বিশ্বব্যাপি মানবাধিকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রতিবছর ১০ই ডিসেম্বর পালন করা হয় ‘মানবাধিকার দিবস’। এই দিনটির সূচনা হয় ১৯৪৮ সালে। মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের গুরুত্ব সবার সামনে তুলে ধরতে এই দিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং তাৎপর্যপূর্ণ।

মানবাধিকার কী?

মানবাধিকার হলো সার্বজনীন মৌলিক অধিকার যা সকলের ভোগ করার অধিকার রয়েছে। প্রত্যেকরেই শিক্ষা, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। তাছাড়া রয়েছে ব্যক্তি স্বাধীনতা এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার। মানবাধিকার হলো এমন অধিকার যা বৈষম্যের শিকল ভেঙ্গে দিতে পারে।

বৈশ্বিক প্রতিকূলতা:

বিশ্বের সবার মানবাধিকার নিশ্চিতের কথা বলা হলেও, বিশ্বের প্রায় স্থানেই মানবাধিকারের লঙ্ঘন চরম পর্যায়ে। বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বৈষম্যর বেড়াজাল। গায়ের রং অনুযায়ী বৈষম্য, নারী-পুরুষ বৈষম্য, ধনী-গরিব বৈষম্য এগুলো সচরাচরই দেখা যাচ্ছে। কিছু কিছু দেশে শিশুশ্রমের আধিক্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। যে বয়সে ছেলে-মেয়েদের স্কুলে গিয়ে বিদ্যা লাভ করার কথা, সে বয়সে তারা অমানবিক পরিশ্রম করছে। এর পেছনে মূলত দায়ী হতে পারে দারিদ্র্য এবং পারিবারিক সচেতনতার অভাব। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মানবাধিকারের উপর পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিশেষ করে, ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্রসমূহ তাদের জীবিকা হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে। তার সাথে প্রযুক্তিগত বৈষম্যও মানবধিকার রক্ষায় বাঁধা হয়ে দাঁড়াছে। কিছু দেশ তাদের প্রযুক্তিগত উন্নয়নের কারণে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে কিছু দেশ প্রযুক্তির অভাবে শিক্ষাগত এবং অর্থনৈতিক দিক উভয়ই থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া, বিশ্বজুড়ে চলমান যুদ্ধ এবং সংঘাতের কারণে মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্গিত হচ্ছে। নারীদের প্রতি অসম্মান এবং নারী নির্যাতন প্রতিনিয়তই বৃদ্ধি আছে।

মানবাধিকার লঙ্ঘন কী কোনোভাবে প্রতিরোধ করা যায় না? আমরা কী পারি না সবাই এক হয়ে বৈষম্যের শিকলে বন্ধ কারাগার ভেঙ্গে একটি মুক্ত পৃথিবী গড়তে?

বৈষম্যের শিকল ভেঙ্গে একতার স্বপ্ন:

মানবাধিকারের প্রধান উদ্দেশ্য সবার স্বাধীনতা, সম্মান এবং অধিকার রক্ষা করা। তবে বৈষম্য, মানবাধিকারগুলো রক্ষায় প্রধান বাঁধা। লিঙ্গ বৈষম্য, ধর্মীয় বৈষম্য এবং বর্ণবাদ আজ সমাজের ক্যান্সারস্বরূপ। এসব থেকে মুক্তি একমাত্র পথ একতা। একতায় পারে সবাইকে নিজের স্বার্থ, অহংকার এবং অন্যের প্রতি ঘৃণা দূর করে এক বৃন্তে আনতে।

একতার স্বপ্নে, সবার জন্য মানবধিকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমরা নিচের পদক্ষেপগুলো নিতে পারি:

  • সবার জন্য শিক্ষা: বৈষম্য দূরীকরণে সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। সবাইকে সঠিক জ্ঞান বিনিময় করতে। পাঠক্রমে মানবধিকার সম্পর্কিত অধ্যায় রাখতে হবে। পৃথিবীর প্রতিটি শিশু যেন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয় সে ব্যবস্থা নিতে হবে। শিশুশ্রম বন্ধ করতে হবে।
  • পারিবারিক শিক্ষা: মানুষের শিক্ষা অর্জনের প্রথম ও প্রধান স্থান তার পরিবার। পরিবার থেকেই একজন মানুষ নীতি-নৈতিকতার শিক্ষা পাই। তাই, পরিবার থেকে একজন শিশুকে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে সম্মান দেওয়ার শিক্ষা দিতে হবে। তাদেরকে তাদের মানবিক মূল্যবোধ সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। ন্যায়ের পথে থেকে সবাইকে সহযোগিতা করার মন-মানসিকতা তাদের ভিতর সৃষ্টি করতে হবে।
  • নারী সুরক্ষা: নারীদের সুরক্ষা নিশ্চিতে নানান ধরণের আইন করতে হবে। এছাড়া সমাজে কোনো নারী যাতে অবহেলিত না হয় তার উপর বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে। নারীদের মেধার মূলায়ন করে তাদের জন্য উপযুক্ত সুরক্ষিত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।
  • অনুন্নত দেশসমূহের অর্থনৈতিক উন্নয়ন: বেশিরভাগ দেশের মানবধিকার লঙ্ঘনের প্রধান কারণ দারিদ্র্য। দারিদ্র্যের কারণে অনেক মানুষ তাদের শিক্ষা, অন্ন, চিকিৎসা, বাসস্থানের অধিকার থেকে আজও বঞ্চিত। তাই উন্নত বিশ্বকে অনুন্নত দেশসমূহের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এগিয়ে আসতে হবে। সবার সহযোগিতায় একটি সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলা সম্ভব হবে।
  • আইন প্রণয়ন: মানবধিকার রক্ষায় বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করা হলেও তা পালন করার হার নিম্নে। পৃথিবীর অনেক দেশ জুড়েই আজ যুদ্ধ বিগ্রহ। তাছাড়া ঘুম, খুন এবং নির্যাতনের ইতিহাসও অনেক। এসব নিয়ন্ত্রণে শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশ্বের সবাইকে সংঘাত না বেছে নিয়ে শান্তিকে বেছে নিতে হবে। মানবধিকার নিশ্চিতে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে এবং বিশ্বের প্রতিটি মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

এই পৃথিবী কোনো একটি নির্দিষ্ট দেশের কিংবা নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর নয়। এই পৃথিবী সবার। এই পৃথিবীতে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার অধিকারও সবার। আর পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষের অধিকারগুলো যেন রক্ষা হয় সেই দায়িত্ব মানুষেরই। তাই চলুন এই মানবধিকার দিবসে আমরা শপথ নি, একটি বৈষম্যমুক্ত সুন্দর এবং মুক্ত চেতনার পৃথিবী গড়ার।

আরো ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন

লেখক,
প্রত্যয় কান্তি দাশ,
ইন্টার্ন,
কনটেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট,
YSSE