আচ্ছা, আপনি যখন আপনার স্বপ্নপূরনে বারবার ব্যর্থ হন তখন আপনার কি মনে হয়? অথবা নিজের স্বপ্নপূরনের সামনে নিজের পরিবারের দায়িত্ব এসে হাজির হয়? আমরা এই সময়টা তে সাধারণত মেনে নেই যে আমাদের স্বপ্ন কখনো সত্যি হবে না। শতকরা ৯০% মানুষ ঠিক এখানেই বাস্তবতার কাছে হার মেনে নেয়। আজকের গল্প টা এই ৯০ ভাগ মানুষ কে নিয়ে নয়, বরং যারা ক্লান্তিহীন ভাবে নিজের স্বপ্ন ছোঁয়ার বিশ্বাস নিয়ে প্রাণপণ লড়াই করে যায় তাদের নিয়ে। “12th Fail” মুভিটি তৈরি করা হয়েছে ঠিক এমনি একজন মানুষের বাস্তব ঘটনাকে কেন্দ্র করে। যিনি বারবার হেরে গিয়ে হাল ছেড়ে দেন নি। বরং নিজেকে বুঝিয়েছেন restart করতে। নতুন উদ্যমে নতুন পরিসরে স্বপ্ন পূরনের চেষ্টা করে গেছেন।
একটা প্রবাদ খুব মনে পড়ছে, “Fall seven times,and stand up eight. চলুন এবার মূল ঘটনায় যাওয়া যাক।
প্লটঃ
ভারতের মধ্যপ্রদেশের এক গ্রাম চম্বল। যেই গ্রামেই বেড়ে ওঠা গল্পের প্রধান চরিত্র মনোজের। মনোজের ইচ্ছে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করা। সেই গ্রামে উচ্চ মাধ্যমিকে পাশ করাই অনেক কৃতিত্বের।তাই স্কুল মাস্টার রাও ছাত্রদের নকল করে পাশ করানোর চেষ্টা করতো। কিন্তু মনোজের দূর্ভাগ্য, মনোজের পরীক্ষার সময় স্কুল ভিজিট করতে আসেন এক সৎ অফিসার, অন্যায়ের বিরুদ্ধে তার কঠোর মনোভাবে মুগ্ধ হয় মনোজ। সেই অফিসারের কাছে তার মতো হতে চাওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করে মনোজ, তখন সেই অফিসার তাকে উপদেশ দেন, কোন প্রকার দুর্নীতি ছাড়া পরীক্ষায় পাশ করতে। সেই কথা মনে ধরে তার, তাই কোন প্রকার নকল ছাড়াই উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে মনোজ। মনোজের মনে হয়, নকল করে ফার্স্ট ডিভিশন পেয়ে পাশ করার চাইতে নিজ চেষ্টায় থার্ড ডিভিশন পেয়ে পাশ করা অনেক গর্বের। পাশ করে পুলিশ অফিসার হওয়ার আশা নিয়ে শহরে আসে মনোজ। কিন্তু দূর্ভাগ্য পিছু ছাড়ে না তার। বাসেই তার সমস্ত টাকা পয়সা চুরি হয়ে যায়। সবকিছু হারিয়ে মনোজ অসহায় হয়ে পড়ে। পরবর্তী তে এক ছেলের সাথে পরিচয় হয় এবং তার কাছে জানতে পারে UPSC পরীক্ষার কথা, এবং তখন মনোজ তার সিদ্ধান্ত পাল্টে UPSC পরীক্ষা দেয়ার প্রস্তুতি নেয়, কিন্তু কোচিং এ ভর্তি হওয়ার টাকা কই? তাই সে একটি লাইব্রেরি এর ক্লিনার হিসেবে কাজ করে এবং লাইব্রেরী তেই থেকে নিজে নিজে প্রস্তুতি নেয়া শুরু করে। এক দুই তিনবার ব্যর্থ হয়। এবং অনেক চড়াই উৎড়াই পাড়ি দিয়ে শেষবার ভাইভার জন্য ডাক পায় মনোজ। অনেক কষ্ট, ত্যাগ পরিশ্রম শেষে নিজের স্বপ্ন থেকে ঠিক কয়েক পা দূরে দাঁড়িয়ে আছে মনোজ। পরবর্তী কাহিনীটা আপনার জন্যই রেখে দিলাম।
এই গল্প থেকে পাওয়া কিছু শিক্ষাঃ
জীবনে ব্যার্থতা বারবার আসবে, তবে ব্যর্থ হয়ে থেমে গেলে চলবে না। বরং আবার নতুন করে শুরু করতে হবে।নিজের প্রতি বিশ্বাস রেখে পুরনো ভুলগুলো শুধরে নিয়ে এগিয়ে গেলে একদিন বিজয় আসবেই।
যদি লক্ষ থাকে অটুট, তবে যেকোনো পরিস্থিতি তেই নিজের লক্ষ্য অর্জনের জন্য লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।আমার স্বপ্নপূরনের দায়ভার আমাকেই নিতে হবে। ভাগ্যকে দোষারোপ না করে আমাকে এগিয়ে যাওয়ার রাস্তা খুজে বের করতে হবে।
জীবনে চলার পথে অনেকেই অনেক কথা বলবে, তাদের কথায় নিজেকে থামিয়ে দেয়া যাবে না।নিজেকে প্রমান করার প্রবল স্পৃহা নিয়ে কাজ করে যেতে হবে। আমাদের সফলতাই একদিন তাদের জবাব দিয়ে দেবে।
একটা প্রবাদ আছে, “জীবন নাটকের চেয়েও নাটকীয়”
আর এই নাটকীয় জীবনে কখনো কখনো রুপকথার মত সাফল্য এসে দিন শেষে ধরা দেয়,এর আড়ালে লুকিয়ে থাকা শত কষ্ট, পাওয়া না পাওয়ার গল্প গুলো আমাদের চোখ এড়িয়ে যায় খুব সহজেই। তাই এমন গল্পগুলো বারবার আমাদের চোখের সামনে নিয়ে আসা উচিৎ। এর থেকে আমাদের শিক্ষা নেয়া উচিৎ। মনোজের মত কষ্ট, ত্যাগ, পরিশ্রমের পরেও যদি কেও লক্ষে পৌছাতে ব্যর্থ হয়ে থাকে, তবে হতাশ হওয়ার কিছু নেই,আমার কাঙ্ক্ষিত সাফল্য একদিন আমায় ধরা দেবেই!
ছবির নামঃ 12th Fail
জনরাঃ বায়োগ্রাফি
প্রযোজকঃ বিধু বিনোধ চোপড়া।
কাস্টঃ ভিকরান্ত,মেধা শংকর।
এমন আরো ব্লগ পড়ার জন্য, এখানে ক্লিক করুন।
লেখক :
আব্দুল্লাহ আর রাফী
ইন্টার্ন, কনটেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট।
YSSE