কংক্রিটের এই শহরে সবুজ সমারোহ বৃক্ষরাজির দেখা পাওয়া ভার। ক্লান্ত শরীর ও মন যেনো দিনশেষে একটু সবুজের উপর চোখ রাখতে চায় বা একটু ছোঁয়া পেতে চায়। বৃক্ষ প্রেমিকরা তাই ঘরের মাঝেই নানা ধরনের পদ্ধতি ও পরিকল্পনা অবলম্বন করে গাছ রোপন করতে শুরু করেছে। বর্তমানে এই ইনডোর প্ল্যান্ট খুবই জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। বারান্দায় বা রুমের ভেতরে অল্প জায়গায় কম পরিশ্রমেই এসব গাছের যত্ন নেওয়া যায়। মানি প্ল্যান্ট, ক্যাকটাস,কুমির ফার্ন,লাল আ্যাগলোনিমা, ঘৃতকুমারী ইত্যাদির মতো আরো অনেক ইনডোর প্ল্যান্ট যা আপনার ঘরকে করে তুলবে আরো সতেজ ও প্রাণবন্ত। আপনার যদি ইচ্ছা থাকে তাহলে ছোট জায়গার মাঝেই এসব গাছকে বড় করতে পারবেন। ইনডোর প্ল্যান্টের সঠিক যত্নের অভাবে অনেক সময় গাছের ক্ষতি হয় এমনকি গাছ মারাও যেতে পারে। নিচে ইনডোর প্ল্যান্টের যত্ন সম্পর্কে কিছু টিপস দেওয়া হলো :
মানি প্ল্যান্ট
মোটামুটি অনেকের বাসায় মানি প্ল্যান্ট দেখতে পাওয়া যায়।এটি লাকি প্ল্যান্ট হিসেবেও পরিচিত। টেবিলে, কর্ণারে বা বারান্দাতে খুব সুন্দর মানিয়ে যায়। মানি প্ল্যান্ট পানি ও মাটি উভয়ভাবেই রাখা যায়।স্বল্প আলোতে বা দুই তিনদিন পরপর রোদে রাখলে তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি পায়। তবে পানিতে রাখলে অবশ্যই পানি পরিবর্তন করতে হবে সপ্তাহে অন্তত দুইবার।
স্নেক প্ল্যান্ট
পাতার আকৃতি অনেকটা সাপের মতো বলেই এর নাম হয়েছে স্নেক প্ল্যান্ট। সামান্য পানি দিয়ে এবং অল্প আলোর কাছাকাছি রাখলেই বেড়ে ওঠে। পাতায় ধুলো বালি জমলে ভেজা নরম কাপড় বা টিস্যু দিয়ে মুছে দিতে হবে। বৃদ্ধ পাতা ছেটে ফেলতে হবে।
ঘৃতকুমারী
এটি স্বাস্থ্যের জন্য যেমন উপকারী তেমনই রুপচর্চার ক্ষেত্রেও বেশ কার্যকর। স্বল্প আলোতে কম পানি দেওয়ার মাধ্যমেই বেড়ে উঠে এরা। তীব্র আলোতে রাখার কারণে অনেক সময় পাতা হলুদ বা বাদামী রং ধারণ করতে পারে। এক্ষেত্রে তীব্র রোদ পরিহার করাই উওম।
লাকি ব্যাম্বো
চাইনিজ বাঁশের অপর নাম। দেখতে দৃষ্টিনন্দন ও ঘরের শোভাবর্ধক। এই গাছ খুব কম বৃদ্ধি পায়। গাছের প্রধান শত্রু এ্যালগি। নিয়মিত পরিচর্চা ও এ্যালগি সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচাতে পানি পরিবর্তন করে গাছ রাখা পাত্র পরিষ্কার করতে হবে।
কয়েন প্ল্যান্ট
পর্যাপ্ত পানি ও উজ্জ্বল আলোয় থাকতে পছন্দ করে কয়েন প্ল্যান্ট। বিশেষত পানি ছাড়া যেনো একমুহূর্তও চলে না কয়েন প্ল্যান্টের। টবে সবসময় পানি যেনো থাকে সেদিকে নজর রাখবেন এবং প্রতিদিন পানি দেওয়ার চেষ্টা করবেন।
স্পাইডার প্ল্যান্ট
