কখনো কি শুনেছেন পাখিরা আত্মহত্যা করে নিজেদের মৃত্যু নিজেরাই নিশ্চিত করে? তাও আবার দল বেঁধে,প্রতি বছরই!!

ভারতের একটি গ্রামে প্রতিবছরের নির্দিষ্ট একটি সময়ে এমনই অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটে। জানা যায়, একটি নয়, দুটি নয়, হাজার হাজার পাখি আত্মহত্যা করে সেখানে।প্রায় ১০০ বছর ধরে প্রতি বছরই এই ঘটনা ঘটেই চলছে। পুরো ঘটনাটি শুনলে আপনারা একটু রোমাঞ্চিত হবেন বৈকি।

 

জাতিঙ্গা হচ্ছে ভারতের ছোট্ট একটি গ্রাম যা আসামের হাফলং থেকে ৯ কি:মি: দূরে অবস্থিত। বলা হয়ে থাকে অসম্ভব সৌন্দর্য্য ও মাধুর্য্যে ভরপুর এই গ্রামটিতে প্রতিবছরের আগস্ট থেকে নভেম্বরের দিকে ঝাঁকে ঝাঁকে কিছু পাখি আসে।

তবে অবাক করার বিষয় হচ্ছে তারা কিন্তু খাবারের সন্ধানে কিংবা অতিথি হিসেবে আসে না, তারা সেখানে যায় আত্মহত্যা করার উদ্দেশ্যে। আর ঠিক একারণেই সেই গ্রামটিকে পাখিদের Valley of death অথবা মৃত্যুর উপত্যকা বলা হয়।গ্রামটিতে সন্ধ্যা সাত টার দিকে জ্বালানো হয় মশাল যেন রাত ভরে আলোয় চকচক করে। কিন্তু এই অগ্নিকুণ্ড গুলো লক্ষ্য করে সেখানে ঝাঁপিয়ে পড়ে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি। অথচ সন্ধ্যা নামলে পাখিরা ফিরে যাওয়ার কথা তাদের নীড়ে।

যাইহোক! এমন ঘটনা কেন ঘটে? স্থানীয় ইতিহাস ঘেটে জানা যায়, বেশ কয়েকবছর আগে স্থানীয় জেমে-নাগা উপজাতির কিছু লোক জাতিঙ্গাতে প্রথম পাখিদের এমন আচরণ প্রত্যক্ষ করে। তখন থেকেই প্রতিবছর শুধুমাত্র জাতিঙ্গাতেই এই ঘটনাটি ঘটে যাচ্ছে। আসলে কী ঘটে এ পাখিদের বেলায়?

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা থেকে জানা যায়, কোনো এক অজ্ঞাত কারণে ঝাঁক বেঁধে পাখিরা মাটিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ক্ষতবিক্ষত এবং রক্তাক্ত অবস্থায় এসময় অনেক পাখিই মারা যায়।কিন্তু যেসব পাখি বেঁচে থাকে, তাদের অদ্ভুত আচরণ রীতিমতো বিস্ময়কর। একবার মাটিতে ঝাঁপিয়ে পড়ার পর কোনো এক অদ্ভুত কারণে এরা নির্জীব হয়ে পড়ে। খাওয়া দাওয়া কিংবা চলাফেরা বন্ধ করে দেয়। এবং এরপর ধীরে ধীরে মারা যায়। অনেকভাবেই এদের বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু কোনো এক অজ্ঞাত কারণে তা সম্ভব হয়নি।

আরো জানা যায়, পাখিগুলো আসার উপযুক্ত সময় হলো সেপ্টেম্বর মাস যেকোনো অমাবস্যার রাতে,স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ায় যখন রাস্তায় ল্যাম্পপোস্টে আলো জ্বলে কিংবা গ্রামবাসীরা যখন ঘরের বাহিরে আগুন পোহায় তখনই পাখিরা ঝাঁকেঝাঁকে এই গ্রামের দিকে উড়ে আসে।

যেখানেই কোনো আলোর উৎস থাকে সেখানেই আলোর দিকে এরা ঝাঁপিয়ে পড়ে। এভাবে কিছু পাখি আগুনে ঝলসে মরে, কিছু মরে গাছের ডালপালা বা শক্ত কিছুর আঘাতে। যেন স্বেচ্ছায় আত্মহত্যা করতেই এসেছে তারা!

