সাধারণ গাঁজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জৈব বর্জ্যকে টেকসই পরিষ্কারক পদার্থে রূপান্তর। ছবি : ইন্টারনেট।
ঢাকার মতো জনঘনত্ব বসতি শহরে রান্নাঘরের বর্জ্য ও দূষণের দ্রুত বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ। বর্তমান সময়ে যেখানে টেকসই জীবনধারা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে, সেখানে বায়ো-এনজাইম প্রাকৃতিকভাবে বর্জ্য কমানোর এবং দূষণ রোধের একটি কার্যকর উপায় হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। প্রতিদিনের রান্নাঘরের বর্জ্য ব্যবহার করে তৈরি করা এই বায়ো-এনজাইমগুলো রাসায়নিক মুক্ত এবং ব্যয়বহুলহীন, যা পরিচ্ছন্ন এবং সবুজ পরিবেশের প্রচার করবে।
প্রকল্পের ধারণা : বায়ো-এনজাইম প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো ফলের খোসা বা সাইট্রাস পিল, যা প্রায়ই বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেওয়া হয়, তা ব্যবহার করে একটি বহুমুখী প্রাকৃতিক পরিষ্কারক তৈরি করা। সাইট্রাস পিল বা ফলের খোসা এর মধ্যে লেবুর খোসা, কমলার খোসা, আপেলের খোসা ইত্যাদি হতে পারে। এই প্রকল্পটি রান্নাঘরের বর্জ্যকে ফেলে না দিয়ে পুনরায় ব্যবহার করতে এবং রাসায়নিক ক্লিনারগুলির উপর নির্ভরতা কমাতে সাহায্য করে। ফেলে দেওয়া বর্জ্য থেকে তা পচে গিয়ে কার্বন ডাই-অক্সাইড, মিথেন এর মতো গ্যাস সৃষ্টি হয় যা পরিবেশের ক্ষতি করে। বায়ো-এনজাইম শুধু টেকসই নয়, এটি স্থানীয় পর্যায়ে পরিবেশগত সমস্যার মোকাবিলায় একটি শক্তিশালী হাতিয়ার।
প্রক্রিয়া: বায়ো-এনজাইম তৈরি করা খুবই সহজ এবং যে কেউ এটি ঘরে করতে পারে। প্রক্রিয়াটি হলো ফলের খোসা, গুড়, ইস্ট এবং পানি মিশিয়ে এক মাসের জন্য গাঁজন হতে দেওয়া। প্রথমত একটি ১.৫ লিটার বোতলের মধ্যে ১লিটার পানি, ১০০গ্রাম ভাঙা গুড় দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর ৩০০ গ্রাম ফলের খোসা বা সাইট্রাস পিল এবং সামান্য পরিমাণে ইস্ট মিশিয়ে নিয়ে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, মিশ্রণের পরিমাণ ১:৩:১০ হয়, অর্থাৎ ১ অংশ গুড়, ৩ অংশ খোসা এবং ১০ অংশ পানি। ইস্ট ছাড়া ব্যবহার করলে ৩ মাস সময় লাগবে মিশ্রনটি তৈরি হতে।
প্রথম মাসে নিয়মিত বোতলের ক্যাপ পুরোপুরি না খুলে হালকা খোলা প্রয়োজন যাতে কোনো গ্যাস জমা না হয়ে থাকে।
বায়ো-এনজাইম দ্রবণটি পরিষ্কারক দ্রব্য হিসেবে গ্লাস, প্লেট, রান্নাঘরের বেসিন বা ফ্লোরের বা বাথরুমের দাগ পরিষ্কার করতে বা গাছের কীটপতঙ্গ দূর করতে সার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এই দ্রবণটি রাসায়নিক পণ্যগুলি যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর, এর পরিবর্তে কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যায়।
রাসায়নিক ছাড়া অর্থনৈতিকভাবে টেকসই সমাজ: বায়ো-এনজাইম একটি অর্থনৈতিকভাবে সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব বিকল্প হিসেবে রাসায়নিক ক্লিনারগুলির প্রতিস্থাপক, যা প্রায়ই ব্যয়বহুল এবং পরিবেশের ক্ষতি করে। রান্নাঘরের বর্জ্য ব্যবহার করে নিজ বাড়িতেই ক্লিনিং এজেন্ট তৈরি করা যাবে, যা প্রায় বিনামূল্যে। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে যেখানে রাসায়নিকের উপর নির্ভরতা কমানো যাবে এবং প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় একটি স্বাস্থ্যকর বাস্তুতন্ত্র গড়ে তোলা।
ধানমন্ডি লেক ও স্কুল শিক্ষার্থী নিয়ে বিডি টিম ১৭-র ক্যাম্পেইন: বাংলাদেশ থেকে দল ১৭ তাদের উদ্যোগের অংশ হিসেবে ধানমন্ডি লেকে একটি ক্যাম্পেইনের আয়োজন করে, যেখানে তারা রান্নাঘরের বর্জ্য কমানোর এবং দূষণ প্রতিরোধে বায়ো-এনজাইমের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করে। এছাড়াও, তারা স্কুল শিক্ষার্থীদের সাথে একটি কর্মশালা এবং সেমিনার পরিচালনা করে, যেখানে শিক্ষার্থীদের বায়ো-এনজাইম তৈরির প্রক্রিয়া শেখানো হয় এবং তাদেরকে পরিবেশবান্ধব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চর্চায় অনুপ্রাণিত করা হয়। এই হাতেকলমে অভিজ্ঞতা শিক্ষার্থীদের সক্রিয়ভাবে পরিবেশ রক্ষার জন্য উদ্যোগ নিতে উৎসাহিত করবে বলে মনে করে বাংলাদেশ থেকে টিম ১৭।
বায়ো-এনজাইম প্রকল্পটি “স্টুডেন্ট সোসাইটি ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ” এর একটি উদ্যোগের অংশ, যা জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলায় উদ্ভাবনী সমাধানের জন্য এইবার কম্পিটিশন করছে এশিয়ার বিভিন্ন দেশ নিয়ে। এই অ্যাক্সেলেটর প্রোগ্রামটি ৫টি মহাদেশ, ৭টি দেশ, ২৫টি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১২৫০+ শিক্ষার্থীদের নিয়ে এইবারের আয়োজন, যারা টেকসই ও সবুজ ভবিষ্যতের লক্ষ্যে কাজ করছে। “সিড অফ পিস” দ্বারা বাস্তবায়িত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পূর্ণ অর্থায়নে পরিচালিত এই ফেলোশিপ তরুণদের জলবায়ু কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ প্রদান করছে। ইউনিভার্সিটি অফ লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ থেকে দল ১৭, যারা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছে। তাদের বায়ো-এনজাইম প্রকল্প নিয়ে এই অ্যাক্সেলেটরে অংশগ্রহণ করেছে, যা বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অবদান রাখবে।
To read more blogs,click here
লেখক,
ফাতেমা তুজ জান্নাত ঐশী (টিম১৭)