আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI)‌ বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বর্তমান বিশ্বের কাছে খুব পরিচিত একটি শব্দ। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা  হলো কম্পিউটার বিজ্ঞান এর একটি শাখা, যেখানে মানুষের বুদ্ধিমত্তা ও চিন্তা শক্তিকে কম্পিউটার দ্বারা অনুকরন করার চেষ্টা করা হয়ে থাকে। মানুষের বুদ্ধিমত্তা ও চিন্তা শক্তিকে প্রযুক্তি নির্ভর করে যন্ত্রের মাধ্যমে কৃত্রিম ভাবে বাস্তবায়ন করাকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বলে।

 

বর্তমান এ বিশ্বের অনেক দেশ এ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে  একাডেমিক শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সেখানে কিভাবে কম্পিউটার এর কোন সফটওয়্যার দ্বারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তৈরী করা যায় সেটি প্রাধান্য পেয়েছে। আন্দ্রেয়ার কাপলান এবং মাইকেল হেনলিন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সংজ্ঞায় বলেন “এটি একটি সিস্টেমের বহির্ভূত তথ্য সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে পারার ক্ষমতা, এমন তথ্য থেকে শিক্ষা গ্রহণ এবং ঐ শিক্ষা ব্যবহার করে নমনীয় অভিযোজনের মাধ্যমে বিশেষ লক্ষ্য করা।

 

অ্যালান ম্যাথিসন টুরিং প্রথম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জনক। পরবর্তীতে জন ম্যাকার্থি “আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স” নামক পরিভাষা প্রচলন করেন। 

 

বর্তমানে এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ব্যপক ব্যবহার দেখা যাচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা  এবং এর টুলসগুলো বর্তমানে  মানুষের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে এবং একই সাথে এর  কল্যানকর দিকগুলো সকলের নজর কেড়েছে । বর্তামানে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ব্যবহার করে যেকোনো কাজ নির্ভুল ভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে। ফলস্বরূপ, যেকোনো ঝুকিপূর্ণ কাজে,কলকারখানা এবং শিল্প প্রতিষ্ঠাগুলোতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে

 

ঘরোয়া,বাণিজ্যিক বা সামরিক যে কোন কাজই হোক না কেন সব কাজেই বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার করা হচ্ছে। এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ফলে মানুষের এখন আর ঝুকিপূর্ণ কাজ করতে হয় না। এখন এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে বিভিন্ন রোবট তৈরী করা হচ্ছে যা দিয়ে খুব অনায়াসে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ গুলো সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে। 

 

মানুষ যেখানে দৈনিক ৮ ঘন্টা কাজ করে সেখানে এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সি দ্বারা শিল্প প্রতিষ্ঠান এ ২৪  ঘন্টা পর্যন্ত কাজ করতে পারে। এই আশ্চর্যকর প্রযুক্তি যেহেতু মানবিক অনুভুতি তথা রাগ, ঘৃণা, ভয়, বিরক্তি প্রভৃতি থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত বিদায় তাদের কাজে মানবিক অনুভূতির কোনো বাধা সৃষ্টি হয় না। 

 

এআই-চালিত চ্যাটবটগুলি অবসর সময়ে ও গ্রাহক পরিষেবা সরবরাহ করতে পারে। তাছাড়া বোমা নিষ্ক্রিয় করতে, সমুদ্র তলদেশে অনুসন্ধান চালাতে এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সি দ্বারা তৈরী রোবট ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া এখন ব্যাংক অথবা বড় বড় প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা রক্ষার জন্য গার্ডের পরিবর্তে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যাবহার প্রচলিত হচ্ছে। এখনকার দিনে কারো কোনো রোগ হলে সেটা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করার জন্য, তার জন্য কি ওষুধ প্রয়োজন, কিভাবে তার চিকিৎসা হওয়া উচিত সেই সব বিষয় গুলোর পিছনেও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর অনেকটা ভূমিকা আছে।

 

তবে প্রতিটা সৃষ্টির কিছু না কিছু অকল্যাণকর দিক থাকে। জীবনকে সহজ ও সাবলীল করার জন্য বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে অসৎ কাজেও ব্যবহার করা হচ্ছে। 

 

এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সি এর কারনে ধারনা করা হচ্ছে ভবিষ্যতে বেকারত্বের হার ক্রমশ বৃদ্ধি পাবে।  কারণ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সি দ্বারা মানুষ থেকেও নির্ভুলভাবে কাজ করানো সম্ভব হচ্ছে। 

 

তাছাড়া এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সি এর কারনে মানুষ এর সৃজনশীল ক্ষমতা কমে যাবে। কারণ প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়বে তখন আর মানুষের চিন্তা করার প্রয়োজন অনুভব করবে না। 

 

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি মেশিন বা রোবট গুলো নিজেরাই দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতার  বিকাশ করবে, তারা মানুষকে আক্রমণ করতে পারে, মানুষের মনের উপর তাদের নির্ভরতা শেষ হয়ে যাবে এবং সম্ভবত মানব বিশ্ব তার অস্তিত্ব হারাবে। তাছাড়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা তৈরী যেকোনো প্রযুক্তি নিজের চিন্তা ভাবনা দিয়ে কোনো কাজ করতে পারে না। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার   অন্যতম অসুবিধা হল এটি  মানুষের মতো আবেগ এবং সৃজনশীলতাকে ব্যবহার করে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।

 

সৃজনশীলতার অভাব মানে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সমস্যার নতুন সমাধান তৈরি করতে পারে না বা কোনো অত্যাধিক শৈল্পিক ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করতে পারে না। এছাড়াও বর্তমানে এই AI কে ব্যবহার করে অনেক অনৈতিক কাজ এর সাথেও অনেকে জড়িত হচ্ছে। যার ফলে মানুষের মধ্যে নিরাপত্তার আশংকা দেখা যাচ্ছে। 

 

তাছাড়া এখন এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা  কে ব্যাবহার করে কিছু অসাধু মানুষ ভোক্তার সকল গোপনীয় তথ্য সংগ্রহ করে ফেলছে। সবচেয়ে উদ্বিগ্নের বিষয় হচ্ছে যে কোনদিন যদি  এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের নিয়ন্ত্রনের বাহিরে চলে যায় তাহলে এই পুরো বিশ্ব, সাধারণ মানুষ এবং  এমনকি আমাদের সমাজ হুমকির মুখোমুখি হবে।

 

পরিশেষে বলা যেতে পারে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ইতিবাচক দিক এর সাথে যদিও নেতিবাচক দিক রয়েছে তারপরেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার  ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল এবং সম্ভাবনায় পূর্ন। 

 

এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে আমরা এর প্রভাব সম্পর্কে সচেতন থাকি এবং এর বিবর্তনের সাথে আসা চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবেলা করার জন্য কাজ করি। বর্তামানে  বিশ্ব এই প্রযুক্তিকে গ্রহণ করেছে এবং তারা মনে করছে এই এ আই দ্বারা ভবিষ্যৎে নতুন এক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে।

এরকম আরও ব্লগ পড়তে, ক্লিক করুন। 

লেখক, 

তাবাসসুম আক্তার তাবা 

ইন্টার্ন,‌ কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট

YSSE