ঘরে কিংবা বাইরে কাজ আমাদের নিত্য সঙ্গী, জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত, এক সময় সকল কোলাহল থেমে গেলেও থামেনা কেবল মানুষের বিশাল কর্মযজ্ঞ। কাজের মাধ্যমে সভ্যতার পাতা উল্টেছে, পাল্টেছে গতিপথ। পৃথিবীতে কাজ পাগল মানুষ যেমন আছেন তেমনি কিছু মানুষ আছেন যারা কাজ দেখলেই ভয়ে পালান। প্রায়ই দেখা যায় এমন কিছু মানুষ যারা একটু খাটা – খাটনি করলেই ক্ষুধা, তৃষ্ণা, ক্লান্তিতে ঘেমে নেয়ে একাকার। কাজের মধ্যে একঘেয়েমি আসবেই এটাই স্বাভাবিক। তাই বলে সময়ে কাজ সময়ে না করে ফেলে রাখলে সময় ও শক্তি দুটোই নষ্ট হয় উল্টো কাজের চাপ বাড়ে। এক্ষেত্রে চমৎকার কিছু উপায় অবলম্বন করলে কঠিন ও নীরস কাজ অল্পতেই সেরে ফেলা যায়।
চলুন দেখে নেয়া যাক ৬টি অসাধারণ উপায়।
১) প্রথমত পরিকল্পনা তৈরি করাঃ
ছোট কিংবা বড়, সহজ অথবা কঠিন সকল কাজের জন্যই চাই একটি সঠিক পরিকল্পনা। যা অনেক অগোছালো কাজকে একটি ছকে আবদ্ধ করবে। কোন ব্যাপারে হাত লাগানো পূর্বে সে বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্ত ছক বা তালিকা আপনার ব্যস্ততম সময়ে কাজের গতি আনবে। সেইসাথে নির্ধারিত সময়ের আগেই আপনি কাজটি সম্পন্ন করে ফেলতে পারবেন। কি? বিশ্বাস হচ্ছে না? একবার চেষ্টা করেই দেখুন না।
২) দীর্ঘক্ষণ একটানা কাজ আর নয় ঃ
আমাদের ভাবনাটা সব সময় বোধহয় এমন – আশে পাশে, উপরে নিচে না তাকিয়ে একটানা কাজ করলেই বুঝি লক্ষ্য পূরণ সম্ভব। কিন্তু না! দীর্ঘসময় অনবরত কাজ মানুষের সৃজনশীলতা ও একাগ্রতা দুটোই নষ্ট করে। এক নাগাড়ে বিরতিহীনভাবে শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রমে শরীর ডিহাইড্রেট হয়ে পরে। ফলে মানুষ জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে পারে। তাছাড়া, শরীরে ফ্যাটি টক্সিন নামে এক প্রকার পদার্থ তৈরি হয় যা রক্তের মাধ্যমে সমস্ত দেহে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে শরীর এবং মস্তিষ্কে ক্লান্তিভাব আসে। তাই কাজের মধ্যে হালকা বিরতি নেয়া প্রয়োজন।
৩) ভারসাম্য বজায় রাখুন ঃ
জীবনে সকল ক্ষেত্রে যেমন ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি তেমনি কাজের ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম নয়। রোজ রোজ একই কাজ একই নিয়মে না করে নতুনত্ব আনা। হতে পারে নতুন কিছু যোগ করা, কিছু বিরক্তিকর জিনিস বা অভ্যাস ত্যাগ করা। এই যেমন কঠিন বিষয়গুলো আগে শুরু না করে সহজ বিষয়গুলো দিয়ে কাজ শুরু করা। অফিসে নিজের ডেস্ক পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা, পর্যাপ্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা করা,দরকারি কাগজ পত্র যথাস্থানে গুছিয়ে রাখা, অকারণে মোবাইল ফোনে কথা না বলা,ধূমপানের জন্য অফিসকক্ষ ব্যবহার না করা, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইস ও কম্পিউটার সফটওয়্যার আপগ্রেড রাখা ইত্যাদি আপনার কাজের গতিশীলতা বৃদ্ধি করবে।
৪) কাজের মাঝখানে চা বা কফি পান
দৈনন্দিন কাজে একঘেয়েমি ভাব দূর করতে কাজের মাঝখানে এক কাপ গরম চা বা কফি সাথে স্ন্যাকস আপনাকে দিবে বাড়তি সতেজতা। দূর করবে ক্লান্তি। তাছাড়া অত্যধিক গরমে বিশুদ্ধ পানি,ফলের জুস অথবা শরবত শরীরের পানি ঘাটতি পূরণে যেমন সহায়তা করবে, তেমনি জোগান দিবে বাড়তি শক্তি।
৫) শুনতে পারেন পছন্দের গান ঃ
অবসর সময় কিংবা কাজের সময় গান শোনা অনেকেই পছন্দ করেন।পছন্দসই কোন গান বাজিয়ে ঘরের কাজে নেমে পড়ুন। এটি এক দিকে যেমন কাজের চাপ কমিয়ে গতি বাড়াবে অন্যদিকে হাতের কাজ চটজলদি ঘুছিয়ে নিতে দারুণ কাজে দেবে।
৬) করতে পারেন হালকা ব্যায়াম ঃ
অনেক সময় অতিরিক্ত কাজের চাপে হাত, পা, পিঠ,কোমর ব্যথা হয়ে যায়। শরীরে ক্লান্তি অনুভব হয়, অলসতার দরুন তন্দ্রা ভাব চলে আসে। এ অবস্থায় হালকা ব্যায়াম শরীরের পেশিগুলোকে সচল করে, রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করে।
এছাড়াও দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটার বা ল্যাপটপে কাজ করার পর চোখের ক্লান্তি ভাব দূর করতে শর্ট নেপ নিতে পারেন। শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি দূর করতে জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে পারেন। অতঃপর,মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে এ্যারোবিক, পাজল বা ওয়ার্ড গেমিং এর বিকল্প নেই।
পরিশেষে বলা যায়, যে কোন কঠিন কাজ বিরক্তিকর মনে হলেও তা উপরিউক্ত উপায়ে খুব সহজেই করে ফেলা যাবে। এতে করে কাজের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে এবং বাড়তি চাপ ও টেনশন ঝেড়ে ফেলতে সাহায্য করবে।
আরও ব্লগ পরতে এখানে ক্লিক করুন
Writer
Baitul Hikma
Intern, Content writing Department.
YSSE