শেষ কবে বাংলাদেশকে কোনো আন্তর্জাতিক  প্রতিযোগিতায় জিততে দেখেছেন মনে পড়ে? হোক সেটা ক্রিকেট, ফুটবল বা অন্য কোনো প্রতিযোগিতা, বিশ্ব অঙ্গণে বাংলাদেশের প্রাপ্তির পরিসর খুবই সামান্য। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়েও বাংলাদেশের সর্বোচ্চ প্রাপ্তি ছিল সিলভার এবং ব্রোঞ্জ পদক, বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হতে না পারার আক্ষেপটা রয়েই গিয়েছিল। কিন্তু সব প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশকে বিশ্ব মঞ্চে চ্যাম্পিয়ন করার মাইলফলক স্পর্শ করেছেন ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (UIU) ‘টিম অ্যাপোক্যালিপস’। আন্তর্জাতিক ব্লকচেইন অলিম্পিয়াডে বহু প্রতীক্ষিত স্বর্ণ পদক অর্জন করে বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়।

ব্লকচেইন কি? কিভাবে কাজ করে? এ সম্পর্কে একটু ধারণা নেওয়া যাকঃ

ব্লকচেইন

ব্লকচেইন হলো সবার জন্য উন্মুক্ত একধরনের ডিস্ট্রিবিউটেড লেজার টেকনোলজি যা তথ্য রেকর্ড করে। এর প্রতিটি ব্লক হল ডেটা বা তথ্যের সমাহার, এভাবে ব্লকের পর ব্লক মিলে তৈরি হয় একটি চেইন। এটি একটি ডি-সেন্ট্রালাইজড সিস্টেম যার নিয়ন্ত্রণ কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যক্তির নিকট থাকে না বরং অনেকগুলো কম্পিউটার স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিস্টেমকে নিয়ন্ত্রণ করে। এতে কোনো তৃতীয় পক্ষের প্রয়োজন পড়ে না। এবং ডেটা সংরক্ষণ ও ডেটার নিরাপত্তা বজায় থাকে। Satoshi Nakamoto ছদ্মনামে নামে একজন ব্যক্তি বা একটি দল ২০০৮ সালে ব্লকচেইনের মাধ্যমে বিটকয়েন ডেভেলপ করে। তারপর থেকে প্রতিনিয়ত এ প্রযুক্তি আপডেটেড এবং শক্তিশালী হচ্ছে।

ইন্টারন্যাশাল ব্লকচেইন অলিম্পিয়াড ২০২৩

ব্লকচেইনের মাধ্যমে বাস্তবমুখী সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যকে সামনে রেখে আয়োজিত হয় আন্তর্জাতিক ব্লকচেইন প্রতিযোগিতা। ব্লকচেইন অলিম্পিয়াড একটি বার্ষিক আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা যেখানে বিশ্বের নানা দেশের শিক্ষার্থীরা ব্লকচেইন নির্ভর বিভিন্ন প্রজেক্ট উপস্থাপন করেন যা ভবিষ্যতে সুদূরপ্রসারী অবদান রাখতে পারে। ইন্টারন্যাশাল ব্লকচেইন অলিম্পিয়াডের ষষ্ঠ আসর এর ফাইনাল রাউন্ড অনুষ্ঠিত হয় ১৬-১৭ নভেম্বর আমস্টারডাম, নেদারল্যান্ডস। 

টিম অ্যাপোক্যালিপস- দি কনকরোর

বিজয়ী টিম অ্যাপোক্যালিপস। বাংলাদেশের জন্য স্থাপন করেন এক অনন্য সাফল্যের মাইলফলক। বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের পতাকা উঁচিয়ে ধরেন কয়েকজন তরুণ-তরুণী। চীন, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, হংকং, ভারত এর মত দেশ হতে অংশগ্রহণকারী দল গুলোকে হারিয়ে স্বর্ণ পদক জিতে নেয় টিম অ্যাপোক্যালিপস।

