বর্তমান প্রযুক্তির এই যুগে খেলাধুলার জগতে ক্রিকেটের দখল শীর্ষস্থানে। ক্রিকেট এমন একটি খেলা যা সর্বস্তরের মানুষের মাঝে নিয়ে আসে প্রাণোচ্ছল উদ্যম। আর “বিশ্বকাপ” হলে তো কথাই নেই, মানুষ উল্লাসিত অবস্থায় থাকেন কখন তার প্রিয় দল মাঠে নামবে।
টানটান উত্তেজনার মাঝে প্রতি মুহূর্তে শিহরণ জাগে ক্রিকেটে প্রেমীদের হৃদয়ে “কে পাবে বিশ্বকাপ?” এই ভাবনায়। তাই যুগের পর যুগ ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা ঊর্ধ্বমূখী হচ্ছে।
ভারতবর্ষের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নাবিকরা ১৭২১ সালে ক্রিকেটের সূচনা করেন। তবে ক্রিকেটের মূল জন্ম ইংল্যান্ডে এবং ডব্লিউ জি. গ্রেস কে বলা হয় ক্রিকেটের জনক।
শুরুতে এটি রাজবংশীয় অর্থাৎ অভিজাতদের খেলা হিসেবে পরিচিত থাকলেও মূলত এ খেলা সর্বস্তরে জনপ্রিয়তা লাভ করে অষ্টাদশ শতাব্দী থেকে।
ইংল্যান্ডের সীমা পেরিয়ে ক্রিকেট আজ বিশ্বের একটি জনপ্রিয় খেলায় পরিণত হয়েছে যাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশেও উন্মাদনার শেষ নেই। ১৯৪৭-এর পর থেকে ঢাকা অঞ্চলে ক্রিকেট জনপ্রিয়তা পায় এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর নতুনভাবে, ক্রিকেটের যাত্রা শুরু হয়।
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের নাম রাখা হয় বাংলাদেশ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড (বিসিসিবি), বর্তমানে যা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) নামে পরিচিত। এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৭৩ সালে। যার প্রথম সভাপতি ছিলেন মোহাম্মদ ইউসুফ আলী ও বর্তমান সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সংসদ সদস্য নাজমুল হাসান পাপন।
বাংলাদেশ ক্রিকেট দুনিয়ায় সাড়ম্বরে পদার্পণ করে প্রথমবার ১৯৭৭ সালে, বিশ্ব ক্রিকেট সংস্থার সহযোগী সদস্যপদ গ্রহণের মাধ্যমে। ১৯৯৭ সালে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ আইসিসি ট্রফিতে অংশ নেয় এবং ফাইনালে কেনিয়াকে হারিয়ে জয়লাভ করে যে জয়ের আনন্দ সমস্ত বাংলাদেশকে ছুঁয়ে যায়। কারণ, এই জয়ের মাধ্যমেই বাংলাদেশের প্রাপ্তির বার্তা আসে – বাংলাদেশের জাতীয় দল বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে।
চলুন দেখে নেই জাতীয় পর্যায়ে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশের এমন আরও বেশ কিছু অর্জন সমূহ।
পুরুষঃ
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পুরুষ ক্রিকেট দল “বেঙ্গল টাইগার” নামে পরিচিত এবং প্রশংসিত, যাদের ভূমিকা এ দেশে অপরিসীম।
ক্রিকেটের বিভিন্ন অঙ্গনে তাদের জয়ের তালিকাগুলো নিম্নরূপ:
- ওয়ানডে ক্রিকেটঃ
১৯৯৮ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় সিরিজে কেনিয়াকে হারিয়ে প্রথম একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে জয়লাভ করে। ২০০৫ সালে ওয়ানডেতে জিম্বাবুয়েকে ৩-২ ম্যাচে হারিয়ে সিরিজ জয়লাভ করে।
২০১০ সালে নিউজিল্যান্ডকে ৪-০ ম্যাচে হারিয়ে হােয়াইটওয়াশ করেন। ২০১৫ সালে ভারতের বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে, পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩-০ ব্যবধানে এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে।
- বিশ্বকাপঃ
