“আমি যখন ওরেগন এগ্রিকালচার কলেজে রাসায়নিক প্রকৌশল অধ্যয়ন শুরু করি তখনই আমি বুঝতে পারি যে আমি নিজেই বিশ্বের প্রকৃতি সম্পর্কে নতুন কিছু আবিষ্কার করতে পারি”।
লিনাস পাউলিং (নোবেলজয়ী)
যুক্তরাষ্ট্রের কেমিক্যাল ইন্জিনিয়ার, রসায়নবিদ
(১৯০১-১৯৯৪)
বর্তমান সময়ের প্রকৌশল বিদ্যার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কেমিকৌশল।
বর্তমান যুগে মানুষজন যেমন দৈনন্দিন জীবনে নিত্য-নতুন পণ্য বা জিনিসপত্র চাহিদা পূরণের জন্য বড় বড় শিল্প-কারখানা তৈরী হচ্ছে তার তার পেছনে মূলে রয়েছে কেমিপ্রকৌশলীরা।
- কেমিক্যাল ইন্জিনিয়ারিং কি
কেমিক্যাল ইন্জিনিয়ারিং মূল বিষয় হচ্ছে কেমিক্যাল ফ্যাক্টরি এবং প্লান্টগুলির যাবতীয় ডিজাইন নিয়ে পড়াশোনা। এই ইন্জিনিয়ারিং এ পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নশাস্ত্র, জৈব রসায়ন, অনুপ্রাণ বিজ্ঞান, প্রাণরসায়ন সামঞ্জস্য ঘটিয়ে বিশেষ পদ্ধতির মাধ্যমে উৎকৃষ্ট পদার্থে পরিনত করা।
একজন কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার জানেন ইন্ডাস্ট্রিতে কিভাবে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টন উৎপাদন তৈরি করা যায়।
সেই উৎপাদন তৈরির জন্যে প্রয়োজনীয় হিসেব, রি-অ্যাক্টর ডিজাইন করা, বাজেট করা সবই কেমিক্যাল ইন্জিনিয়ার করে থাকেন।
কেমিক্যাল ইন্জিনিয়ার কে প্রক্রিয়াকৌশলী বা প্রোসেস ইন্জিনিয়ার বলা হয়।
একজন কেমিক্যাল ইন্জিনিয়ারই প্রক্রিয়া ব্যবহার উপযোগী উৎপাদন করে।
- কেমিক্যাল ইন্জিনিয়ারি এবং কেমিস্ট্রি
বর্তমানে এখনো অনেক ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে এই দুই জায়গা নিয়ে।
মূলত, একজন কেমিস্ট্রি যার কাজ ল্যাবে বিভিন্ন রসায়ন মৌল-যৌগের ক্রিয়াকৌশল নিয়ে পারস্পরিক সম্পর্ক করা।
আর অন্যদিকে কেমিক্যাল ইন্জিনিয়ার এর কাজ ইন্ডাস্ট্রিতে। একজন কেমিস্ট্রি ল্যাবে যে স্বল্প পরিসরে পরিসর ঘটান সেটিকে কেমিক্যাল ইন্জিনিয়ার নিয়ন্ত্রণ এবং শিল্পসম্মত উপায়ে ইন্ডাস্ট্রির প্লান্টে ঘটান।
- কেমিক্যাল ইন্জিনিয়ার এর কাজের ধরন।
মানুষের দৈনন্দিন কাজের পণ্যগুলো উপযোগী করে তোলায় মূলত কাজ। কেমিক্যাল ইন্জিনিয়াররা পণ্যর প্ল্যান্ট ডিজাইন, অপারেশন মেইনটেইন্যান্স ও ট্রাবল স্যুট, প্রসেস ডেভেলপমেন্ট করা।
তারা সবসময় পণ্যর গুনগত মান উন্নয়নের লক্ষ্য থাকেন। এমনকি ইন্ডাস্ট্রির কন্ট্রোল সিস্টেমে তাদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
কৃষিকাজে তাদের অবদান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তারা কৃষিজ সার-কীটনাশক উৎপাদনে ভূমিকা রাখেন।
কেমিক্যাল ইন্জিনিয়ার এর কর্মক্ষেত্র এবং ক্যারিয়ার সম্ভাবনা
বর্তমান সময়ে আধুনিক সময়ে কেমিক্যাল ইন্জিনিয়ার অনেক বড় একটি সেক্টর শিক্ষার্থীদের জন্য।কর্মক্ষেত্রর পাশাপাশি গবেষণাতেও রয়েছে অনেক বড় অবদান।
- গবেষণা:
একজন কেমিক্যাল ইন্জিনিয়ারিং এর শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে গবেষণায় বড় অগ্রাধিকার। পারমাণবিক, বায়োমেডিকেল এইসব ক্ষেত্রে অনেক বড় ভূমিকা রাখেন কেমিক্যাল ইন্জিনিয়াররা।
মূলত তারাই এইসব তৈরী করে থাকেন। জিনগত রোগ, এইডস, ক্যান্সার নানান জটিল রোগ নিয়ে গবেষণা করে তার সমাধান বের করা।
একটা শিল্প কারখানায় কেমিক্যাল ইন্জিনিয়ারের চাহিদা সম্পূর্ণ থাকে।তাই একজন কেমিক্যাল ইন্জিনিয়ারিং এর শিক্ষার্থীর থাকে অনেক বড় চাহিদা এইসব শিল্প-কারাখানার।
দেশে বা মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সমস্ত সামগ্রী তৈরী এবং তার গুনগত মান উন্নয়ন, সামঞ্জস্য রাখা সবকিছুই এই ইন্জিনিয়ারদের হাতে তাই আধুনিক বিজ্ঞানে এই সেক্টরের গুরত্ব অপরিসীম।
