ঠান যা প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের অধীনে কাজ করে।BMD উত্তরাধিকার সূত্রে পায় ডিসেম্বব্র মাসের ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের কাছে থেকে।বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ২ টি আঞ্চলিক কেন্দ্র রয়েছে,যথাঃ

১-ঝড় পূর্বাভাস কেন্দ্র,ঢাকা এবং রাজশাহী।

২-আবহাওয়া ও ভূ-প্রাকৃতিক কেন্দ্র, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল ও খুলনা বিভাগ।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তি ব্যাবহার করে বায়ুমন্ডলীয় বিভিন্ন উপাদান পর্যবেক্ষণ করে, উপাত্ত সংগ্রহ করে এবং উপাত্ত প্রক্রিয়াকরণ করে সংকেতে পরিণত করে এবং পরবর্তীতে আবহাওয়ার পূর্বাভাস প্রদান করে থাকে বিভিন্ন মাধ্যম এর সহায়তায়। বায়ুমন্ডলের বিভিন্ন উপাদানের পাশাপাশি, মেঘ, বৃষ্টিপাত, ঝড়, ঘূর্ণিঝড় সহ বিভিন্ন বায়ুমন্ডলীয় গোলোযোগ এর পূর্বাভাস দিয়ে থাকে।নিচে এর পূর্বাভাস কৌশল বর্ণনা করা হলোঃ

BMD বর্তমানে যে আবহাওয়ার পূর্বাভাস কৌশলটি ব্যবহার করছে তা হল 3 টি পূর্বাভাস কৌশলের সমন্বয়:

1-Steering technique

2-Averaging across previous observations

3-Climatology and persistence

3 টি পূর্বাভাস কৌশল থেকে আউটপুট একত্রিত করার পরিবর্তে, BMD আলাদাভাবে পূর্বাভাস কৌশলগুলির সুবিধা নেয়। এইভাবে BMD-এর আবহাওয়াবিদরা আবহাওয়ার পূর্বাভাস তৈরির জন্য তাদের বিশেষজ্ঞ জ্ঞানের উপর নির্ভর করে।

Steps of weather forecasting at BMD

  • Step 1: Data Collection, interpolation, and analysis of collected data. 

(ডাটা সংগ্রহ,ইন্টারপোলেশন এবং সংগৃহীত ডাটার বিশ্লেষণ)

  • Step 2: Determination of current weather status

(বর্তমান আবহাওয়ার  অবস্থা নির্ণয়)

  • Step 3: Producing forecast 

( আবহাওয়ার পূর্বাভাস তৈরি করা )

Data collection-ডাটা/তথ্য সংগ্রহ

BMD সাধারণত 5টি ভিন্ন উৎস থেকে আবহাওয়া পরিবর্তনশীল পরিমাপ তথ্য গ্রহণ করে-

  • Surface observation(ভূপৃষ্ঠে পর্যবেক্ষণ): বায়ুর তাপমাত্রা,পৃষ্ঠে বায়ুর চাপ,বায়ুর আর্দ্রতা,বায়ুপ্রবাহ,বাতাসের দিক,বাতাসের গতি,সৌর বিকিরণ, বৃষ্টিপাত। 
  • Upper air observation including RADAR (রাডার সহ ঊর্ধ্ব বায়ু পর্যবেক্ষণ): মেঘের ধরণ,বাতাসের দিক,বাতাসের গতি,বিভিন্ন ভূ-সম্ভাব্য উচ্চতায় বায়ুর চাপ।
  • Satellite observation(স্যাটেলাইট পর্যবেক্ষণ): দৃশ্যমান ছবি, ইনফ্রারেড ছবি বা অবলোহিত ছবি, জলীয় বাষ্পের ছবি।
  • Marine observation(সামুদ্রিক পর্যবেক্ষণ):সমুদ্রের স্রোত,সমুদ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রা, সমুদ্র তরংগ,সমুদ্র পৃষ্ঠের কাছাকাছি বায়ুর তাপমাত্রা
  • NCEP and ECMWF reanalysis(NCEP এবং ECMWF পুনবিশ্লেষন) :বিভিন্ন বায়ুমন্ডলীয় এবং মহাসাগরীয় উপাদান।