‘আ জার্নি টু আওয়ার সাসটেইনেবল ফিউচার’ শীর্ষক ইভেন্টে সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট নিয়ে প্রথম কোনো বাংলাদেশী দল হিসেবে ইন্টারন্যাশনাল ব্লকচেইন অলিম্পিয়াড প্রতিযোগিতায় বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয় টিম অ্যাপোক্যালিপস। ভবিষ্যতে প্রকল্পের প্রভাব, বিশ্বস্ততা এবং বাণিজ্যিকভাবে বাস্তবায়নের সক্ষমতার উপর ভিত্তি করে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয় এবং বিজয়ী দল অর্জন করে ২৪০০ ইউরো। এর আগে জাতীয় আসরে দ্বিতীয় হয়েছিল টিম অ্যাপোক্যালিপস।

দলটি যে প্রজেক্ট উপস্থাপন করেছিল তা হলো –‘IPBlockchainPro’ এই প্রজেক্টে তারা মেধাসত্ত্ব বা বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদগুলোর জন্য ম্যানুয়াল সিস্টেম থেকে সরে এসে ব্লকচেইনের ব্যবহারের মাধ্যমে একটি সিস্টেম তৈরি করেন যাতে সহজে এবং কম সময়ে কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব। ব্লকচেইনের ব্যবহারের মাধ্যমে আইডিয়া চুরি হওয়ার ও কোনো সম্ভাবনা নেই, বলা যায় শতভাগ নিরাপদ।

টিম অ্যাপোক্যালিপস এর সদস্যরা হলেন- এস এম জিশানুল ইসলাম, সাহিদ হোসেন এবং সাদিয়া আহম্মেদ। যারা বর্তমানে অধ্যয়নরত রয়েছেন ঢাকার ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (UIU) সিএসই বিভাগে। এছাড়াও বাংলাদেশ থেকে অংশগ্রহণ করে টিম আনচেইন্ড, বি-ক্রিপ্ট, ব্লকবিট সহ অনেকে এবং অর্জন করে মেরিট অ্যাওয়ার্ড।

সুবিধা

ব্লকচেইনের ডেটা অপরিবর্তনীয় অর্থাৎ ব্লকচেইনে ডেটা ইনপুট করার পর তা আর পরিবর্তন করা সম্ভব না। যেহেতু এখানে প্রতিটি ডেটা ব্লক একটির সাথে অপরটি সংযুক্ত তাই কোনো ডেটা পরিবর্তন করতে গেলে পুরো চেইন পরিবর্তন হয়ে যাবে। আরেকটি বড় সুবিধা হলো ব্লকচেইন কোনো নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি নিয়ন্ত্রণ করে না। নেটওয়ার্কে থাকা প্রতিটি কম্পিউটার দ্বারা এই চেইন নিয়ন্ত্রিত হয়। এতে ব্লকচেইনের নিরাপত্তা বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়।

ব্যবহার 

ক্রিপটোকারেন্সি ব্লকচেইন প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় উদাহরণ। বিটকয়েনের মত সকল ক্রিপটো ব্লকচেইন প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল।এছাড়াও ব্লকচেইনের মাধ্যমে ডেটা স্থানান্তর অনেক নিরাপদ এবং কম ব্যয়বহুল। অর্থ লেনদেনের সবথেকে সিকিউর ও দ্রুত মাধ্যম হতে পারে ব্লকচেইন। NFT (Non Fungible Token) তৈরিতে ব্লকচেইনের গুরুত্ব অপরিসীম। ডিসেন্ট্রালাইজড, ট্রান্সপারেন্সি এবং নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করলে ব্লকচেইন টেকনোলজি প্রচুর সম্ভাবনাময় একটি খাত। ব্লকচেইন প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত আপডেট হচ্ছে। এমনও হতে পারে ভবিষ্যতে কোনো মুদ্রা বা টাকার প্রচলন থাকবে না, সকলে ক্রিপ্টো কারেন্সি এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করবে!!

 

To read more blogs, click here

 

Writer

Hrishy Biswas

Intern at Content Writing Department

YSSE