একজন নারীর কথা বলতেই অনেকে ভেবে বসে ভীতু, নির্ভরশীল। আজকের যুগেও নারীদের সম্পর্কে এমন ভাবে না এরকম মানুষ হাতে গোনা কয়েকজন। নারীরা এরকম সহজ সরল কিংবা ভীতু হয়েই থাকেন তবে যখন একজন নারী মা হন তখন তার সন্তানের জন্য সে পৃথিবীর সাহসী নারীদের মধ্যে একজন হয়ে উঠেন। নিজের সন্তানকে পৃথিবীর সমস্ত বিপদ কিংবা খারাপ প্ররোচনা থেকে দূরে রাখতে যা যা দরকার সব করে থাকেন।

নারীদের জীবন বা তাদের বিভিন্ন সংগ্রাম নিয়ে বলিউড এই পর্যন্ত অনেক মুভি বানিয়েছে। ২০২১ সালে নির্মিত মাতৃত্ব নিয়ে একটি মুভি অনেক সারা ফেলেছিলো আর সেটি ছিলো মিমি‘। তবে আমরা আজকে মিমি নিয়ে নয় বরং আরেকটি বলিউড মুভি নিয়ে কথা বলবো সেটি হচ্ছে ২০২৩ সালে নির্মিত রানী মুখার্জী অভিনীত মিসেস চ্যাটার্জী ভার্সেস নরওয়ে’। এই মুভির পরিচালনায় ছিলেন অসীমা চিব্বর।

একজন মায়ের সন্তান দের জন্যে লড়াই নিয়ে এই অসাধারণ মুভিটি সম্প্রতি নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছে।

কাহিনী পর্যালোচনা:

মুভিটির শুরু দৃশ্যে দেখানো হয় নরওয়েতে দুইজন মহিলা একটি বাসা থেকে ৫ মাস বয়সী বাচ্চাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাচ্ছে এবং বাচ্চার মা চিৎকার করতে করতে পিছনে দৌড়াচ্ছে। ঘটনা চলে যায় ২৪ ঘন্টা আগে যেখানে দেখানো হয় অনিরুদ্ধ এবং দেবীকা দম্পতির বাসার চিত্র। তাদের একজন ছেলে এবং ৫ মাসের একটা মেয়ে রয়েছে। এই দম্পতি ভারত থেকে নরওয়ে আসে আরেকটু ভালো ভাবে জীবন কাটাতে। দেবীকা একজন সাধারন মহিলা যার জীবন জুড়ে তার সংসার আর সন্তান। সারাদিন সন্তানদের নিয়েই তার জীবন সুন্দরভাবে কাটছিলো।

নরওয়েতে বাচ্চাদের বাবা-মা বাচ্চাদের ঠিক ভাবে যত্ন করতে পারছে কিনা এই ব্যাপারে মনিটরিং করার জন্যে  দুইজন মহিলা কে পাঠান তাদের বাসায় এবং তারা সেগুলো নোট করেন। পরবর্তী দিন হেড কোয়ার্টার থেকে একজন মহিলা আসলে তারা দেবিকা এবং অনিরুদ্ধ এর অগোচরে তাদের মেয়ে কে নিয়ে চলে যায় এবং তাদের ছেলেকেও নার্সারি স্কুল থেকে তুলে নিয়ে যায়। পরে জানা যায়,এই দম্পতি সঠিক ভাবে বাচ্চাদের যত্ন নিতে না পারায় তাদের বাচ্চাদের তুলে আনা হয়েছে এবং তারা এখন হোস্টেলে বেড়ে উঠবে যেটি দেবীকা কোনোভাবেই মেনে নেয় না। এরপর তাদের বিরুদ্ধে ইন্ডিয়ান আইনজীবী প্রাথমিক ভাবে মামলা জিতে নিলেও পরে সেটি নানা ভাবে অসম্ভব হয়ে যায় এবং সন্তানদের কে দেবীকা এবং অনিরুদ্ধ থেকে দূরে রাখা হয়।

এভাবে এক পর্যায়ে দেবীকা সহ্য করতে না পেরে বাচ্চাদের নিয়ে পালাতে চেষ্টা করলেও ধরা পড়ে যায় এবং অবস্থা আরো খারাপ হতে থাকে। এভাবে ৪-৫ মাস কেটে যায়।

একদিন খবরে দেবীকা দেখতে পায় যে ভারত সরকার থেকে কোনো এক প্রতিনিধি নরওয়েতে নিজেদের মধ্যে কিছু চুক্তির জন্য গিয়েছেন এবং দেবীকা সেখানে উপস্থিত হয়ে সবার সামনে তার পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে। এক পর্যায়ে নানা ঘটনার প্রবাহের মধ্য দিয়ে দেবীকার বাচ্চাদের তাদের চাচার কাছে চুক্তি অনুযায়ী তুলে দেয়া হয় তবে এখানে দেবীকাকে তার স্বামী ধোকা দিয়ে দেশে পাঠিয়ে দেয়। মূলত দেবীকার স্বামী অনিরুদ্ধ চাচ্ছিলো না তার সিটিজেনশিপে কোনো সমস্যা হোক। দেবীকা কোলকাতায় ফেরার পরে বুঝতে পারে যে তাকে প্রতারিত করা হয়েছে এবং সে এখন কোলকাতায় নরওয়ের বিরুদ্ধে লড়তে শুরু করে তার সন্তানদের কাছে পাওয়ার জন্যে। এবং নানা ঘটনাক্রমে দীর্ঘ দেড় বছর পরে দেবীকা তার বাচ্চাদের আইনগত ভাবে কাছে পায় এবং তাদের নিয়ে সুখে জীবন অতিক্রম করতে থাকে।

এই মুভিটির কাহিনী নেয়া হয়েছিলো একটি সত্যি ঘটনা ক্রমে। বাস্তবে সাগরিকা নামে একজন মহিলার সাথে এইরকম ঘটনা হয়েছিলো। এবং ভারত সরকারের সাহায্যে আজকে সে তার সন্তানদের সাথে সুন্দরভাবে জীবন কাটাচ্ছে। মুভি হোক বা বাস্তব সব জায়গায় ই সব মায়েরা তাদের সন্তানদের জন্য এভাবেই লড়তে থাকে।

‘পৃথিবীর সব সন্তান যেন থাকে মায়ের কোল জুড়ে’ এটাই আমাদের প্রত্যাশা। এরকম আরো মুভি রিভিউ পড়তে আমাদের সাথেই থাকুন।

 

আরও ব্লগ পড়তে ক্লিক করুন

Writer:-

Marjahan Akter

Intern at YSSE Content Writing Department