স্বপ্নের মধ্যে আমরা রোগের মহৌষধ পেতে শুনেছি গ্রামগঞ্জে। এই নিয়ে গুনিজনেদের কাছে সংকোচ বোধ হয়, আধৌ কি সম্ভব? আমরা কোনো সমস্যা সমাধান করতে গেলে বসে, শুয়ে চিন্তা করে সমাধান বের করার চেষ্টা করি। যখন সমস্যা সমাধান নিয়ে আমরা বেশি উদীগ্ন হয়ে ঘুমিয়ে পড়ি তখন আমাদের অবচেতন মন সেটার প্রতিচ্ছবি স্বপ্নের মাঝে প্রকাশ করে। ঠিক তেমনি জগৎ এর বিখ্যাত আবিষ্কার গুলা কিন্তু এসেছিল স্বপ্ন থেকে। মজার ব্যাপার হচ্ছে আমাদের পছন্দের বিজ্ঞানী স্যার আলবার্ট আইস্টাইন তার ‘’থিওরী অব রিলেটিভিটি” আইডিয়াটা পেয়েছিল স্বপ্ন থেকে। এইরকম আরো বিখ্যাত আবিষ্কার হয়েছিল স্বপ্ন থেকে যা আমরা দেখব এই ব্লগে: 

১.সেলাই মেশিন 

ইলিয়াস হাউ একজন যন্ত্রবিদ ছিলেন। দারিদ্রতার কারনে তার স্ত্রী অন্যদের জন্য সেলাইয়ের কাজ করতেন। এটা দেখে তিনি চিন্তা করতেন যে এটাকে কীভাবে যন্ত্রে পরিণত করা যায়।কয়েক বার চেষ্টা করেও কোনো লাভ হয় নি। তিনি মুলত সুচের মাথা নিয়ে বিভ্রান্ত ছিলেন, যে কোন মাথাটা কোথাও হওয়া উচিত। ১৮৪০ শনে, তিনি একরাতে যখন ঘুমাতে গিয়েছিলেন তখন তিনি স্বপ্নে দেখলেন: তিনি গিয়েছিলেন খারাপ রাজ্যের রাজার জন্য সেলাই মেশিন তৈরি করতে। কিন্ত রাজা তাকে সেলাই মেশিন তৈরি করতে সময় দিয়েছিলেন ২৪ ঘন্টা। তিনি চেষ্টা করে যাচ্ছেন এটা বানানোর জন্য কিন্তু সফল হয়নি। যখন তাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছিলেন তখন তিনি লক্ষ্য করলেন যে সৈন্যদের বর্শার শেষ প্রান্তে একটি গর্ত আছে তিনি তখন সময় এর জন্য আবেদন জানালেন।ঠিক তখনই জেগে উঠলেন। তখন ভোর ৪ টা বাজে, তৎক্ষণাত তিনি তার ওয়ার্কশফে চলে যায় যেটার কার্যক্রম শুরু হয়। অতঃপর তিনি একটি প্রাথমিক সেলাই মেশিন যেখানে সুইচের মুখটা থাকে নিচের দিকে যা আজকে সুইচ মেশিনে দেখে থাকি আমরা।

২.বেনজিনের গঠন

আমরা বেনজিনের নাম শুনেছি কম না বেশি রসায়ন পড়ার সময়। বেনজিন আবিষ্কার হয়েছিল ঠিকই কিন্তু এর স্ট্রাকচার নিয়ে বিজ্ঞানীরা দন্দে পড়ে যান। রসায়নবিদ ফ্রেডরিখ অগাস্ট কেকুলে বেনজিনের স্ট্রাকচার উঠে পড়ে লেগে ছিলেন কাগজে কলমে, তিনি ব্যার্থ হয়ে টেবিল ছেড়ে ঘুমিয়ে পড়লেন। তখন তিনি দেখলেন যে একটি সাপ তার নিজের লেজ খেয়ে ফেলতেছে। এটা দেখার পর তার ঘুম ভেঙে যায় এবং তিনি বেনজিন এর সর্পিলাকার গঠন আবিষ্কার করেন।

