১) আপনার সম্পর্কে কিছু বলুন।(নাম, পড়াশোনা, বর্তমানে কী করছেন,আপনার বেড়ে ওঠা ইত্যাদি)

আমি মোঃ আলমগীর হোসেন, বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত রয়েছি। বর্তমানে পড়ালেখার পাশাপাশি নির্মল বাংলাদেশ পরিচালনা বইয়ের তত্ত্বাবধানে কাজ করছি আমার শিশুকাল কেটেছে গ্রামে। তবে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখা সবই ঢাকায়। 

 

২) আপনার প্রতিষ্ঠান” নির্মল বাংলাদেশ “সম্পর্কে কিছু বলুন।

নির্মল বাংলাদেশ একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান, যেটি ২০১৭ সাল থেকে কাজ করে আসছে। তবে ২০২২ সালে আমরা বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদন পেয়েছি।‌ সরকারি অনুমোদনের মাধ্যমে আমাদের কাজের গতি অনেক বেড়ে গেছে এবং আমাদের কাজের বিস্তৃতি দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টাটা বেগবান হয়েছে।

 

৩)  শুরু কিভাবে হয়েছিল নির্মল বাংলাদেশ এর এবং কবে? নির্মল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পিছে মূল কারণ কি ছিল ?

শুরুটা বন্ধুদের নিয়েই হয়েছিল। কলেজ জীবনের শেষে কলেজের কয়েকজন বন্ধুকে আমার পরিকল্পনার কথা জানালাম। মূলত আমার সবথেকে কাছের বন্ধু দিদারুল ইসলাম বিজয়ই  সব থেকে বেশি আমাকে সহযোগিতা করেছিল। তার সহযোগিতা নিয়েই আমাদের প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু। ২০১৭ সালের প্রথম দিকেই আমাদের আলোচনা শুরু এবং ফাইনালি ২০১৭সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর অফিসিয়ালি আমাদের যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাচমেট এবং জুনিয়ররা ও ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হতে আরম্ভ করে। আর এভাবেই নির্মল বাংলাদেশ আজকের অবস্থানে এসছে।

 

৪) অনুপ্রেরণা কারা বা কী ছিল?

আমার অনুপ্রেরণা বলতে যে ঘটনাটি আমাকে নির্মল বাংলাদেশ গঠনে উদ্বুদ্ধ করেছিল তার মধ্যে অন্যতম একটি ঘটনা ছিল ২০১৬ সালের বন্যা এবং ২০১৭ সালের রোহিঙ্গা মানবিক সংকট। উক্ত দুই ঘটনায় বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় এবং ত্রাণ কার্যক্রমে নজিরবিহীন অব্যবস্থাপনার সাক্ষী হয়েছিলাম। তখনই বন্ধুরা মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম দেশকে এমনভাবে তৈরি করতে চাই যেখানে ত্রাণ কার্যক্রমের আর দরকারই হবে না। সাস্টেনেইবল ডেভেলপমেন্ট (টেকসই উন্নয়ন) এবং ম্যানেজমেন্ট (ব্যবস্থাপনা) এর লক্ষ্য নিয়েই আমরা নির্মল বাংলাদেশ গঠন করার চিন্তা করি। আমরা এমন একটি প্লাটফর্ম তৈরি করার স্বপ্ন দেখেছিলাম যেখান থেকে এমন সব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে যার ফলে বাংলাদেশের নতুন উদ্বাস্ত তৈরি হবে না।

 

৫) আপনার এই সফলতার পেছনে প্রতিবন্ধকতা কি ছিল এবং কীভাবে সেগুলো ওভারকাম করেছিলেন?

আমি নিজেকে এখনো সফল মনে করি না। যদিও সফলতার কোন সীমা বা সংজ্ঞা নেই এবং সফলতার সংজ্ঞা ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি ভিন্ন হয়ে থাকে। আমার মনে হয় আমরা সফলতার দিকে ধাবমান এবং আরো কিছুটা সময় প্রয়োজন, সফলতার বিষয়ে কথা বলার মত এখনো কিছু হয়নি। এখন পর্যন্ত আমাদেরকে যে সকল প্রতিকূলতা অতিক্রম করতে হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম কয়েকটি হলো 

  • সাংগঠনিক সক্ষমতা অর্জন 
  • ফান্ড ম্যানেজমেন্ট

 

৬) আপনার সফলতার পেছনে কাদের সাপোর্ট এর কথা আপনি উল্লেখ করতে চান?

