ব্র্যান্ডিং জগতে ভোগ বিলাসিতার আরেক নাম গুচি। আজন্ম একে ধনী ও বিত্তশালীদের ব্র্যান্ড হিসাবেই ধরা হয়। সুতরাং, বুঝতেই পারছেন গুণে ও মানে কতোটা দুর্মূল্য হলেই কেবল একটা জিনিস, যা কিনা সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকতে পারে। কিন্তু কেন?
তার উল্লেখযোগ্য একটি কারণ হতে পারে কোম্পানিটির ব্র্যান্ড ভ্যালু। বর্তমানে এক সমীক্ষায় দেখা গেছে ১ জানুয়ারি ২০২২ পর্যন্ত এর ব্র্যান্ড ভ্যালু ১৫.৪৮ বিলিয়ন ইউরো। এটি এখন পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী ৪৮৩ টি স্টোরে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করে থাকে।
তাহলে চলুন গুচি সম্পর্কে আরোও কিছু আজানা তথ্য জেনে নেয়া যাক।
Gucci এর প্রতিষ্ঠাকাল
Gucci, একটি বিশ্ববিখ্যাত ইটালিয়ান ব্র্যান্ড। যার যাত্রা শুরু হয় ১৯২১ সালে ইটালির ফ্লোরেন্স শহরে গুচিও গুচির হাত ধরে। এটি ইটালির সবচেয়ে বড় ও পুরনো কোম্পানি যার বর্তমান বয়স ১০২ বছর। আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি ফ্যাশন দুনিয়ায় সাড়া জাগানো এই ব্র্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা প্রথম জীবনে ছিলেন হোটেলের সামান্য একজন লিফটম্যান।
ব্র্যান্ড হিসেবে আত্মপ্রকাশ
গুচিও গুচি কিছু কাল হোটেলে লিফটম্যান হিসেবে চাকরি করার পর তিনি একটি ফ্যাশন হাউসে চাকরি নেন। মূলত এখান থেকে তার জীবনের মোড় ঘুরে যায়। এখানে আগত বিভিন্ন ফ্যাশন সচেতন মানুষের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ ঘটে।
পাশাপাশি ফ্যাশন সম্পর্কে খুঁটিনাটি অনেক বিষয়ে জ্ঞান লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি ইটালিতে নিজের একটি প্রতিষ্ঠান খোলার মনস্থির করেন। তারই ফলশ্রুতিতে গুচি’র যাত্রা। তবে প্রথম দিকে এটির তেমন জনপ্রিয় ছিলনা যতটা না আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা এখন ।
পণ্যে বৈচিত্র্যকরণ
শুরুতে কোম্পানিটি অল্প কিছু পণ্য যেমন চামড়াজাত পণ্য, প্রিমিয়াম নিটওয়্যার সিল্ক, জুতা, হ্যান্ডব্যাগ প্রস্তুত করতো। এদিকে কোম্পানির কর্ণধার গুচিও গুচি তার ব্যবসা কেবল মাত্র ইটালিতে সীমাবদ্ধ রাখতে ইচ্ছুক ছিলেন । কিন্তু ১৯৫৩ সালে তিনি মারা যাওয়ার পর তার ব্যবসার দায়িত্ব পায় তার তিন ছেলে Aldo, Vasco ও Rodolfo।
পরবর্তীতে তার ছেলেরা পৈত্রিক ব্যবসা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা চালান। একপর্যায়ে প্রতিষ্ঠানটি ১৯৮১ সালে পোশাক নিয়ে কাজ করা শুরু করেন। যেখানে বিখ্যাত আমেরিকান ডিজাইনার টম ফোর্ড উল্লেখযোগ্য এই খাতটি এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন । আর খুব অল্প সময়ে ব্যাপক সাড়াও পান।
Gucci, লোগো ডিজাইনের রহস্য
অনেকে হয়তো লক্ষ্য করেছেন গুচি ব্র্যান্ডের লগো অন্য সকল ব্র্যান্ড থেকে আলাদা। তবে এর পেছনে আলাদা রহস্যও রয়েছে। গুচিও গুচির ছেলে Aldo Gucci ১৯৩৩ সালে তার কোম্পানির লগো ডিজাইন করেন। মূলত লগোটি তে ডবল জি-এর ব্যবহার তার প্রয়াত বাবা গুচিও গুচি’র স্মৃতিকে স্মরনীয় করে রাখতে ব্যবহার করা হয়েছে। সাথে মাঝ বরাবর একটি লাল স্ট্রাইপ এবং দুইপাশে দুটি সবুজ স্ট্রাইপ।
ধনীদের ব্র্যান্ড বলার কারণ
প্রতিষ্ঠার পর থেকে অদ্যাবধি গুচি ব্র্যান্ডের টার্গেট গ্রুপ সমাজের উচ্চবিত্ত ও ধনীক শ্রেনির মানুষ। পণ্যের প্রচার ও বিজ্ঞাপনেও উচ্চবিলাসী মনোভাবের ছোঁয়া।
এটির লগোও মূলত বিলাসবহুল ব্র্যান্ডিং এর পরিচয়ও বহন করে। বিখ্যাত সব মডেল, সেলিব্রিটি, সুপারস্টারদের পছন্দের তালিকায় স্থান পায় গুচি ব্র্যান্ডের ঘড়ি, হ্যান্ডব্যাগ, কাপড়, ক্যাপ, সানগ্লাস, জুতা, জিন্স, জুয়েলারি, সুগন্ধি ও প্রসাধনী সামগ্রী।
গুচি ব্র্যান্ডের উত্থান পতন
আর পাঁচটা বিখ্যাত কোম্পানির মতোই গুচি ব্র্যান্ডের বিশাল সম্পদের মালিকানা নিয়ে ভাইদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। বেশ কয়েকবার কোম্পানিটি দেউলিয়া হওয়ার দারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল। একইসাথে জন্ম দিয়েছে ব্যাপক নাটকীয়তার। অনেকে হয়তো এই ধনী পরিবারের কালো অধ্যায় সম্পর্কে জানে না । হলিউডের বিখ্যাত ছবি The “House of Gucci” একটি সাড়া জাগানো সিনেমা। যা এই পরিবারের পিছনের কাহিনী নিয়ে রচিত।
পরিশেষে, গুচিও গুচি হতে পারে সকল মানুষের অনুপ্রেরণা। কেননা আপনি যেখানেই থাকুন আর যাই হোন না কেন সঠিক পরিকল্পনা ও পরিশ্রম থাকলে সফলতা আপনারই হতে বাধ্য।
আরও ব্লগ পরতে এখানে ক্লিক করুন।
Writer
Baitul Hikma.
Intern, Content writing Department. YSSE.