ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে যাদের ধারণা আছে তারা নিশ্চয়ই ফাইবার এবং আপওয়ার্ক এর নাম শুনে থাকবেন। বর্তমান সময়ের বহুল পরিচিত দু’টি মার্কেটপ্লেস হচ্ছে ফাইবার এবং আপওয়ার্ক। মার্কেটপ্লেস নামক এই ফ্রিল্যান্সিং সাইট গুলোর কল্যানে প্রতিদিন লাখ লাখ যুবসমাজ নিজেদের পরিচয় গড়ে তুলতে পারছে এবং নিজেরা স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে। যার যার নিজের পছন্দ অনুয়ায়ী মার্কেটপ্লেস ব্যাবহার করে থাকে। কারো কাছে ফাইবার ভালো তো কারো কাছে আপওয়ার্ক। যারা নতুন ফ্রিল্যান্সিং জগতে এসেছে তারা অনেকসময়ই বুঝে উঠতে পারে না যে, ফাইবার নাকি আপওয়ার্ক কোনটি বেশী সুবিধাজনক। কোনটির মাধ্যমে সহজেই আয় করা যায়। নতুনবস্থায় কোনোভাবেই বোঝা যায় না যে কোনটি বেশী সুবিধাজনক। ধীরে ধীরে অভিজ্ঞতার মাধ্যমে মানুষ বুঝতে পারে যে কোনটি বেশী সুবিধাজনক। 

 

চলুন জেনে নেই ফাইবার এবং আপওয়ার্কের মধ্যে সূক্ষ্ম কিছু পার্থক্য:

 

ফাইবার ও আপওয়ার্ক যেভাবে কাজ করে:

 

ফাইবার এবং আপওয়ার্কের কার্যপদ্ধতির মধ্যে বেশ কিছু ভিন্নতা রয়েছে।ফাইবারের যেকোনো সেবাকে  গিগ বলে। ফ্রিল্যান্সাররা গিগ পোস্ট করে এবং ক্লায়েন্টরা সেখানে তাদের পছন্দনুযায়ী গিগ বেছে নেয়। অর্থাৎ, ফাইবারে ক্লায়েন্টরাই তাদের চাহিদার ভিত্তিতে ফ্রিল্যান্সার বেছে নেয়। তবে, বায়ার চাইলে ফাইবারে জব পোস্ট করতে পারেন এবং ফ্রিল্যান্সাররা অই জব পোস্টে বিড বা এপ্লাই করতে পারে। ফ্রিল্যান্সিং এর ভাষায়, ফাইবারে জব পোস্টে এপ্লাই করাকে বিড বলে।

 

আপওয়ার্কে ফ্রিল্যান্সারগণ তাদের প্রোফাইলে নিজেদের কাজ, অভিজ্ঞতা এসব তুলে ধরেন। ক্লায়েন্টরা সাধারণত যে কাজের জন্য তাদের ফ্রিল্যান্সার প্রয়োজন তার বিবরণ দিয়ে কাজের অফার পোস্ট করেন। ফ্রিল্যান্সাররা কাজের তালিকার সাথে নিজেদের অভিজ্ঞতা মিলিয়ে কাজের জন্য প্রোপোজাল পাঠায়। ক্লায়েন্টরা আগ্রহী ফ্রিল্যান্সারদের তালিকা থেকে ক্লায়েন্ট পছন্দ অনুযায়ী এক বা একাধিককে নিবার্চন করে চুক্তিবদ্ধ হন। যদি ইচ্ছা হয়, ক্লায়েন্টরাও একজন ফ্রিল্যান্সারের কাছে কাজের অফার পাঠাতে পারে। 

 

কমিশন/চার্জ :

 

আপওয়ার্কে যদি একজন ফ্রিল্যান্সার ৫০০ ডলার পর্যন্ত ইনকাম করে থাকে। তাহলে, আপওয়ার্ক অথোরিটি ২০% চার্জ কেটে নেয়। আর ৫০০ থেকে ২০০০ ডলার আয়ের ক্ষেত্রে ১০-১৫% চার্জ কেটে নেয়। আবার কেউ যদি ১০০০০ ডলার ইনকাম করতে পারে, তাহলে সেই থেকে ৫% চার্জ কাটে।

 

অন্যদিকে, ফাইবারে প্রতিবার আয়ের পর আপনার আয় থেকে প্রায় ২০% চার্জ কেটে নিবে। এইক্ষেত্রে, কেউ যদি ৫ ডলার আয় করে তার থেকে ১ডলার কেটে নিবে। যদি কেউ ১০০০ডলারও আয় করে তার থেকে একইভাবে ১০০ডলার কেটে নিবে।

 

ফাইবার ও আপওয়ার্কের মধ্যে কমিশন/চার্জ কেটে নেয়ার ক্ষেত্রে আপওয়ার্কই সবথেকে বেশী সুবিধা দিচ্ছে। ফাইবার সবসময় আপনার থেকে প্রায় ২০% চার্জ নিবে। আর আপওয়ার্কে আপনি যতবেশি কাজ করবেন আপনার থেকে তত কম কমিশন কেটে নেয়া হবে। আর এই ক্ষেত্রে আপওয়ার্ক ফাইবারের থেকে এগিয়ে।

 

কোথায় বেশি আয় করা যায়? 