এমন সময় একদিকে কিছু গ্রামবাসী এদেরকে বাঁচানোর চেষ্টা করে অন্যদিকে কিছু গ্রামবাসী এদের কে মেরে ফেলার চেষ্টা করে। কারন তাদের বিশ্বাস, এসব পাখি অশুভ শক্তির দ্বারা পরিচালিত। তাই অশুভ শক্তি থেকে মুক্তি পেতেই তারা পাখিগুলোকে মেরে ফেলে। তারপর এসব পাখির মাংস দিয়ে হয় ভোজ উৎসব।

 

তবে এ-সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা কিছু যুক্তি খন্ডন করার চেষ্টা করেছিলেন। ডঃ সুধীন সেনগুপ্তের মতে,পাখিদের এই অদ্ভুত আচরণের মূলে রয়েছে আবহাওয়া ও বায়ুচাপের আকস্মিক পরিবর্তন ও বর্ষায় বেড়ে যাওয়া পানির স্তর। সাথে জাতিঙ্গা পাহাড়ে থাকা উচ্চ চুম্বকশক্তি যুক্ত খনিজ পদার্থ ও ভূ অভ্যন্তরে থাকা ফাটল এর জন্য দায়ী হতে পারে। এসব কিছুর মিলিত প্রভাবে ঐ স্থানের চৌম্বকশক্তি ও মাধ্যাকর্ষণ শক্তির পরিবর্তন ঘটে,যার ফলে পাখিদের স্নায়ুর ওপরে এসব ব্যাপক প্রভাব ফেলে। যার কারনেই পাখিরা এমন বিভ্রান্ত আচরণ করে বলে ধারণা করেন তিনি।

আর এভাবে ছোটাছুটি করতে গিয়ে বিভিন্ন গাছপালা বা দালানের সাথে ধাক্কা খেয়ে দেহে আঘাত পেয়ে তাদের মৃত্যু হয়। কিন্তু অনেকে বলেন,কিছু পাখিদের আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার আগেই তারা ধরে ফেলে এবং বাঁচানোর চেষ্টা করে। কিন্তু বাঁচানো সম্ভব হয়না।      

তাহলে, এক্ষেত্রে একটি  প্রশ্ন সামনে আসে আর তা হলো, যদি এদের কে আঘাত পাওয়ার পূর্বেই বাঁচানো হয় তবে এরা কীভাবে মারা যায়?আর যদি তারা পূর্বেই মারা যায় তবে তারা আলোর উৎসে পৌঁছায় কী করে? প্রশ্নগুলোর গ্রহণযোগ্য উত্তর এখনো মেলেনি। তবে স্থানীয় মানুষকে বুঝিয়ে এই পাখিগুলোকে আঘাত করে নির্মম ভাবে হত্যা করা থেকে অনেকটাই সরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।

 

তবুও পাখিগুলোকে বাঁচানো সম্ভব হয় না। প্রতিবছর অনেক মানুষ এই রহস্যময় ঘটনার সাক্ষী হতে ভারতের জাতিঙ্গা গ্রামে যান। ছোট্ট পাখিগুলোর নিথর দেহ মাটিতে পড়ে থাকতে দেখে পর্যটকরাও হয়ে পড়েন বিষণ্ণ। পাখিদের এই অদ্ভুত মরণ যাত্রা আজও মানুষের কাছে এক রহস্যই রয়ে গিয়েছে।

 

এরকম আরো ব্লগ পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

 

লেখিকা,

মৌসুমী আক্তার রিতু 

ইন্টার্ন,

কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট

YSSE