Data plotting, interpolation, and analysis- 

একবার বিভিন্ন উৎস থেকে ডেটা সংগ্রহ করা হলে, এটি একটি মানচিত্রে প্লট করা হয় এবং বিভিন্ন আবহাওয়ার ভেরিয়েবলে একটি অবিচ্ছিন্ন প্যাটার্ন কল্পনা করতে ইন্টারপোলেট করা হয়।

 চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলির ক্ষেত্রে, যেমন গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়।এক্ষেত্রে বাতাসের দিক এবং গতি বিশ্লেষণ করা হয় যা TC-এর গতিবিধি এবং গতির সাথে সেরা সম্পর্কযুক্ত।আশেপাশের বাতাসের সাথে TC ঘূর্ণির মধ্যে বাতাসের তথ্য তুলনা করার মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়। 

আবার যদি ঊর্ধ্ব বায়ুতে মেঘের পরিমান, জলীয় বাষ্পের পরিমান বিশ্লেষণ করতে চাই, এক্ষেত্রে স্যাটেলাইট সিস্টেম দ্বারা প্রাপ্ত ডাটা বিশ্লেষণ করতে হবে যে মেঘের অবস্থা কেমন,কতটা ঘণ,মেঘের উজ্জলতা কেমন,জলীয় বাষ্পের পরিমান কেমন ইত্যাদি , কোন এলাকায় অধিক জলীয় বাষ্পের স্তর দেখা যাচ্ছে ইত্যাদি।এভাবে বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করেই আবহাওয়া পূর্বাভাস পরবর্তী ধাপে যাওয়া সম্ভব।

Determination of current weather status-

ধাপ 1 এ করা বিশ্লেষণের মাধ্যমে, আবহাওয়াবিদরা বিভিন্ন আবহাওয়ার পরিবর্তনশীলতার বর্তমান অবস্থা মূল্যায়ন করেন।(বিভিন্ন উদাহরণ দিতে পারি যেমনঃ প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে বর্তমান আবহাওয়া কেমন অবস্থায় আছে তা নির্ণয়) অন্য ভেরিয়েবলের উপর একটি ভেরিয়েবলের প্রভাব প্রকাশ করার জন্য বিভিন্ন ভেরিয়েবলের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কও গণনা করা হয়।

Producing forecast-

একবার সমস্ত তথ্য হাতে পেয়ে গেলে, আবহাওয়াবিদরা গুরুত্বপূর্ণ আবহাওয়ার পরিবর্তনের জন্য পূর্বাভাস তৈরি করতে সমস্ত পূর্বাভাস কৌশল ব্যবহার করেন। এই ক্ষেত্রে আবহাওয়াবিদরা তাদের বিশেষজ্ঞ জ্ঞান ব্যবহার করে চূড়ান্ত পূর্বাভাস তৈরি করেন। 

TC(Tropical Cyclone)-এর ক্ষেত্রে, TC-এর ভবিষ্যৎ চলাচলের দিক ও গতি (স্টিয়ারিং এবং পারসিসটেন্স টেকনিক) নির্ধারণ করতে TC-এর বর্তমান এবং সাম্প্রতিক গতি ও গতি স্টিয়ারিং বায়ু প্রবাহকে বিবেচনায় নিয়ে এক্সট্রাপোলেট করা হয়।

বর্তমান TC-এর গতিবিধি এবং গতিকে বঙ্গোপসাগরের পূর্ববর্তী TC-এর সাথে তুলনা করা হয় যেগুলির গঠনের তারিখ, উৎপত্তির অবস্থান এবং একই রকম গতিবিধির বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করা হয়েছিল, উপযুক্ত ঐতিহাসিক অ্যানালগগুলি সনাক্ত করার জন্য। পরবর্তীতে উক্ত ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় টির সম্ভাব্য পূর্বাভাস দেওয়া হয়।

আবার বজ্রঝড় এর ক্ষেত্রে রাডার স্যাটেলাইট প্রযুক্তি ব্যাবহার করে যেখানে দৃশ্যমান, আবলোহিত রশ্নি এবং জলীয় বাষ্প প্রযুক্তি দ্বারা কোনো এলাকায় কি পরিমান মেঘ আছে, কেমন বৃষ্টিপাত হবে, বজ্রঝড় হবে কিনা ইত্যাদির পূর্বাভাস দেওয়া হয়।

আরও ব্লগ পড়তে, ক্লিক করুন। 

 

লেখক

মোঃরায়হান কবীর

ইন্টার্ন, কনটেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট

YSSE