 

ফাইবার এবং আপওয়ার্ক নিয়ে আরেকটি বড় প্রশ্ন হলো কোথায় বেশি আয় করা যায়। আয়ের বিষয়টি মূলত নির্ভর করে ফ্রিল্যান্সারদের দক্ষতার উপরে। একজন অভিজ্ঞ ফ্রিল্যান্সার সবসময় অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকে এবং আয়ও বেশী করে থাকে। তাই আপনার দক্ষতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। 

 

তবে, বেশিরভাগ সময় ফাইভারে বেশিরভাগ প্রোজেক্ট স্বল্পমেয়াদী কাজ। এখান থেকে নিয়মিত ক্লায়েন্ট পাওয়া কঠিন। যেহেতু এখানে আপনি গিগ তৈরি করে আপনার সেবাগুলো বিক্রি করছেন সেহেতু এখানে সেসব ক্লায়েন্টরা আসবে যাদের ছোট কাজ গুলো করার জন্য দক্ষ লোক প্রয়োজন। 

 

অপরদিকে, আপওয়ার্ক দীর্ঘমেয়াদি কাজের জন্য পরিচিত। ক্লায়েন্টরা নিয়মিত এখানে তাদের কাজের জন্য পোস্ট করে এবং কাজগুলি সাধারণত বড় হয়ে থাকে। এটিতে দেখা যায় একই প্রোজেক্টে দীর্ঘসময় ধরে অনেক লোক একসাথে কাজ করে। তাই আপনি এখানে দীর্ঘসময়ের জন্য কাজ করতে পারেন। তাছাড়া, বড় প্রোজেক্ট গুলো এখানে খুব সহজেই পাওয়া যায়। তাই আপনার অভিজ্ঞতা বা দক্ষতা থাকলে, আপনি এখানে ফাইবারের থেকে বেশী আয় করতে পারবেন।

 

আপওয়ার্ক ও ফাইবারের যে পার্থক্য :

 

আপওয়ার্ক ক্লায়েন্টরা তাদের পছন্দের কাজ পোস্ট করে এবং এবং ফ্রিল্যান্সারগণ সেই কাজের পোস্ট থেকে তাদের পছন্দনুয়ায়ী কাজগুলিতে বিড বা এপ্লাই করেন। 

 

তবে, ফাইবারের বিষয়টা সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখানে এক বা একাধিক নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে গিগ পাবলিস করা হয় এবং ক্লায়েন্টরা গিগ গুলি যাচাই-বাছাই করে অর্ডার করেন। গিগে সাধারণত কাজের ধরন, কাজের সময়, রেট ইত্যাদি উল্লেখ করে দেয়া হয়। 

 

পেমেন্ট যেভাবে নেয়া যায় :

 

ফাইবার এবং আপওয়ার্ক উভয় সাইট থেকেই পেওনিয়ার কার্ড দেয়া হয়। এই কার্ড দিয়ে আপনি অনলাইনে কেনাকাটাসহ নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী খরচ করতে পারবেন। এছাড়া ব্যাংক ট্রান্সফারও করা যায়। খুব সহজেই আপনি আপনার পেমেন্ট নিতে পারবেন এই মাধ্যম গুলির সাহায্যে।

 

স্কিল টেস্ট সুবিধা :

 

ফাইবারে স্কিল টেস্ট দেয়ার সুবিধা আছে। এই স্কিল টেস্ট গুলি দেয়ার মাধ্যমে ক্লায়েন্টরা আপনার দক্ষতা সম্পর্কে ধারণা পাবে। আপওয়ার্কে আগে স্কিল টেস্ট করার অপশন ছিলো কিন্তু বর্তমানে সেই অপশন সরিয়ে নেয়া হয়েছে। 

 

নতুনদের জন্য কোনটি ভালো হবে? 

 

বর্তমান সময়ে আপওয়ার্কে একাউন্ট খোলা এবং ভেরিফিকেশন পাওয়া কিছুটা সময়সাধ্য ব্যাপার। কিন্তু আপনি যদি কাজে দক্ষ হন, তবে আপনি আপওয়ার্কে দীর্ঘমেয়াদি কাজ পাবেন এবং এর মাধ্যমে আপনি ভালো এমাউন্ট অর্থ আয় করতে পারবেন। আপনি চাইলে দুই মার্কেটপ্লেসেই সমানভাবে কাজ চালিয়ে যেতে পারেন। 

 

পৃথকভাবে এই দুটি মার্কেটপ্লেসকেই সেরা বলা যেতে পারে। উভয় প্লাটফর্মের সুযোগ-সুবিধা এবং ফিচার ভিন্ন হবার কারণে তাদের কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়। আপনার কাজের ধরন অনুযায়ী আপনার জন্য কোন প্লাটফর্ম সেরা সেটা বেছে নিতে হবে আপনাকেই। যেখানে আপনি বেশি আয় করতে পারবেন সেখানেই আপনাকে সর্বাধিক সময় দিতে হবে। সর্বদা আপনার দক্ষতা উন্নয়নে সচেষ্ট থাকুন। এতে করে আপনি যেকোনো প্লাটফর্মে খুব সহজেই সফলতা অর্জন করতে পারবেন।

 

এরকম আরও ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন

Writer,

Anamika Ghosh Shreya

Intern,Content Writing Department

YSSE

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *