কোরিয়ান সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি তে প্রথম অস্কার পাওয়া সিনেমা প্যারাসাইট।২০১৯ সালে মুক্তি পাওয়া এই সিনেমাটিতে একটি ধনী পরিবার ও গরীব পরিবারের অসাধারণ এক গল্প ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।কিভাবে একটি সাধারন গল্প থেকেও অস্কার পাওয়া সম্ভব তা করে দেখিয়েছেন ডিরেক্টর বং জন হু।সিনেমাটি যারা দেখেন নি তাদের জন্য স্পয়লার এলার্ট!
পটভূমি:
একটি ধনী ও গরিব পরিবারের গল্প নিয়ে প্যারাসাইট সিনেমাটি বানানো হয়েছে।গরীব পরিবার টি তে ছিল মিস্টার কিম, তার স্ত্রী চুং সুক,তাদের মেয়ে কি জং এবং তাদের ছেলে কি হুক।একটি বিল্ডিং এর ছোট্ট বেজমেন্টে থাকতো তারা।তাদের কারো কাছেই কোনো কাজ ছিল না।অল্প সল্প কিছু কাজ দিয়েই তাদের সংসার চলতো।একদিন কি হুক এর এক বন্ধু ভাগ্যদেবতা হয়ে হাজির হয় তাদের বাসায়।তার বন্ধু বেশ কয়েকবছর ধরে একটি ধনী পরিবারের মেয়েকে টিউশন পড়াতো।এখন সে অন্য দেশে পড়াশোনা করতে যাবে বলে আর পড়াতে পারবে না।তাই সে চাইছে ধনী পরিবারের ওই মেয়েটিকে কি হুক পড়াক।কি হুক খুব বেশি দূর পর্যন্ত পড়াশোনা করে নি।কিন্তু সে কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীর থেকেও ভাল ইংরেজি বলতে পারতো।পরিবারটি ধনী হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই তারা উচ্চশিক্ষিত একজন শিক্ষকের খোজে ছিল।তাই কি হুক এর বন্ধু তাকে একটি নকল সার্টিফিকেট বানাতে বলে।যেহেতু তাদের কাছে কোনো কাজ ছিল না তাই সে আর দ্বিতীয় বার ভাবলো না।তার বন্ধুর কথা মতো সে একটি নকল সার্টিফিকেট বানিয়ে ইন্টারভিউ দিতে চলে যায়।বিলাশবহুল বাড়ি দেখে সে খুব চমকপ্রদ হয়।বাড়িটির মালিক মিস্টার পার্ক বেশ বড় একটি কোম্পানির মালিক।তার বড় মেয়ে ডা হাই কে পড়ানোর জন্য গিয়েছিল কি হুক।বাড়ির মালকিন অর্থাৎ মিসেস পার্ক সার্টিফিকেট দেখে সন্তুষ্ট হয়।সিনেমাটির আসল কাহিনী এখান থেকেই শুরু।মালকিনের সাথে কথোপকথন চলাকালে সে জানতে পারে তাদের ছোট ছেলে ডা সং ছবি আঁকতে খুবই পছন্দ করে।এজন্য তাদের আর্ট শিক্ষক এর প্রয়োজন।এই সুযোগে কি হুক বিভিন্ন মিথ্যা ও বানোয়াট গল্প সাজিয়ে তার বোনকে ডা সং এর আর্টের শিক্ষক হিসেবে নিয়ে আসে।একদিন ক্লাস করাতে বেশ রাত হয়ে গেলে মিস্টার পার্ক তার ড্রাইভার কে বলে কি জং কে নামিয়ে দিয়ে আসতে।গাড়িতে যাওয়ার সময় তার মনে হলো এবার তার বাবাকেও এই বাড়িতে কাজের জন্য নিয়ে আসতে হবে।তাই সে তার পোশাকের কিছু অংশ গাড়িতে ফেলে যায়।পরদিন মিস্টার পার্ক গাড়িতে মেয়েদের কাপড় দেখে ড্রাইভার কে সন্দেহ করে এবং তাকে চাকরি থেকে বের করে দেয়।এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কি জংও মিথ্যা বানোয়াট কথা বলে তার বাবাকে পরিচয় করিয়ে দেয় এবং সে ড্রাইভার হিসেবে নিযুক্ত হয়।বাবা, ছেলে, মেয়ে তিনজনেই এই বাড়িতে বেশ সাচ্ছন্দ্যে কাজ করে যাচ্ছিল।এবার তারা চাইলো তাদের মা কেও বাড়িতে নিয়ে আসবে।সেই বাড়িটি তে একজন কাজের মহিলা বা কেয়ারটেকার ছিল।