আমি নারী, আমিই পারি
নারীজাতি সমাজের অর্ধাংশ। পৃথিবীর কোন উন্নয়নই নারী সমাজ ব্যতীত সম্ভব নয়।
নারীরা যেমন ঘর-সংসার সামলাতে পটু, ঠিক তেমনি পারে পুরুষের সাথে সমানতালে অর্থনীতির চাকা ঘুরাতে।
কখনো স্নেহময়ী, অনুপ্রেরণাদায়ী আবার কখনোবা অগ্নিমূর্তি ধারণ করে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিরাজমান কুসংস্কার, অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে। তেমনি একজন অনুপ্রেরণার নাম “সানজিদা ইসলাম ছোঁয়া “।
চলুন জেনে নেওয়া যাক এই স্বপ্নবিলাসী অনন্যা সম্পর্কে।
পরিচয়
সানজিদা ইসলাম ছোঁয়া; একজন আত্মপ্রত্যয়ীর নাম। ২০২২ সালে ৬ ডিসেম্বর বিবিসি প্রকাশিত বিশ্বের ১০০ প্রভাবশালী ও অনুপ্রেরণাদায়ী নারীর তালিকায় যার স্থান ২১ নাম্বারে। বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইল থানার আচারগাঁও ইউনিয়নের ঝাউগড়া গ্রামে। বাবা আমিনুল ইসলাম, পেশায় চাকরিজীবী ও মা লিজা আক্তার গৃহিণী। পড়াশোনা করছেন কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রথম বর্ষে।
শুরুটা যেমন ছিল
মূলত তিনি কাজ করেন বাল্যবিবাহ ও যৌতুকের মতো কুপ্রথা নিয়ে। যার শুরুটা হয়েছিল নান্দাইলের পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ে পড়াশোনা চলাকালীন। বিদ্যালয়ে বাল্যবিবাহ ও তার প্রভাব নিয়ে একটি উপস্থাপন দেখে এই বিষয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন।
ঘাসফড়িং-এর যাত্রা
শিক্ষক- শিক্ষিকার উৎসাহ ও সাতজন সহপাঠীদের নিয়ে গড়ে তুলেন ” ঘাসফড়িং ” নামে একটি সংগঠন। যাদের কাজ ছিল বাল্যবিবাহ বন্ধ করা। যে কোনো স্থানে বাল্যবিবাহের খবর পেলে সাথে সাথে প্রশাসনকে খবর দেয়া। তবে কাজটি মোটেও সহজ ছিল না। শুরুতে অনেক বাধা বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়। সমাজে কেউই তার প্রচেষ্টাকে সহজভাবে মেনে নিতে পারেনি। ক্রমেই পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় সাংবাদিকদের সহায়তায় পরিস্থিতি পাল্টে যেতে থাকে। বর্তমানে তার সাহসী কর্মতৎপরতার জন্য ব্যাপকভাবে আলোচনা রয়েছেন নান্দাইলের এই শিক্ষার্থী।
সফলতার ছোঁয়া
এখন পর্যন্ত ৫০টি বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছে সানজিদার সংগঠন। প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন অসংখ্য শিক্ষার্থীকে । তার মতে – ” অল্প বয়সে বিয়ে করা মানে কোন মেয়েকে খাঁচায় বন্দী থাকার মতো ” বর্তমানে ময়মনসিংহ ও তার আশেপাশের এলাকায় বাল্যবিবাহের হার দিন দিন কমে আসছে। পরিস্থিতি শতভাগ না হলেও উল্লেখযোগ্য হারে পরিবর্তন হয়েছে। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ ও সামাজিক সচেতনতায় যৌথভাবে তাকে সহযোগিতা করছেন স্থানীয় প্রশাসন, ওয়ার্ড ভিশন ও বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী সংগঠন।
বিবিসি’র জরীপে সানজিদা
ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশন (BBC) ৪টি বিভাগে ( রাজনীতি ও শিক্ষা, সংস্কৃতি ও খেলাধুলা, অধিপরামর্শ ও সক্রিয়তা, স্বাস্থ্য ও বিজ্ঞান) প্রতিবছর ১০০ প্রভাবশালী নারী’র তালিকা প্রকাশ করে। এ বছর এই তালিকায় আছেন বাংলাদেশী এই শিক্ষার্থী। বিবিসি’র মতে- “বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম বাল্যবিবাহ প্রবণ দেশ। সানজিদা বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের ধারা বদলাতে চেষ্টা করেছেন”।
তার সাথে এই তালিকায় আরও রয়েছেন সিরিয়ার শারীরিক প্রতিবন্ধী দৌড়বিদ দিমা আক্তা, ইরানি অভিনেত্রী জার আমির ইব্রাহিমি,ভারতীয় অভিনেত্রী পিয়াংকা চোপড়া, আফগানিস্তানের শিক্ষার্থী ফাতিমা আমিরি, রোশ সাংবাদিক তাইসিয়া বেকবোলটোভা ও মিয়ানমারের চিকিৎসক আই নাইন তো।
বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের পরিস্থিতিঃ
বাল্যবিবাহ বাংলাদেশের নারীদের জন্য একটি অভিশাপ। এক দশক আগেও বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের পরিস্থিতি ছিল বড়ই করুণ। বর্তমানে নারী, শিক্ষা ও নারী’র ক্ষমতায়নের ফলে এই কুপ্রথা ধীরে ধীরে কমে আসছে। তবে বিগত বছরগুলোতে করোনা মহামারী ও লকডাউনে অসংখ্য কিশোরী বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে। যা মোটেও আশা ব্যঞ্জক নয়।
সানজিদা ইসলাম ছোঁয়া যেভাবে অন্য নারীদের অনুপ্রেরণাঃ
সানজিদা খুব কাছ থেকে দেখেছেন তার সহপাঠীদের বাল্যবিবাহের শিকার হতে। এমনকি তার মায়েরও বাল্যবিবাহ হয়েছিল। যার কারনে প্রথম থেকেই তিনি এ বিষয়ে কিছু করার পরিকল্পনা করেন। অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আজ তার পরিকল্পনা, তার প্রচেষ্টা বিশ্ব দরবারে পৌছে গেছে। তিনি আবারও প্রমাণ করেছেন – সদিচ্ছা ও পরিশ্রম থাকলে সব সম্ভব। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, সুযোগ সুবিধা, অর্থ ও জনবল কোনটাই তার ছিল না। কিন্তু তিনি তা করে দেখিয়েছেন।
নিজের ক্ষুদ্র পরিসর থেকে শুরু করেছেন সমাজ পরিবর্তনের দায়িত্ব।
পরিশেষে, সানজিদা ইসলাম ছোঁয়া হতে পারে এ দেশের সকল নারী’র আদর্শ।
কেমন লাগলো তার পথচলা? আমরা যে যার অবস্থান থেকে সমাজ পরিবর্তনে হাত লাগালে আশা করি দেশ বহুদূর এগিয়ে যাবে।
আরও ব্লগ পড়তে ক্লিক করুন।
Writer
Baitul Hikma
Intern, Content writing Department.
YSSE