এর উপকারিতা অনেক। রাতে অক্সিজেন সরবরাহ করে আপনার শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধ করবে। স্পাইডার প্ল্যান্ট মাটি ও পানি উভয়ই মাধ্যমেই বেড়ে উঠতে পারে সঠিক পরিচর্চার মাধ্যমে। পানির ক্ষেত্রে কয়েকদিন পরপর পানি পরিবর্তন করতে হবে। এছাড়া মাটিতে রোপন করলে দুই একদিন পরপর পানি দিয়ে স্বল্প আলোতে রাখলে এগুলোর বৃদ্ধি লক্ষ্য করতে পারবেন।
ক্যাকটাস
মোটামুটি আমরা সকলেই ক্যাকটাস চিনি৷ ঘরের শোভাবর্ধনে রুচিশীল মানুষ ক্যাকটাসকে ইনডোর প্ল্যান্ট হিসেবে রাখে। পৃথিবীতে বহু প্রজাতির ক্যাকটাস রয়েছে। এগুলো অনেকসময় বিভিন্ন রং এর সুন্দর সুন্দর ফুল দেয় যা দেখতে অনেক সুন্দর লাগে এবং আপনার ঘরকে করে তুলে আরো নান্দনিক। ক্যাকটাসের মিডিয়াম অন্যান্য ইনডোর প্ল্যান্টের মতো হয়। এগুলো সাধারণত বালি,পাথর মিশ্রিত মিডিয়ামে রাখতে হয়। স্বল্প আলো আসে এরকম জায়গায় ক্যাকটাস রাখতে পারলে ভালো হয় অথবা সপ্তাহে দুই একদিন রোদে দিলেও হয়। পানি খুব কম পরিমানেই লাগে। খেয়াল রাখতে হবে যেনো কোন ফাঙ্গাস আক্রমণ না করে।
সুইচ চিজ প্ল্যান্ট
মূলত এই প্ল্যান্টের পাতার জন্যই আকর্ষণীয়। পাতা দেখতে অনেকটা লাভ আকৃতির। সবুজ এরকম সুন্দর প্ল্যান্ট আপনার ঘরের টেবিলের সাইডে বা কর্ণারে খুব ভালোভাবেই মানিয়ে যাবে৷ প্ল্যান্টগুলো যত্নের ক্ষেত্রে মাটির মাধ্যম ভালো গুণাগুণ সম্পন্ন হতে হবে সাথে হালকা আলো আসে এরকম জায়গায় রাখতে হবে। পানি খুব বেশি দিতে হয় না। পাতা বেশ কয়েকদিন পর পর কাপড় বা টিস্যু দিয়ে মোছে দিলে সালোকসংশ্লেষণ সঠিকভাবে হবে এতে করে আপনার গাছের বৃদ্ধিও নিশ্চিত হবে।
পিচ লিলি
যারা বৃক্ষপ্রেমিক তারা জানেন একটি গাছে ফুল বা ফল ফুটলে কতটা আনন্দ অনুভূতি হয়। পিচ লিলি প্ল্যান্টে সাদা রং এর অনেক সুন্দর ফুল ফুটে যা ঘরের সৌন্দর্যবর্ধনে আলাদা মাত্রা যোগ করে। এই প্ল্যান্ট এঁটেল মাটিতে হয় না। দোআঁশ মাটি উপযোগী। এছাড়াও পিচ লিলির একটি চারা থেকে অনেকগুলো চারা হয় ফলে টবে থেকে স্থানান্তর করতে হয়। স্বল্প আলোতেই বেড়ে উঠে। একদম অন্ধকার জায়গা হলে সপ্তাহে তিন চার দিন বারান্দা বা যেখানে রোদ আসে সে জায়গায় রাখতে পারলে ভালো হয়। এছাড়াও ফুল শুকিয়ে গেলে ফুলের কান্ড কেটে দিতে হবে।
নান্দনিকতা বা শখ বা ভালোবাসার জায়গা থেকে আমরা ইনডোর প্ল্যান্ট ঘরে রাখি৷ ছোট ছোট টুকটাক বিষয় খেয়াল রেখে প্ল্যান্টের পরিচর্চা করলে একদিকে যেমন বৃদ্ধি পাবে প্ল্যান্ট অপর দিকে আবার আপনার ঘরকেও করে তুলবে নান্দনিক একই সাথে আপনার ঘরের পরিবেশের সাথে দূষিত বায়ু শোধনেরও কাজ করবে এই প্ল্যান্টগুলো।
আরো ব্লগ পেতে এখানে ক্লিক করুন
Mst.Luvna Akter
Intern, Content Writing Department, YSSE