৩.পর্যায় সারণি 

দিমিত্রি মেন্ডেলিভ তিন দিন-রাত না ঘুমিয়ে চেষ্টা করছিলেন কীভাবে মৌল গুলো পর্যায় সারণিতে স্থাপন করা যায়। না পেরে তিনি তার পর্যায় সারণি নিয়ে চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে গেলেন। তিনি বললেন ‘’আমি স্বপ্নে দেখছিলাম সকল মৌল  তাদের প্রয়োজন অনুসারে জায়গায় পড়ছে.  তিনি তৎক্ষণাৎ জেগে উঠলেন এবং লিখে ফেললেন একটুকরো কাগজে. শুধু মাত্র একটি কারেকশন প্রয়োজন পড়ল পরবর্তীতে” 

৪.থিওরি অব রিলেটিভিটি 

স্যার আলবার্ট আইস্টাইন তার থিওরী অব রিলেটিভিটি আবিষ্কারটক আসছিল মুলত ‘গরু’ থেকে যেটা তিনি দেখেছিলেন স্বপ্নের মাঝে তিনি তার স্বপ্নে দেখেছিলেন তিনি একটি গরুর খামারে মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন এবং তিনি দেখতে পেলেন একপাল গরু বৈদ্যুতিক বেড়া সামনে এসে দাড়াল তিনি তখন দেখলেন যখন বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয় তখন গরু গুলা লাফ দিয়ে উঠে একসাথে তখন অন্যপাশে একজন দেখলেন যে গরু গুলো লাফাচ্ছে এক এক করে দেখতে ঠিক মেক্সিকাল ডেউ ময়ো লাগছে এই দেখে আইস্টাইন বুঝতে পারে যে আমি যেঅবস্থায় যা দেখছি সেটা আরেকজন তার অবস্থানে অন্যভাবে দেখছে এই থেকে জণ্ম নিল তার বিখ্যাত থিওরি

৫.ডিএনএ – ডাবল হেলিক্স স্ট্রাকচার 

আমরা সবাই ডিএনএ- যেটা আমাদের জেনিটিক কোড গুলা স্টোর করে – নাম শুনেছি কিন্তু কখনো ভেবে দেখেছি এই গঠন টা এমন হলো কেন? জেমস ওয়াটসন আমিরিকান মলিকিউলার বায়োলজিস্ট এবং ফ্রেন্সিস ক্রিক ডিএনএ গঠন নিয়ে কাজ করতে ছিলেন রাত ধরে ওয়াটসন মুলত ডিএনএ উপাদান গুলো কীভাবে একে অপরের সাথে লজিকাল এবং স্থিতিশীলভাবে যুক্ত হয় সমাধান নিয়ে ভাবতে ভাবতে ঘুমাতে  গেলেন তখন তিনি স্বপ্নে দেখলেন যে তিনি বৃত্তাকার একটি সিঁড়ি বেয়ে নামতে ছিলেন তখনই তিনি বুঝতে পারলেন যে কম্পোনেন্ট গুলো ডাবল হেলিক্সের মাধ্যমে নিজেরদের মাঝে সজ্জিত থাকেন এবং এ থেকে তিনি আবিস্কার করলেন ডিএনএ গঠন

৬. ইন্সেপশন

আমরা মোটামুটি ক্রিস্টোপার নোলান এর একটি জনপ্রিয় মুভি ‘ইন্সেপশন’’ দেখেছি বা শুনেছি মজার ব্যাপার হচ্ছে ক্রিস্টোপার নোলান মুভির স্ক্রিপ্ট লেখেছিলেন ৭ বা ৮ বছর আগে, কিন্তু এর কিছু বাকি রয়ে যায়, যেটা এসেছিল তার স্বপ্নের মাধ্যমে মুলত তিনি লুসিড ড্রিম – যেখানে নিজের চরিত্রকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় – দেখার মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হয়

তাই স্বপ্নকে উপেক্ষা না করে যদি আমরা যদি স্বপ্নকে গুরুত্ব নিয়ে পর্যবেক্ষণ এবং পর্যালোচনা করতে পারি, হতে পারে ভবিষ্যতে আমরাও আর্কিমিডিসের মতো Eureka!  বলে উঠব! 

 

এই রকম আরো ব্লক পড়তে ক্লিক করুন।

 

লেখক 

তানভীর হোসেন শাওন 

ইর্ন্টান, কন্টেট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট 

YSSE