পাশাপাশি আমাদের দেশে বিসিএস প্রশাসনেও যোগ দিয়ে নিজের ক্যারিয়ার অনেক উপরে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ।
বাইরের দেশেও লেখাপড়ার,গবেষণা এবং কর্মক্ষেত্রর রয়েছে সূবর্ণ সুযোগ।
যেমন : আমেরিকা, জাপান, কানাডা, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া শীর্ষ তালিকায় রয়েছে।
কেমিক্যাল ইন্জিনিয়ারিং এ স্নাতক করে শিক্ষার্থীরা বায়ো, পেট্রো, এনভায়রোনমেন্ট অথবা ফলিত রসায়ন এর যে কোন একটিকে মেজর বিষয় হিসেবে বেছে নিতে পারবে।
এছাড়া নিজ বিষয়ের পাশাপাশি পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ারিং, বায়োকেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, এনভাইরোমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং, সিমিউলেশন, কম্পিউটেশনাল প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং, নিউক্লিয়ার সাইন্স, ম্যাটারিয়্যালস ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটেশনাল ফ্লয়েড ডাইনামিক্স, ন্যানোটেকনলোজি, বায়োসিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিং ও প্রসেস সেফটি ইত্যাদি বিষয়ে স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি করতে পারবেন
এছাড়া স্থানীয় ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান শেভরন, ইউনিলিভার, বার্জার, লিন্ডে, নেসলে, সানোফি, নোভারটিস, রেকিট বেনকিজার, সিনজেনটা, ম্যারিকো, আরলা ও নিউজিল্যান্ড ডেইরিতে কেমিক্যাল ইন্জিনিয়াররা কাজ করার সুযোগ রয়েছে। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে বিশ্বব্যাংক, গিজ, পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন, সাস্টেইনেবল ম্যানেজমেন্ট সংক্রান্ত বিভীন্ন প্রজেক্ট, কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো), স্থানীয় ঔষধ শিল্প, বিভিন্ন কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইন ফার্ম।
আবার কেমিক্যাল শিল্প, ক্ষার-এসিড-ক্লোরিন শিল্প, ভোজ্য তেল শিল্প, সিমেন্ট শিল্প, অধুনা এলপিজি শিল্প, লেদার পণ্য শিল্প, বস্ত্র ও তৈরী পোশাক শিল্প, বেসরকারি খাতের জ্বালানি তেল শোধনাগারসমূহের অপারেশন ও প্রসেস কন্ট্রোল বিভাগ, বিদ্যুৎ উৎপাদনে স্টিম সাইকেল, কম্বাইন্ড সাইকেল এর প্রচলনের ফলে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও এর অধীনস্থ কোম্পানিতে এবং বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ আণবিক শক্তি কমিশন ও নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টে কেমিকৌশলীরা কাজ করছেন।
এছাড়া ভালো রেজাল্ট-রিসার্চ করে এই প্রকৌশলীরা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করার সুযোগ পান।
এই গ্র্যাজুয়েটদের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পর্যায়ে কেমিকৌশল, গ্লাস ও সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারিং, ফুড টেকনোলজি ইত্যাদি বিষয়ে বিসিএস টেকনিকাল ইন্সট্রাক্টর (কেমিক্যাল) পদে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট শিক্ষকতা করার সুযোগ রয়েছে।
এছাড়া অভিজ্ঞতা এবং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া সাপেক্ষে কেমিকৌশলীগণ জ্বালানি নিরীক্ষক লাইসেন্সও নিতে পারেন।
“উঠো,জাগো,লক্ষ্য না পৌছানো পর্যন্ত থেমো না”। – স্বামী বিবেকানন্দ
এরকম আরো ব্লগ পড়তে, ক্লিক করুন।
লেখক,
তীর্থ চৌধুরী
ইন্টার্ন,কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট
YSSE