সবচেয়ে বেশি সাপোর্ট পেয়েছি আমার খুব ক্লোজ কয়েকজন বন্ধু থেকে এবং আমার সিনিয়র বড় ভাই দের থেকে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকমন্ডলী ও পরিবার থেকে অনেক বেশি সাপোর্ট পেয়েছিলাম বলেই আমাদের প্রতিষ্ঠান এই পর্যন্ত আসতে পেরেছে। তবে কয়েকজনের নাম না বললেই নয় তার মধ্যে অন্যতম হলো আমার বাল্যবন্ধু দিদারুল ইসলাম বিজয় এবং আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু শেখ ফাহিম ফয়সাল সৌরভ। এছাড়াও আমার বড় ভাই কাজী সেলিম, শফিউল আলম, মোঃ মোস্তাক রহমান; উনাদের থেকে নির্মল আর্থিক সহযোগিতা ও পরামর্শ পেয়ে অনেক উপকৃত হয়েছে। আমাদের সকল প্রয়োজনে উনারা সবসময় আমাদের পাশে ছিলেন। এছাড়াও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেয়েটাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় ডীন জিয়াউদ্দিন আলমগীর স্যার, ডঃ মোস্তাফিজুর রহমান স্যার,  এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডঃ মোঃ রুকনুজ্জামান স্যার উনারা অসম্ভব রকমের সহযোগিতা আমাদের সব সময় করে আসছেন। আমাকে উনারা ব্যক্তিগতভাবে যতটা পছন্দ করেন ঠিক সেরকমই আমাদের প্রতিষ্ঠানটাকে উনারা ভালোবাসেন এবং পছন্দ করেন । উনারা বিভিন্ন সময়ে আমাদেরকে পরামর্শ ও আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে আসছে।

 

৭) কোন জিনিস আপনার প্রতিষ্ঠান কে অন্য সকল প্রতিষ্ঠান থেকে আলাদা করে বলে আপনার মনে হয়।

 

আমার মনে হয় নির্মল বাংলাদেশ অন্য সকল প্রতিষ্ঠান থেকে একটি দিক থেকে আলাদা সেটি হল নির্মল বাংলাদেশ সম্পূর্ণ ভাবে শিক্ষার্থীদের দ্বারাই পরিচালিত এবং এই প্রতিষ্ঠানটি একদম টপ টু বটম সব ক্ষেত্রেই শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে আসছে। আরেকটি দিক দিয়ে আমরা অন্য সবার থেকে আলাদা, (আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি) নির্মল বাংলাদেশি একমাত্র প্রতিষ্ঠান যেটি বাংলাদেশের সমুদ্র শিক্ষা ও সমুদ্র সম্পদ ব্যবস্থাপনায় প্রথম প্রয়োগিক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

 

৮)  কোন জিনিসটাকে আপনি বেশি গুরুত্ব দেন? কিভাবে পড়াশোনা পাশাপাশি প্রতিষ্ঠান এর কাজগুলো কে সামলান ?

সময়ানুবর্তিতা এবং প্রফেশনালিজম; এই দুইটা জিনিসকে আমি সবসময় গুরুত্ব দিয়ে থাকি। আরেকটি বিষয় হলো কথা দিয়ে কথা রাখাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, আমাদের মত (নির্মল বাংলাদেশের মতো) প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ক্ষেত্রে। এছাড়া পড়াশোনা এবং প্রাতিষ্ঠানিক কাজ সবসময়ই একসাথেই করতে হয়েছে, তাই সবসময় আমি প্রায়োরিটি লিস্ট তৈরি করতাম এবং সেই প্রায়োরিটি লিস্ট ফলো করি কাজগুলা করার চেষ্টা করতাম। আমার মনে হয় এই বিষয়গুলোই আমাকে সব সময় অন্য সবার থেকে আলাদা করেছে।

 

৯) আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো উচ্চতর ডিগ্রী নিয়ে নিজের একটা অবস্থান তৈরি করা। এর পাশাপাশি নির্মল বাংলাদেশের মাধ্যমে সমাজের এবং দেশের পিছেয়ে পড়া সেক্টরে নিজের নেতৃত্বের গুণাবলীর মাধ্যমে এমন কোন ইম্প্যাক্ট তৈরি করা যার মাধ্যমে দেশ ও জাতীয় উপকৃত হবে। এছাড়া নিজেকে ফোর্বস থার্টিতে দেখতে পারার একটা ইচ্ছা রয়েছে। আর প্রাতিষ্ঠানিক দিক থেকে চিন্তা করলে আমি নির্মল বাংলাদেশকে অনেক বড় একটা প্রতিষ্ঠান রূপে দেখতে চাই, যে প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের কোটি মানুষের হৃদয়ের স্পন্দন হবে এবং বিশ্বাসের একটি জায়গার নাম হবে নির্মল বাংলাদেশ। সেভাবেই নির্মল বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।

 

১০) বর্তামানে যারা শিক্ষার্থী তাদের কে কি পরামর্শ দিতে চান?

আসলে নতুন করে বলার কিছু নাই এই বিষয়ে অনেক গুণীজন অনেক কথা বলেছেন। আমিও তাদের পরামর্শ গুলোই মেনে চলার চেষ্টা করি। আমার মনে হয় শিক্ষার্থীদের সেটাই করা উচিত, যে কাজটি করতে তারা সব চেয়ে বেশী কমফোর্ট ফিল করে। শিক্ষার্থীদের সেটাই করা উচিত যে কাজে তার সবচেয়ে আগ্রহ বেশি। তবে একটি কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে, কোন কাজ শুরু করার পর সেই কাজটি শেষ না করে, থেমে না যাওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোন সময় কোন বাধাঁ বা প্রতিবন্ধকতার কারনে যদি নিজের স্পৃহা বা মোটিভেশন কমে যায়, তবুও সে কাজটি বন্ধ না করে চালিয়ে যাওয়া উচিত। কাজের প্রতি একাগ্রতা ও চেষ্টাই আমার মনে হয় সফলতার মূল চাবিকাঠি।

To read more blogs #click here.

Writer 

Atika Afia Broty 

Intern, Content Writing Department 

YSSE.