১৯৯৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ দল বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ৬টি আসরে অংশ নেয়। আমিনুল ইসলাম বুলবুলের নেতৃত্বে ১৯৯৯ সালে প্রথম বিশ্বকাপ ক্রিকেটে অংশ নেয় বাংলাদেশ দল। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে সেরা আট এ স্থান লাভ করে এবং ২০১৫ সালে কোয়ার্টার ফাইনালে উত্তীর্ণ হয়।
- টেস্ট ক্রিকেটঃ
বাংলাদেশ ক্রিকেট দল টেস্ট খেলার মর্যাদা লাভ করে ২০০০ সালে। সে বছর ১৩ই নভেম্বর বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচের অভিষেক হয় বাংলাদেশ দলের। উক্ত টেস্টেই আমিনুল ইসলাম বুলবুল ১৪৫ রান করেন, আর নাইমুর রহমান দুর্জয় পান ৬ উইকেট যা ছিলো এক দুর্দান্ত টার্নিং পয়েন্ট।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং বিপর্যয়ের কারণে হেরে যায় বাংলাদেশ। তবে পরবর্তী বছর অর্থাৎ ২০০১ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অভিষেক টেস্টে মাত্র ১৭ বছর বয়সে সেঞ্চুরি করেন মোহাম্মদ আশরাফুল।
- এশিয়া কাপঃ
বাংলাদেশ এখনও পর্যন্ত এশিয়া কাপের শিরোপা জিততে পারেনি, তবে তিনবার রানার্স-আপ হয়েছে। ২০১২, ২০১৬ এবং ২০১৮ সালে বাংলাদেশ এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠেছিল।
- আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিঃ
১৯৯৭ সালে চ্যাম্পিয়ন এবং ১৯৮২ ও ১৯৯০ সালে সেমি ফাইনালে পদার্পণ করেন বাংলাদেশ দল।
- চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিঃ
২০১৭ সালে সেমি ফাইনালে পদার্পণ।
- এসিসি ট্রফিঃ
১৯৯৬ ও ১৯৯৮ সালে চ্যাম্পিয়নশিপের পদমর্যাদা লাভ।
- এশিয়ান গেমসঃ
২০১০ সালে স্বর্ণ পদক, ২০১৪ ও ২০২২ সালে ব্রোঞ্জ পদকপ্রাপ্ত ।
- সাউথ এশিয়ান গেমসঃ
২০১৭ ও ২০১৯ সালে স্বর্ণ পদকপ্রাপ্ত।
নারীঃ
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের জাতীয় মহিলা ক্রিকেট দল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ২০০৭ সালের জুলাই মাসে থাইল্যান্ডের বিপক্ষে অংশগ্রহণের মাধ্যমে দলটি প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট প্রাঙ্গনে প্রবেশ করেন।
- এশিয়া কাপঃ
২০১২ সালে সেমিফাইনালে পদার্পণ এবং ২০১৮ সালে ভারতের বিপক্ষে তিন উইকেটে পরাজয় করে চ্যাম্পিয়নশিপের পদমর্যাদা লাভ।
- এশিয়ান গেমসঃ
২০১০ ও ২০১৪ সালে রৌপ্য পদকপ্রাপ্ত এবং ২০২২ সালে ব্রোঞ্জ পদকপ্রাপ্ত।
- সাউথ এশিয়ান গেমসঃ
২০১৯ সালে চ্যাম্পিয়নশিপের পদমর্যাদা লাভ।
- আইসিসি ওম্যান টি টোয়েন্টি ওয়ার্ল্ড কাপ কোয়ালিফায়ারঃ
২০১৮,২০১৯ ও ২০২২ সালে চ্যাম্পিয়ন এবং ২০১৫ সালে রানার্স -আপ।
অনূর্ধ্ব-১৯
বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দল বয়সভিত্তিক পর্যায়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বকারী একটি দল যা শুরু হয় উনিশ দশক থেকে।
- বিশ্বকাপঃ
২০১৬ সালে তৃতীয় স্থান লাভ এবং ২০২০ সালে চ্যাম্পিয়নশিপের পদমর্যাদা লাভ।
- এশিয়া কাপঃ
২০১৬,২০১৭,২০১৮,২০২১ সালে তৃতীয় স্থান লাভ, ২০১৯ সালে রানার্স – আপ এবং ২০২৩ সালে চ্যাম্পিয়ন হয় ইন্ডিয়াকে পরাজিত করার মাধ্যমে।
পরিশেষে বলতে চাই, বাংলাদেশ ক্রিকেট দল আরও এগিয়ে যাক এবং বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ যে আশা ও স্বপ্ন দেখছে প্রতিনিয়ত যে বাংলাদেশ এক সময় বিশ্বকাপ আনবেই, সে স্বপ্ন যেন সত্যি হয়।
এরকম আরও ব্লগ পড়তে ক্লিক করুন।
লেখিকা
হাফসা বেগম
ইন্টার্ন, কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট
YSSE