ওকিনাওয়া জাপানের দক্ষিণাঞ্চলের একটি দ্বীপ, যেখানকার মানুষেরা খুব হাসিখুশি, তারা বৃদ্ধ হয়ে গেলেও অবসর নেয় না।
সবচেয়ে বড় কথা, শুধুমাত্র পৃথিবীর অন্যান্য দেশ থেকে নয়, খোদ জাপানের অন্যান্য অঞ্চলের মানুষের থেকেও বেশি দিন বাঁচে তাঁরা।
চলুন, জেনে নেয়া যাক ওকিনাওয়ার মানুষের দীর্ঘজীবনের রহস্য।
১. অবসর না নেয়াঃ
ওকিনাওয়ার বাসিন্দাদের অভিধানে অবসর বলে কোনো শব্দ নেই। শেষ বয়সে তারা সব কাজকর্ম ছেড়েছুড়ে বিছানায় শুয়ে বসে দিন কাটায় না। তারা মত্যুর আগ পর্যন্ত তাদের পছন্দের কাজগুলো করে যেতে থাকে। এতে করে তারা বেঁচে থাকার প্রতি আগ্রহ হারায় না। পছন্দের কাজে ডুবে থাকার কারনে হতাশা, বিষণ্ণতা তাদের গ্রাস করতে পারে না।
২. খাবারঃ
আমরা বাঙ্গালিরা বরাবরই পেট ভরে খেতে পছন্দ করি। কিন্তু ওকিনাওয়ার বাসিন্দারা কখনো পেট ভরে খায় না। খাওয়া সময় তারা খেয়াল রাখে যাতে পেট মোটামুটি ২০ ভাগ খালি থাকে।
৩. ধীরে চলা:
ব্যস্ততা আমাদের জীবনের সঙ্গে নানাভাবে জড়িত। এই ব্যস্ততার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত অস্থিরতা। বর্তমানে ব্যস্ত জীবনে বেশিরভাগ মানুষ অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যায়। কিন্তু ওকিনাওয়ার বাসিন্দারা মনে করেন, অস্থিরতা থেকে বেরিয়ে এসে ধীরে চলা উচিত। এতে জীবনকে আরও ভালোভাবে উপভোগ করা যায়।
৪. ভাল বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে ওঠাবসা:
ওকিনাওয়ার বাসিন্দারা নিজেদেরকে ভালো, শুভাকাঙ্ক্ষী বন্ধু-বান্ধব এর সাহচার্যে থাকতে পছন্দ করে। তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে। এসব শুভাকাঙ্ক্ষী বন্ধু-বান্ধবকে বিপদে-আপদে সবসময় কাছে পাওয়া যায় এবং প্রয়োজনের সময় সুপরামর্শ পাওয়া যায়। এতে দীর্ঘায়ু পাওয়া যায় বলে তাদের বিশ্বাস।
৫. হাসি:
ওকিনাওয়ার বাসিন্দারা সবসময় হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করে। নিজে হাসে এবং অন্যদের হাসাতে চেষ্টা করে। হাসিখুশির মাঝে থাকলে মন থাকে, সেই সঙ্গে শরীর-স্বাস্থ্যও।
৬. শরীরের যত্ন নেওয়া:
পরবর্তী জন্মদিনেও যেন আপনার শরীর সঠিক আকারে থাকে সেজন্য নিয়মিত শরীর চর্চা করা প্রয়োজন। ভারী শরীরচর্চা না করলেও ওকিনাওয়ার বাসিন্দারা নিজেদেরকে ছোট ছোট কাজের মাধ্যমে ব্যস্ত রাখে।
৭. ধন্যবাদ দেওয়া:
ওকিনাওয়াসহ পুরো জাপানিরাই নিজেদের বিনয়ের জন্য বাকি দেশগুলোর কাছে সুপরিচিত। যেকোনও ছোট-বড় কাজের জন্য মানুষকে ধন্যবাদ দেওয়া, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা যেমন একজন মানুষকে মানসিকভাবে প্রফুল্ল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তেমনি দীর্ঘ জীবন লাভেও সাহায্য করে।
৮. প্রকৃতির সঙ্গে নিজেকে জড়ানো:
ভাল থাকতে এবং শরীর মন সুস্থ রাখতে প্রকৃতির সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রাখার গুরুত্ব অপরিসীম। ওকিনাওয়ার বাসিন্দারা সব সময় চার দেয়ালের মাঝে বন্দি না থেকে প্রকৃতির সঙ্গে একটা আত্মিক বন্ধন গড়ে তোলে, প্রকৃতি থেকে বেঁচে থাকার রসদ সঞ্চয় করে। এতে করে তারা বেঁচে থাকার উদ্দীপনা পায়।
৯. বর্তমানকে নিয়ে ভাবা:
ওকিনাওয়ার বাসিন্দাদের মতে, বর্তমান সময় নিয়ে চিন্তা করা উচিত। তারা যেমন অতীত নিয়ে আক্ষেপ করে না, একই সঙ্গে ভবিষ্যত নিয়েও খুব বেশি চিন্তা করে না। তারা মনে করে- আজকের পুরো দিনটাই আপনার। তাই দিনটিকে কিভাবে সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায় এবং যথাযথভাবে উপভোগ করা যায় সেই চেষ্টা করা প্রয়োজন। ওকিনাওয়ার বাসিন্দারা কাজের মাধ্যমে প্রতিটি দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে সচেষ্ট থাকে।
১০. ইকিগাই অনুসরণ করা:
ওকিনাওয়ার বাসিন্দারা ইকিগাইয়ের নিয়মকানুন মেনে চলে। জীবনকে সুন্দর করা ও দীর্ঘ দিন বেঁচে থাকার জন্য ইকিগাই খুঁজে বের করা জরুরি। পুরো জাপানেই ইকিগাই খুব জনপ্রিয়। নিজেদের ইকিগাই খুঁজে পেতে তারা নিজেদের ৪ টি প্রশ্ন করে:
- ১. তুমি কোন কাজটি করতে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসো?
- ২. কোন কাজটা তুমি ভালো পারো?
- ৩. তুমি যে কাজটি করতে চাচ্ছো সেটি কি পৃথিবীর জন্য প্রয়োজনীয়?
- ৪. তুমি যে কাজটি করতে চাচ্ছো সেটি করে তুমি অর্থ উপার্জন করতে পারবে কি না?
এই ৪ টি প্রশ্নের মাধ্যমে জাপানিরা খুঁজে বের করে তাদের বেঁচে থাকার উদ্দেশ্য।
এরকম আরও অনেক ব্লগ পড়ার জন্য ক্লিক করুন।
লেখকঃ
আতিয়া আলম নিসা
ইন্টার্ন,
কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট,
YSSE