তাকে তারা খুব বাজে ভাবে ফাসিয়ে দেয় এবং তার চাকরি চলে যায়।এবার ওই কেয়ার টেকারের স্থলে তারা তাদের মা কে নিয়ে আসে।মিস্টার পার্ক এর ছোট ছেলের জন্মদিন উপলক্ষে তারা সবাই বাড়ির বাইরে চলে যায়।এতে বাড়ির দায়িত্ব চলে আসে কিং হুক এর মায়ের।তখন মিসেস কিম তার পুরো পরিবারকে এই বাড়িতে নিয়ে আসে। তারা বেশ আনন্দ ফুরতি করতে থাকে।ওইদিন সন্ধ্যা বেলায় হঠাৎ বাড়ির কলিং বেল বেজে উঠে। তারা সকলে ভয় পেয়ে যায়।তবে ক্যামেরায় তারা দেখতে পায় বাড়ির পুরনো কেয়ার টেকার এসেছে।সে বলে তার কিছু পুরনো জিনিস নিতে এসেছে।কেয়ার টেকার বাড়ির ভেতরে ঢুকে রান্নাঘরের বেজমেন্টে এ চলে চায়।সেখানে একটি গোপন রাস্তা ছিল, যেটি দিয়ে একটি সেফটি চেম্বার এ যাওয়া যেত।পুরনো কেয়ার টেকার (মুন ইউং) সেখানেই যাচ্ছিল।তার পিছন পিছন মিসেস কিম ও যাচ্ছিলেন।সেখানে গিয়ে দেখেন ওই চেম্বার রুমে আগে থেকেই মুন ইউং এর হাসবেন্ড ছিল।মিসেস কিম চমকে যান।তখন মুন ইউং পুরো ঘটনা তাকে খুলে বলে।মিসেস কিম যখনই পুলিশে ফোন করতে যাচ্ছিলেন তখনই মিস্টার কিম ও তার ছেলে মেয়ে সিড়িতে পা ফসকে চেম্বার রুমে চলে আসে।তখন তাদের কথোপকথন মুন ইউং ফোনে রেকর্ড করে রাখে।এরপর কিম পরিবার মুন ইউং ও তার হাসবেন্ড কে বেধে রেখে উপরে চলে যান।তার কিছুক্ষণ বাদেই মিস্টার পার্ক চলে আসলেও তারা এ ঘটনা সম্পর্কে কিছুই বুঝে নি।এদিকে বাড়ির ছোট ছেলের জন্মদিন উপলক্ষে পরদিন একটি পার্টির আয়োজন করা হয়।সেখানে পুরো কিম ফ্যামিলির উপস্থিত হতে হয়।কি হুক ঠিক করে বেজমেন্টে গিয়ে সে ওই দুইজনকে মেরে ফেলবে।কিন্তু সে সেখানে গেলে মুন ইউং এর হাসবেন্ড আঘাত করে এবং সে মাটিতে লুটিয়ে পরে।এরপর সে বেজবেন্ট থেকে বেরিয়ে এসে একটি বড় ছুড়ি নিয়ে পার্টির মাঝে চলে যায়। সেখানে গিয়ে সে কি জং কে ছুরিকাঘাত করে।পার্টির মধ্যে হুলস্থুল লেগে যায়।সবাই দৌড়ে চলে যায়।এক পর্যায়ে মিস্টার কিম মিস্টার পার্ক কে ছুরিকাঘাত করে মেরে ফেলে।এদিকে কি হুক মাথায় আঘাত পাওয়াতে কোমায় চলে যায়।১ মাস পর কি হুক ও তার মা কে আদালতে তোলা হলে তাদেরকে শাস্তি দেওয়া হয়। ওই ঘটনার পর মিস্টার কিম কে আর খুজে পাওয়া যায় না।
লোভ, প্রতারণা ও মানবিকতার সংঘাত:
লোভ ও প্রতারণার ফলে কিভাবে পরিবারগুলোর জীবন দুর্বিষহ হয়ে পরে তা ফুটে উঠেছে এই সিনেমাটিতে।লোভে পরে মানুষ কতটা নিচে নামতে পারে তারই চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।একটি ধনী ও গরিব পরিবারে জীবন যাপনের গল্প দেখানো হয়েছে।যেখানে ধনী পরিবার সাচ্ছন্দ্যে জীবন যাপন করতে পারলেও গরিব পরিবার তিন বেলা ঠিক মতো খেতে পর্যন্ত পারতো না।একে মানবিকতার সংঘাত বলা যায়। সিনেমাটি আমাদের কে শিক্ষা দেয় লোভ ও প্রতারণার ফল কি হতে পারে।একই সাথে ধনী ও গরিবের বৈষম্য দূরীকরণের ম্যাসেজ টিও দেয়া হয়েছে সিনেমাটির মাধ্যমে।
এরকম আরো ব্লগ পরতে, ক্লিক করুন
লেখক,
পিয়াস মাহমুদ
ইন্টার্ন,
কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট
YSSE